parbattanews

মায়ানমারের গণহত্যা নিয়ে পার্বত্যবাসী নিশ্চুপ কেন?

উহ্লাচিং মারমা

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্মগ্রহণের পর দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষা গ্রহণ করে আমি আজ একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্হার কর্মকর্তা। জীবনের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আমি সব সময়েই পাহাড়ের মানুষের জন্য স্বাধীনতা/স্বায়ত্বশাসনের দাবীতে আঞ্চলিক দলসমূহের আন্দোলন সংগ্রামকে প্রত্যক্ষ করেছি।

স্বাধীনতার পরপরই জুম্ম জনগনের নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার হাত ধরে আমাদের স্বায়ত্ত্বশাসনের স্বপ্ন শুরু হয়েছিল। বর্তমান সরকারের সাথে শান্তিচুক্তির পর আমরা এ দাবী বাস্তবায়নে আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্ত আমাদের সে দাবী আজো পূরণ হয়নি। আজও পাহাড় অশান্ত। বিভিন্ন দাবী আদায়ের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আমাদের স্হানীয় দলগুলো বহু দলে বিভক্ত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জীবন-মান উন্নয়নে সকল দলই একমত। সকলেই চায় পিছিয়ে পড়া পার্বত্য জনগোষ্ঠীর উন্নতি ও অগ্রগতি।

দীর্ঘ দিন আমাদের আঞ্চলিক দলগুলো পাহাড়ে সেনাবাহিনীর অবস্হানের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছে। স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবীতে পাহাড়ে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক দলগুলো সবসময়ই সরব। অথচ আমাদের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গা সম্প্রদায় জাতীয়তা ও জীবনযাপনের মৌলিক দাবী করার ফলে তাদের উপর যে নির্যাতন মায়ানমার সেনাবাহিনী চালিয়ে যাচ্ছে তার প্রতিবাদে পাহাড়ের কেউই কোন কথা বলেনি। বিষয়টি আমাকে অত্যন্ত ব্যাথিত করেছে।

বাংলাদেশ সরকার যেখানে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে, যেখানে সারা দেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষ তাদের জন্য সাহায্য নিয়ে গেছে সেখানে পাহাড়ের কোন দল, কোন সংগঠন রোহিঙ্গাদের জন্য কোন প্রকার সাহায্য নিয়ে আসেনি। উল্টো নেতৃস্হানীয় লোকজন রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিদ্রুপ করেছে, বলেছে তারা এই দেশের জন্য বোঝা। তাহলে কি আমরা আমাদের মূল নীতি/লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হলাম? যে পাহাড়ী নিপীড়িত জুম্ম জনগনের জন্য মানবেন্দ্র লারমাসহ অনেক নেতৃবৃন্দ জীবনদান করেছেন তারই আজ একটি নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য সামান্যতম সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দেয়নি, এমনকি তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে কোন কার্যক্রমও গ্রহণ করেনি। মায়ানমার সেনাবাহিনীর বীভৎস অত্যাচারের বিরুদ্ধে সমগ্র বিশ্ব প্রতিবাদমুখর হলেও আমাদের পাহাড়ী সংগঠনগুলো কোন প্রকার বিবৃতি প্রদান করেনি। ব্যাপারটি আমাদের জন্য লজ্জার।

আমাদের বৌদ্ধ ধর্ম হল শান্তি ও সাম্যের ধর্ম। সারা বিশ্বে শান্তির প্রতীক হিসাবে অহিংস বৌদ্ধ ধর্ম সমাদৃত। অথচ সেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বর্মী সেনাবাহিনী আর উগ্রপন্হীদের অত্যাচারে নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্টী আজ বিলুপ্তির পথে। আমাদের পার্বত্যাঞ্চলের অনেক ধর্মগুরু শান্তির স্বপক্ষে বরাবরই কথা বলেন অথচ পার্শ্ববর্তী দেশের এই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তাদের কোন প্রতিবাদই আজ চোখে পড়ে না। মায়ানমারের উগ্রপন্হীদের ছোবলে আজ সারা বিশ্বে বৌদ্ধ ধর্মের ভাবমূর্তি হুমকির সম্মুখীন।

জানিনা কবে আমাদের পাহাড়ী জনগণ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। আশাকরি অচিরেই পার্বত্যাঞ্চলের সকল দলসহ সচেতন জনসাধারণ রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসবে আর উগ্রপন্হা বন্ধে মায়ানমারের প্রতি আহবান জানাবে। আমি আশা করি অচিরেই এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শান্তিপূর্ণ উপায়ে তার নিজ বাসভূমে ফিরে যাবে। আর একইভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়েই পাহাড়ের সব সমস্যার সমাধান হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমি সেই সুদিনের অপেক্ষায় রইলাম।

 লেখক- বান্দরবান থেকে

Exit mobile version