Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

‘ভারত সরকার চাকমা হাজংদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে আর রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর কথা বলছে’

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে ভারতে আশ্রয় নেওয়া চাকমা ও হাজং শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরেও তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বছর দুয়েক আগেই এই শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিল। গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সরকার সেই সিদ্ধান্ত কার্যকরী করার ঘোষণা দেয়।

ওই শরণার্থীদের তৎকালীন নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স বা নেফা, বর্তমানের অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যে থাকার ব্যবস্থা করেছিল ভারত সরকার।

নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একদিকে যেমন অরুণাচল প্রদেশে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ-ধর্মঘট, তেমনই কেন্দ্রীয় সরকারও সুপ্রীম কোর্টের কাছে আবেদন জানাতে চলেছে তাদের আগের নির্দেশ বদল করার জন্য।

স্বরাষ্ট্র দপ্তরের রাষ্ট্র মন্ত্রী কিরেন রিজিজু অরুণাচল প্রদেশ থেকেই নির্বাচিত।

তিনি একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া স্বাক্ষাতকারে বলেছেন যে সুপ্রীম কোর্টের কাছে নির্দেশ পরিবর্তনের জন্য আবেদন করার কথা ভাবা হচ্ছে। কারণ চাকমা ও হাজংদের নাগরিকত্ব দেওয়া হলে সেখানকার স্থানীয় জনজাতি সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে। তাদের স্বার্থ রক্ষা করতেই নতুন নির্দেশ চাওয়া হবে। এ নিয়ে যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে অরুণাচল প্রদেশে, সেটাও উল্লেখ করেছেন মন্ত্রী।

সেই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে ছাত্ররা। অল অরুণাচল প্রদেশ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বা আপসু মঙ্গলবার সারাদিন ধর্মঘট পালন করেছে, একরকম অচল হয়ে গিয়েছিল গোটা রাজ্য। আপসুর সাধারণ সম্পাদক তোবোম দাইয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম চাকমা-হাজংদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কেন বিরোধীতা করছেন তারা?

“আইনের মাধ্যমে অরুণাচলের জনজাতিগুলির স্বার্থ সংরক্ষিত। এমনকি আমাদের ভারতীয় সহনাগরিকদেরও এখানে জমি মালিকানার অধিকার নেই, রাজ্যে আসতে গেলে ইনার লাইন পারমিট নামের বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। সেখানে যদি এই প্রায় এক লক্ষ শরণার্থীকে নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তো আমরাই সংখ্যালঘু হয়ে পড়ব! এটা কী ভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব?” প্রশ্ন মি. দাইয়ের।

তিনি আরও ব্যাখ্যা করছিলেন, অরুণাচল প্রদেশের মোট জনসংখ্যাই মাত্র নয় লাখের মতো। সবথেকে বড় জনজাতির মানুষ আছেন লাখ দুয়েক। আর যেসব এলাকায় চাকমা-হাজংদের রাখা হয়েছে, সেখানে এমন জনজাতিও আছে, যাদের সংখ্যা মাত্র ২৫-৩০ হাজার। লক্ষাধিক চাকমা-হাজং ভারতের নাগরিক হয়ে গেলে জনজাতিগুলি তো নিশ্চিতভাবেই সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে!

তবে চাকমা হাজং শরণার্থীদের কথায়, যাদের নাগরিকত্ব দিতে বলেছে সুপ্রীম কোর্ট, তাদের সংখ্যাটা হাজার আটেকের বেশি নয়। এই লক্ষাধিক চাকমার কথা বলে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, যাতে জনজাতিগুলিকে ভুল বুঝিয়ে তাদের সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার আশঙ্কা মনে গেঁথে দেওয়া যায়।

কমিটি ফর সিটিজেনশীপ রাইটস অফ চাকমাজ এন্ড হাজংস অফ অরুণাচল প্রদেশ ওই শরণার্থীদের নাগরিকত্বের দাবী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন আর আইনী লড়াই চালাচ্ছে।

সংগঠনটির সভাপতি সুবিমল বিকাশ চাকমার কথায়, “লাখ খানেক চাকমা-হাজং আসবে কোথা থেকে! পুরোটাই বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য বলা হচ্ছে। আমরা ৬৫ থেকে ৬৯ সালের মধ্যে এসেছিলাম ১৪ হাজার নয়শোর কিছু কম মানুষ। বহু মানুষ ৫০-৫২ বছরে মারা গিয়েছেন। আর তাদের সন্তানসন্ততিরা ভারতে জন্ম নেওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ভারতের নাগরিক হয়ে গেছেন। একেবারে প্রথম সময়ে যারা এসেছিলেন, তাদেরই নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলেছে সুপ্রীম কোর্ট।”

আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার সিদ্ধান্তের পরে কিছুটা আশার আলো দেখেছিলেন অর্ধ শতকেরও বেশি সময় ধরে নাগরিকত্বহীণ অবস্থায় কাটানো যে চাকমা-হাজংরা, তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে সরকারের আবারও আদালতের কাছে নির্দেশ বদলের আর্জি জানানোর সিদ্ধান্তে আর স্থানীয় মানুষদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের কারণে।

তবে এরকম একটা আশঙ্কা তাদের প্রথম থেকেই ছিল। অনিশ্চয়তা ছিল নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘোষণায় সরকার কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেওয়ায়।

তাঁরা বলছেন দীর্ঘদিন ধরে চাকমা-হাজংদের নিয়ে রাজনীতি হয়েছে, আবারও সেই একই রাজনীতির শিকার হচ্ছেন তারা।

কেন্দ্রীয় সরকার যে রাজনীতি করছে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ইস্যুতে, সেটা বলছেন অরুণাচল প্রদেশের ছাত্র নেতারাও।

আপসুর নেতা তোবোম দাই বলছেন, “সরকার তড়িঘড়ি সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিল ধর্মীয় রাজনীতি করতে। সরকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাকমা আর হিন্দু হাজংদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলছে, অথচ মুসলিম রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে তাড়ানোর কথা বলছে। এটা তো দুমুখো নীতি! জনজাতিগুলির স্বার্থ রক্ষার কথা না ভেবেই আদালতে আরেকটা মামলা চলা স্বত্ত্বেও সরকার সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশ কার্যকরা করার কথা বলে দিল।”

এই ইস্যুতে যে ধর্মীয় রাজনীতির ওপরে ভিত্তি করে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা স্বীকার করতে রাজি নন অরুণাচল প্রদেশের বিজেপি সভাপতি তাপির গাও।

“এই অভিযোগ ঠিক না যে ধর্মীয় লাইনে ভাবনা চিন্তা করে এই ঘোষণা করা হয়েছে। সুপ্রীম কোর্টের একটা নির্দেশ ছিল, সেটাই সরকার কার্যকর করার কথা বলেছে। আর এটাও বলা হয় নি যে নির্দেশ বদল করার জন্য সুপ্রীম কোর্টে যাবে সরকার। আদালত চাকমা-হাজংদের নাগরিকত্ব দিতে বলেছে ঠিকই কিন্তু রাজ্যের জনজাতিগুলির স্বার্থহানি না ঘটিয়ে সেটা কীভাবে করা সম্ভব সে ব্যাপারে কোনও সুস্পষ্ট নির্দেশ নেই। আমরা চাইছি, সরকারও সেটাই চাইছে যে কোর্ট এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ দিক,” বলছেন মি. গাও।

বিজেপির ওই নেতা বলছেন নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি নেই কিন্তু এটা স্পষ্ট করে আদালত জানাক যে চাকমা-হাজংরা অরুণাচলের অন্যান্য জনজাতির মতো সংরক্ষণের আওতায় পড়বে না, তাদের সব অধিকারগুলি চাকমা-হাজংদেরও দেওয়া হবে না।

ওদিকে চাকমা নেতৃত্বের প্রশ্ন, শর্তসাপেক্ষে নাগরিকত্ব আবার হয় না কি! ভারতের নাগরিকদের যা যা অধিকার, সে সবই তাদেরও পাওয়া উচিত সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে।

সূত্র: বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন