parbattanews

লংগদুরের বাবলু এখন বাফুফের রেফারি


মো. নুরুল আমিন
রাঙ্গামাটির লংগদুরের ছেলে তারিকুল ইসলাম বাবলু, বন্ধুদের কাছে বাবলু সরকার নামেই পরিচিত। বাবলু বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নিবন্ধিত রেফারি এবং চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল এসোসিয়েশেনের সদস্য। শুধু কি ফুটবলেই তার আগ্রহ? না, ক্রিকেটেও অলরাউন্ডার। ২০১৩ সালে রাবেতা স্কুল থেকে তাদের ক্রিকেট টিম জেলা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। কিন্তু ক্রিকেট আর ফুটবলেই সীমাবদ্ধ নয় বাবলু, সে একজন দক্ষ সাঁতারুও। সম্প্রতি আন্তঃবিশ^বিদ্যালয় সুইমিং প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের হয়ে রানারআপ এবং ওয়াটার পলোতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাবলু। বিশ^বিদ্যালয়ে অ্যাথলেট হিসেবে ১০ হাজার এবং ৫ হাজার মিটার দৌড়ে ইতোমধ্যে তার ঝুলিতে জমা হয়েছে ১৬টি মেডেল। ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিসসহ অন্যান্য খেলাতেও রয়েছে তার অনেক অর্জন। তবে ফুটবলটাই বাবলু সরকারের ধ্যানজ্ঞান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এডুকেশ এন্ড স্পর্টস সাইন্স ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বাবলুদের বাড়ি কাপ্তাই লেকের পাড়ে। কিন্তু লেক, সবুজে ঢাকা পাহাড়, ঝর্ণা, ঝুলন্ত ব্রিজ কিছুই তাকে টানত না, তার মন পড়ে থাকত খেলার মাঠে। বন্ধুরা যখন ক্যারিয়ার গড়তে পড়াখেলায় ব্যস্ত, বাবলু তখন ব্যস্ত থাকত বিভিন্ন খেলাধুলায়, আর তার যত মনোযোগ ছিল খেলাধুলার নিয়মকানুন শিখতে। এ কারণে কোনো কোনো সময় স্কুলের পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল হতো না। ফলে নানা গঞ্জনাও সইতে হতো।

রেফারি হওয়ার গল্প বলতে গিয়ে বাবলু বলেন, ‘ক্যারিয়ারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সংশয়ে ভুগছিলাম। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করেছি। পরিবারের দিক থেকে প্রথমে খেলাধুলাকে গুরুত্ব না দিলেও পরবর্তীতে তারা আমার আগ্রহকে মেনে নেয়। খেলাধুলার কারণেই আমি অষ্টম শ্রেণিতে এক বিষয়ে পাশ করতে পারিনি। বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেয়ায় সফল হই। ২০১৩ সালে রাবেতা হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৫ সালে রাবেতা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করি। এরপর চিন্তা করি, মরি আর বাঁচি যেকোন কিছুর বিনিময়ে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতেই হবে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। কিন্তু সেখানে সফল হতে পারিনি। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্যাল এডুকেশ এন্ড স্পর্টস সাইন্স বিভাগে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতকার্য হই। এরপর থেকেই নতুন উদ্যমে শুরু করলাম পড়ালেখা আর খেলাধুলা। আমার মনে হয়েছে খেলাধুলায় প্রতিষ্ঠিত হওয়াটাই ঠিক হবে। তাই পেশাদার রেফারিংয়ের জন্য পরীক্ষা দিলাম। ২০১৮ সালে পহেলা মার্চ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ৩য় শ্রেণির রেফারি হিসেবে নিবন্ধিত হই; একই সাথে চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল এসোসিয়েশেনের সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করি। এ পর্যন্ত আমি ৭টি ম্যাচ পরিচালনা করেছি।’ খেলাধুলা সম্পর্কে বাবুলর অভিমত, ‘খেলাধুলা আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে, আত্মবিশ্বাস দিয়েছে, স্বাবলম্বী করেছে, সম্মানও দিয়েছে।’

বাবলু সরকারের বাবা আব্দুল বারেক সরকার একজন জনপ্রতিনিধি, মা বানেছা খাতুন গৃহিণী। সাত ভাই-বোনের মধ্যে বাবলু পঞ্চম। ১৯৯৭ সালে ১০ নভেম্বর লংগদু উপজেলার মাইনীমুখ ইউনিয়নের পশ্চিম জারুল বাগানে জন্ম নেয়া বাবলু পড়ালেখা আর খেলাধুলার পাশাপাশি ছাত্ররাজনীতিতেও সক্রিয়। বাবলু বর্তমানে রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক। তার স্বপ্ন খেলাধুলার উপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে জেলা ক্রীড়া অফিসার বা ক্রীড়াবিদ হয়ে দেশের পিছিয়ে পড়া তৃণমূল পর্যায়ের খেলোয়াড়দের তুলে আনা। তাদের তুলে এনে সঠিক প্রশিক্ষণ দিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার সুযোগ করে দিয়ে দেশের সুনাম অর্জন করাই তার লক্ষ্য। খেলাধুলায় উৎসাহিত করে যুব সমাজকে মাদক এবং বিভিন্ন অপকর্ম থেকে দূরে রেখে সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল জাতি গঠন করা সম্ভব বলেও মনে করেন বাবলু।

সূত্র: পাক্ষিক পার্বত্যনিউজ, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বর্ষ ০১, সংখ্যা ১৬-১৭

Exit mobile version