মানিকছড়িতে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়ার চেষ্টায় ‘মা’য়ের জেল, যুবকের বিরুদ্ধে মামলা
মানিকছড়ি প্রতিনিধি:
মানিকছড়ি গিরি মৈত্রী ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার মেধাবী ছাত্রী সালমা আক্তারের মতামত উপেক্ষা করে একাধিকবার বিয়ের অয়োজন করেন ‘মা’ সুফিয়া বেগম! কিন্তু সালমার ইচ্ছা এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই সময় বিয়ের আয়োজন ভেস্তে গেলেও বুধবার (১ নভেম্বর) আবারও জোরপূর্বক সালমাকে তুলে নিয়ে কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে বিয়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন ‘মা’ সুফিয়া বেগম ও বর আবদুল করিম ওরফে বলি করিম! খবর পেয়ে প্রশাসন মেয়েকে উদ্ধার করে সেফহোমে প্রেরণ করেন এবং মা’কে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৭ দিনের জেল ঘোষণা করেন। অপরদিকে অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা রজু করেন ছাত্রী সালমা আক্তার।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তিনটহরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.১৯ পাওয়া সালমা এবার স্থানীয় কলেজের একাদশ শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী। তিনটহরীর মৃত ফজল হকের ৭ ছেলে-মেয়ের মধ্যে ৬ষ্ঠ। ২০১৫ সালে বাবার মৃত্যুর পর সংসারে অভাব-অনটন তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। নুন আনতে পান্তা ফুরায়! সবার ছোট বোন এ বছর জেএসসি পরীক্ষার্থী।
দরিদ্র পরিবারে এ অবস্থায় সম্প্রতি সালমার পড়ালেখা বন্ধ করে বিয়ের আয়োজন করেন মা সুফিয়া বেগম! কিন্তু মেধাবী সালমা তা মেনে নিতে পারেনি! ফলে সে বারবার বাল্যবিয়ে বন্ধের বিরুদ্ধে আইনগত সহায়তা চায় প্রশাসনের কাছে। সর্বশেষ গত ৭ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অভিভাবক ‘মা’ সুফিয়া বেগমের নিকট থেকে মুচলেখা নিয়ে বিয়ে বন্ধ করেন। কিন্তু তাতেও মেয়েকে বিয়ে দেয়ার ইচ্ছা থেকে সরে আসেনি সুফিয়া বেগম।
গত ৩১ অক্টোবর ফটিকছড়ির প্রভাবশালী (বিবাহিত) আবদুল করিম ওরফে বলি করিম কনের মায়ের সহযোগিতায় সালমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় চট্টগ্রাম। সালমা চট্টগ্রাম থেকে সু-কৌশলে বিষয়টি জানান মানিকছড়ি মহিলা বিষয়ক অফিসার মো. কামরুল আলমকে। ফলে ওই মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করলে দ্রুত পুলিশ পাঠিয়ে সালমাকে উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় সহযোগিতার জন্য সালমার মা সুফিয়া বেগমকে ২ নভেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৭ দিনের বিনাশ্রম জেল দেন ইউএনও মো. আহসান উদদীন মুরাদ।
এছাড়া ওই প্রভাবশালী বর মো. আবদুল করিম ওরফে বলি করিমের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা রজু করেন সালমা নিজে! অপর দিকে সালমার জীবনের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতায় তাকে চট্টগ্রামস্থ সেফহোমে প্রেরণ করেন উপজেলা সমাজসেবা অফিস।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আহসান উদ্দিন মুরাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কলেজ ছাত্রী সালমা পড়ালেখায় আগ্রহী হওয়ায় এবং তার মত উপক্ষো করে একাধিকবার বিয়ের আয়োজন করেন অভিভাবক সুফিয়া বেগম। এছাড়া সর্বশেষ সালমাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে বিয়ের আয়োজন করার অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ সালমাকে সেফহোমে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা পৌনে ৬টা) সালমা মানিকছড়ি থানায় উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত ছেলের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগে মামলা করার প্রস্তুতি চলছিল।