বান্দরবানের লামায় ভূমি বেদখল সরেজমিন পরিদর্শনে নাগরিক প্রতিনিধিদলকে বাধা প্রদানের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

IMG_6974

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বান্দরবানের লামায় ভূমি বেদখল সরেজমিন পরিদর্শনে নাগরিক  প্রতিনিধিদলকে  বাধা প্রদানের প্রতিবাদে রবিবার, বিকাল ৩টায় নাগরিক প্রতিনিধি দলের উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোল টেবিল মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নাগরিক প্রতিনিধি দলের সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী নুমান আহম্মদ খানের সঞ্চালনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি ও  মানবাধিকার সংগঠক পঙ্কজ ভট্টাচার্য। সমাপনী বক্তব্য রাখেন কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের  সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, লেখক  ও  আইনজীবী   এ্যাডভোকেট  প্রকাশ বিশ্বাস,  মানবাধিকার  কর্মী রওশন  মাসুদা,  বাংলাদেশের  ওয়ার্কাস  পার্টির  পুলিটব্যুরোর  সদস্যবিমল  বিশ্বাস,  বাংলাদেশ  আদিবাসী  ফোরামের  ডা. গজেন্দ্র নাথ মাহাতো প্রমুখ।

কলামিস্ট ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘প্রতিনিধি দল একটি সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করার লক্ষ্যেই সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।  তাদেরকে বাধা দেওয়ার মাধ্যমে দেশের সংবিধানে ও প্রযোজ্য আইনে স্বীকৃত তথ্য প্রাপ্তির অধিকারকে  পদদলিত করে লামায় ভূমি বিরোধ সংক্রান্ত তথ্য সংক্রান্ত  সাংবিধানিক অধিকারকে সরাসরি হরণ করার সামিল’ বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে দেশের সামগ্রিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে গণতন্ত্রের অধিকারকে যারা চূর্ণবিচূর্ণ করেছে তাদের যথাযথ বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের কাছেও আহ্বান জানান।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘যারা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি চায় না, যারা ভূমি সমস্যাকে জিইয়ে রেখে কায়েমী স্বার্থ হাসিল করতে চায়, যারা দেশবাসী থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন রেখে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে অবাধে ভূমি বেদখল, পাহাড়িদের উচ্ছেদ, লুটপাট ও জাতিগতভাবে নিপীড়ন-নির্যাতনের হীন তৎপরতায় জড়িত রয়েছে তারাই নাগরিক প্রতিনিধিদলকে লামা ও বান্দরবান সদরে প্রবেশে এবং ভূমি বিরোধ সংক্রান্ত অভিযোগ সরেজমিন তদন্তে ও তথ্য সংগ্রহে বাধা প্রদান করেছে বলে প্রতিনিধি দল মনে করে’।

তিনি বলেন, ‘নাগরিক প্রতিনিধি দলের সরেজমিন ভণ্ডুল করতে প্রভাবশালী বিশেষ বাহিনীর ইন্ধনে সাম্প্রদায়িক কিছু সেটেলার বাঙালিদের দিয়ে অবরোধ কর্মসূচির নামে নাগরিক প্রতিনিধি দলকে বাধা দেওয়া হয়’।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, ‘১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি অনুসারে একটি স্বাধীন ভূমি কমিশনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী বর্তমান সরকারের আমলে এ ধরণের একটি গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে নাগরিক প্রতিনিধি দলকে বাধা প্রদান কখনোই কাম্য হতে পারে না’।

সরকার অতি চালাকি ভূমিকা পালন করছে মন্তব্য করে সঞ্জীব দ্রং বলেন,  ‘নাগরিক প্রতিনিধিদলকে বাধা প্রদানের মধ্যে দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের ভূমি প্রতিনিয়ত বিশেষ গোষ্ঠী দ্বারাও বেদখল করা হচ্ছে’।

সবশেষে নাগরিক প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কিছু দাবি পেশ করা হয়। দাবি গুলো হলো-‘নাগরিক প্রতিনিধিদলকে যারা বাধা প্রদান করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পাহাড়িদের বেদখলকৃত ভূমি ফেরত প্রদান করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক ভূমি ইজারা বাতিলপূর্বক ভূমি বেদখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামে বেসামরিকীকরণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা এবং পার্বত্য ভূমি কমিশনের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্ধ, জনবল নিয়োগ, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় শাখা অফিস স্থাপন কমিশনের কার্যপ্রণালী, বিধিমালা চূড়ান্তকরণ পূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন (২০১৬ সালে সংশোধনীসহ) মোতাবেক অচিরেই পার্বত্যাঞ্চলের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করা’।

ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে নাগরিক প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছেন- মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টিজিয়াউদ্দিন তারিক আলী, মানবাধিকার কর্মী নুমান আহম্মদ খান, রওশন মাসুদা, আইনজীবী ও লেখক এ্যাডভোকেট প্রকাশ বিশ্বাস,নিউ এইজ-এর বিশেষ প্রতিবেদক জুয়েল আলমগীর, দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর স্টাফ রিপোর্টার আবদুল্লাহ আল মামুন, দৈনিকভোরের কাগজ-এর প্রতিনিধি আজিজুর রহমান, দৈনিক প্রথম আলোর বান্দরবান প্রতিনিধি বুদ্ধজ্যোতি চাকমা, ডেইলী স্টার-এরবান্দরবান প্রতিনিধি সঞ্জয় বড়ুয়া, মানবাধিকার কর্মী টিসেল চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি সুমনমারমা প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন