বৈসাবির সাজ


পাহাড়ে চলছে প্রাণের উৎব বৈসাবি, টেনশন হচ্ছে কীভাবে সাজাবেন নিজেকে। চিন্তার প্রয়োজন নেই, আমরাই দিচ্ছি আপনাকে টিপ্স। বৈসাবির সাজে নিজেকে সাজাতে  খুবই পছন্দ করেন পাহাড়ী নারীরা। কিশোরী আর তরুণীদের মাঝে সে প্রবণতা আরও বেশি। নিজেকে ইচ্ছেমতো সাজাতে কারো একটুও ক্লান্তি নেই। তাই নিজেকে রাঙিয়ে নিতে কিছু পরামর্শ দিয়ে লিখেছেনজয়ী চাকমা

মেকাপ
রোদের তাপে মেকাপ নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। মেকাপ ঠিক রাখতে বেছে নিতে পারেন হাল্কা বেইজের কিছু। তাই বেছে নিতে পারেন অয়েল ফ্রি বা ওয়াটার প্রুফ মেকাপ। মেকাপ করার আগে ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম বা লোশন ব্যবহারের পর সানস্ক্রিন লাগাতে হবে (এফসিএফ ৪০-এর বেশি যেন হয়)। তবে তা অবশ্যই ভালো মানের হওয়া চাই।

চোখের সাজ
চোখে লাগাতে পারেন হাল্কা আই শ্যাডো আর মাশকারা। কাজল, আই লাইনার বা মাশকারা অবশ্যই ওয়াটার প্রুফ হওয়া জরুরি। তা নাহলে চোখের চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে চোখের চারপাশে ছড়িয়ে পড়া এড়াতে কাজল দেওয়ার পর হালকা করে পাউডার লাগাতে পারেন।

চুলের সাজ
বড় চুলের সাজে করতে পারেন খোপা বা বেণী। এ ক্ষেত্রে হাত খোপা করে চুলের এক পাশে বা পুরোটা জুরে গেঁথে নিতে পারেন পাহাড়ি ফুল। ছোট চুল ছেড়ে দিলেও ভালো মানাবে। এছাড়াও হাল্কা হাতে একটু অগোছালো করে আঁটকে নিতে পারেন কোন ক্লিপ বা ব্যান্ড দিয়ে। তবে তাতেও ফুল থাকা চাই।

ঠোঁটের সাজ
লিপ লাইনার দিয়ে ঠোঁট একে গাঢ় রঙের লিপিস্টিক ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে রঙটা যেন অবশ্যই আপনার পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

ফুল ভাসানোর সাজের প্রস্তুতি
ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাই ও চাকমাদের বিজুর (বৈসাবি) একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ফুল ভাসানো। ১২ এপ্রিল এটি পালন করা হয়। এই দিন ভোরের আলো ফুটার আগে কিশোরী ও তরুণীরা বুনো ফুল তুলে ভোরে নদীতে ভাসায়। তবে এই দিনটিতে কিশোরী ও তরুণীদের সাজে থাকা চাই একটু ভিন্নতা। যেহেতু ভোর বেলা আর নদীতে ফুল ভাসানো তাই ভিজে যাওয়ার ভয় থাকে। মাথায় রাখতে হবে যেহেতু পানিতে নামতে হবে যেন কাপরের রঙ না ওঠে। এ জন্য হালকা মেকাপই ভালো। তবে মেকাপ হতে হবে অবশ্যই ওয়াটার প্রুফ।

চাকমা কিশোরী ও তরুণীদের পোশাক-সাজ
ফুল ভাসোনোর দিন চাকমা কিশোরী ও তরুণীরা পরতে পারেন সুতি, মাসলাইস কিংবা কুরিয়ান সুতার তৈরি উজ্জ্বল রঙের পিনোন-হাদী। কেননা এসব পিনোন-হাদীর রঙ উঠে না। মুখে হালকা ফেস পাউডার দিয়ে চোখে গাঢ় করে কাজল টেনে হালকা মাশকার লাগিয়ে নিতে পারেন। চুল খোলা রেখে এক পাশে বুনো ফুল লাগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। কানে পরতে পারেন বড় দুল বা কানপাশা, গলায় পয়সার মালা। ব্যস তাতেই আপনাকে দেখাবে প্রাণবন্ত।

মারমা নারীদের সাজ-পোশাক
যেহেতু নদীতে ফুল ভাসানো তাই এমন থামি পরলেই আপনাকে ভালো দেখাবে যে থামিতে ফুলের নকশা আছে। তবে থামির রঙ হওয়া চাই উজ্জ্বল। মুখে ফেস পাউডার লাগানোর পর দুই গালে চন্দন লাগানো যেতে পারে। চোখে কাজল আর ঠোঁটে পোশাকের সাথে মিলিয়ে লিপিস্টিক। ছোট কানের দুল আর গলায় পুতির মালা চুল এলোমেলোভাবে বেঁেধ তাতে এক গুচ্ছ ফুল লাগালে হয়ে উঠবে আপনার পরিপূর্ণ সাজ।

ত্রিপুরা নারীদের সাজ-পোশাক
ত্রিপুরা নারীদের ফুল ভাসানোর সময় রিনাই ও রিচাকের রঙ হওয়া চাই উজ্জ্বল। মুখে লাগনো যেতে পারে হালকা ফেস পাউডার। চোখে গাঢ় কাজল আর কপালে লাল রঙের টিপ, ঠোঁটে লাল লিপিস্টিক। কানে বড় দুল, গলায় পয়সার মালা। চুল খোলা রেখে একপাশে নিয়ে একটি জবা ফুল লাগিয়ে নিলেই তাতেই আপনাকে দেখাবে অসাধারণ।

বাঙালি মেয়ের বৈশাখী সাজ
বৈশাখে সুতি শাড়ি বেছে নেওয়াই ভালো। আগে সাদা-লাল পাড়ের শাড়ি পরা হতো, কিন্তু এখন নানা রঙের শাড়ি পরা হয় বৈশাখে। একরঙা সুতি শাড়িতে চিকন পাড় ভালো লাগে। যেহেতু গরম তাই হাফহাতা ব্লাউজ পরতে পারেন। আবার শাড়ির সাথে মিল রেখে বাটিকের ব্লাউজ পরতে পারেন। এই দিনে শাড়ি বাঙালি স্টাইলে পরলেই ভালো লাগবে। অনেকেই শাড়ির বদলে গরমের জন্য সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া পরতে পছন্দ করে। যেহেতু উৎসবটি একেবারে দেশীয় সংস্কৃতির তাই মেয়েদের জন্য শাড়ি, আর ছেলেদের জন্য পাঞ্জাবিটাই বেশি মানানসই।

মেকআপ
নিজেকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলতে মেকআপ করাটা জরুরি। তবে সেটা হওয়া উচিত হাল্কা বেইজের। কারণ দীর্ঘ সময় গরমে বাইরে থাকতে হয় এই দিনে। প্রধান করণীয়গুলোর মধ্যে হলো পরিচ্ছন্ন থাকা এবং উৎসবের কয়েকদিন আগে থেকে ত্বকের যত্ন নিয়ে রাখা।
মেকআপ করার আগে মুখে বরফ টুকরা ঘষে নিন এতে মেকআপ ত্বকের ভেতরে যাবে না আর ঘাম কম হবে। হাল্কা ফেস পাউডার ব্যবহার করুন। চোখ গাড় করে সাজান। গাড় লিপস্টিক ব্যবহার করুন। ব্যাস সাধারণ তবে আকর্ষণীয় লুকে হয়ে যাবে বৈশাখের সাজ।

গয়না
শাড়ির সঙ্গে গয়না না হলে কী চলে? সেক্ষেত্রে মাটির গয়না বেছে নেয়া ভালো। মাটির মালা হতে হবে লম্বা। আবার কাঠ, রূপা, মুক্তা বা তামার মালা পরতে পারেন। ভারি গয়না পরতে না চাইলে ফুলের মালা বেছে নিন।

চুড়ি
বাঙালি নারীর হাত ভর্তি চুড়ি তো থাকতেই হবে! গয়না না পরলেও দুহাত ভর্তি চুড়ি সাজ পূর্ণ করে দেয়। শাড়ির পাড়ের সঙ্গে মিলিয়ে রেশমি চুড়ি পরতে পারেন। মাটির বা কাঠের চুড়িও কিন্তু বেশ মানিয়ে যায়। পোশাকের রঙের প্রাধান্য যেটাই থাকুক না কেন, হাতে থাকা চাই রেশমি চুড়ি।বৈসাবি

র‌্যালির সাজ
বৈসাবির র‌্যালি মানেই এক বিশাল মিলনমেলা। র‌্যালিতে যাওয়া নাহলে যেন বৈসাবিই মাটি হয়ে যায়। কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, বন্ধু-বান্ধব, আত্বীয়- স্বজন সবাই মিলিত হই মিলনমেলায়। আর এ মিলনমেলায় নিজেকে সুন্দর ও পরিপাটি করে উপস্থাপন করাটাই সার্থকতা। তাই বৈসাবির র‌্যালির সাজ হওয়া চাই আকর্ষণীয়। তবে বৈসাবির র‌্যালির সাজে থাকা চাই নিজস্ব স্বকীয়তা।
র‌্যালির পোশাকে চাকমা কিশোরী ও তরুণীরা পিনোন হাদীর সাথে পরতে পারেন ম্যাচিং টপস। যদি টপস পরে থাকেন তাহলে এক পাশে হাদী রাখলে সুন্দর দেখাবে। যদি ব্লাঊজ পরেন তাহলে হাদী সামনের দিকে মেলে দিয়ে পিছনের দিকটা ভাঁজ করে সামনে এনে ডান হাতের উপর রাখলে ভালো দেখাবে।

এছাড়া এই দিন চাকমা কিশোরী ও তরুণীরা ঐতিহ্যবাহী সাজে নিজেকে সাজাতে চাইলে পিনোন হাদীর সাথে ব্লাউজ পরতে হবে। পিনোন পরতে হবে হাঁটুর নিচে আর হাদী বক্ষ বন্ধনীর মতো পরতে হবে। এসময় গলায় পরতে পারেন রূপার হাসুলি আর পয়সার মালা, হাতে বালা, হাতের উপরে বাজুবন্ধ, কানে বড় কানপাশা, কোমরে বিছা আর পায়ে পায়ের চুরি। এই সাজে নিজেকে সাজাতে চাইলে চুল অবশ্যই খোপা করে ফুল লাগাতে হবে।

আর আধুনিকতার সাজে সাজতে চাইলে গলায় পরতে পারেন বিভিন্ন পিতল, অক্সিডাইজ, পুতি কিংবা সুতার মালা। কানে মানানসই দুল। হাতে ম্যাচিং চুরি।

এই দিনে দল বেঁধে মারমা পাড়ার মেয়েরা কিংবা বান্ধবীরা সবাই একই রঙের গজ কাপড় কিনে থামি বানিয়ে নিতে পারেন। এছাড়া কিশোরী ও তরুণীরা র‌্যালিতে সাজতে পারেন ঐতিহ্যবাহী সাজে। একই রঙের থামি, কানের দুল, গলায় মালা আর একই ধরনের খোপা করে ময়ূরের পেখম লাগিয়ে সাজতে পারেন। এছাড়া হাতে বার্মিজ পাখা আর বার্মিজ ছাতা নিয়ে বের হতে পারেন র‌্যালিতে। যে সাজেই সাজেন না কেন মুখে চন্দন লাগাতে ভুলবেন না।

ত্রিপুরা নারীদের র‌্যালির সময় পুরনো ডিজাইনের লাল কালো রঙের রিনাই রিচা পরলে সব থেকে ভালো দেখাবে। লাল কালো রিনাই রিচার সাথে পরতে পারেন লাল ব্লাউজ। হাতে পরতে পারেন চুড়ি, গলায় পয়সার মালা, কানে ঝুকমো, চুল বাঁধতে পারেন উঁচু করে হাত খোপা, তাতে এক পাশে ফুল। কপালে লাল গোল টিপ এতেই র‌্যালিতে ঐতিহ্যের সাজে আপনি হয়ে উঠবেন আকর্ষণীয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন