ভারী বর্ষণে আতঙ্ক উৎকন্ঠায় পাহাড়ের বাসিন্দারা

নিজস্ব প্রতিনিধি, রাঙামাটি:

ভারী বর্ষণের কারণে আতঙ্ক উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে পাহাড়ের বাসিন্দারা। কখন কি ঘটে, এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে পাহাড়ের বাসিন্দারা ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছে।

বৃষ্টিপাতের প্রথম ধাক্কাতে কাবু পুরো রাঙামাটি। কয়েকদিনের টানা বর্ষণের ফলে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট অচল হয়ে পড়েছে। জেলার কয়েকটি জায়গায় পাহাড় ধসের কারণে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন ছিলো কয়েক ঘন্টা। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত বাসিন্দারা রয়েছে আতঙ্কে উৎকন্ঠায়। কখন পাহাড় ধসে পড়ে।

এদিকে ঈদের বাকী আর মাত্র কয়েকদিন। ঈদ সামনে রেখে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো রমরমা ব্যবসা জমে উঠার মূহর্তে বৃষ্টির আঘাতে লন্ডভন্ড ব্যবসায়ীরা। বেকার সময় কাটাচ্ছে তারা। টানা বৃষ্টির কারণে সড়কের আশ্রয় নিয়ে গড়ে উঠা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাথায় বাজ পড়েছে।

খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার (১১ জুন) দুপুরে ভারী বর্ষণের ফলে জেলার সাপছড়ি এলাকার দেপ্প্যোছড়ি এলাকা, রূপনগর এলাকায় পাহাড় ধসে পড়ায় সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। পাহাড়ি ঢলের কারণে চট্টগ্রাম জেলার রাঙুনিয়া এলাকায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানা গেছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, টানা বর্ষণের কারণে জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস যৌথ উদ্যোগে কাজ করছে। প্রশাসন কয়েকদিন ধরে তৎপরতা চলাচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে লোকজনকে সড়িয়ে নিতে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খুঁলে দেওয়া হয়েছে। মাইকিং করে সড়ে যেতে বলা হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো বসবাসরত মানুষদের।

অন্যদিকে রোববার রাত থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একে এম মামুনুর রশিদ। এসময় তিনি পাহাড়ে পাদদেশে বসবাসরত মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাওয়ার নিদের্শ দেন। এসময় রাঙামাটি শহরের শিমুল তলী এলাকার ৬টি পরিবারের ১৬ জন মানুষ বাংলাদেশ টেলিভিশনের রাঙামাটি সেন্টারে ও রাঙাপানি এলাকার ৩টি পারিবারে ১০ জন মানুষ মোনঘর ভাবনাকেন্দ্র আশ্রয় নেয়।

আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার আশেপাশে নিরাপদস্থানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাবু তৈরি করা হচ্ছে। যাতে মানুষ সহজে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত তিন ধরে পর্যন্ত টানা বর্ষণে রাঙামাটিতে ১২৮টি স্থানে ছোট ছোট পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। উপরে পড়েছে গাছপালা। ভেঙ্গে গেছে বিভিন্ন বসতবাড়ি। এর মধ্যে ৫টি স্থানে সড়কে ফাটল দেখা দিয়েছে।

রাঙামাটি আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানানো হয়, টানা দু’দিনের বৃষ্টিতে রাঙামাটিতে ২৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

রাঙামাটি সড়ক জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এমদাদ হোসেন জানান, টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে গেছে। পাহাড় থেকে মাটি ধ্বসে পড়ছে। এছাড়া রাঙামাটি-চট্টগ্রাম-রাণীরহাট সড়কে ৩টি স্থান পানির নিচে তলীয়ে যায়।

এসময় রোববার রাত ১২ থেকে সোমবার সকাল ১১টা পর্যন্ত রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সড়ক থেকে পানি সড়ে গেলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। শহরের কোট বিল্ডিং, ঘাগড়া, সাপছড়ি, রাঙাপানি, পুলিশ লাইন এলাকায় সড়কে কিছু কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সড়ক বিভাগের লোকজন কাজ শুরু করেছে। তবে বৃষ্টি কারণে কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে সড়ক বিভাগের এ কর্মকর্তা জানান।

রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দিদারুল আলম জানান, পাহাড় ধসের আশংকায় রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের একটি দল মাঠে তৎপর রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন