বন মোরগ শিকারী পানছড়ির নায়েব আলী
স্টাফ রিপোর্টার:
খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার পেশাদার বন মোরগ শিকারী নায়েব আলীর বয়স এখন সাইত্রিশ। সে উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে। বিভিন্ন বনে জঙ্গলে ঘুরে ফাঁদ পেতে মোরগ শিকার করাই তার পেশা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সাত সকালেই শিকারী মোরগ ও ফাঁদ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে নায়েব আলী। দীর্ঘ ২ঘন্টা অপেক্ষার পর বেলা ১টার দিকে দেখা মিলে দক্ষ শিকারী নায়েবের। তবে খালি হাতে নয়। শিকার নিয়েই বাড়ি ফেরা।
এই প্রতিবেদকের সাথে পূর্ব পরিচিত থাকায় তার সাথে কথা হয় শিকার নিয়ে। সে জানায় দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর যাবৎ এই পেশার সাথে জড়িত। উপজেলার ফাতেমানগর, কাশিপাড়া, ঝর্ণাটিলা, মরাটিলা, যৌথখামারসহ বিভিন্ন এলাকায় ফাঁদ পেতে শিকার করা হয় বন মোরগ।
কিভাবে ফাঁদ পাতা হয় তা জানতে চাইলে নায়েব আলী জানায়, জঙ্গলভরা এলাকায় প্রথমে মাটির সাথে এক ধরনের ফাঁদ পেতে ফাঁদের মধ্যখানে শিকারী মোরগটিকে মাটির সাথে খুঁটি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে আশে-পাশে সে লুকিয়ে থাকে সে। শিকারী মোরগটি নিরিবিলি জঙ্গলে জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকলে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে বনমোরগ। শিকারী মোগরটিকে আক্রমন করতে তেড়ে আসা মাত্রই আটকা পড়ে ফাঁদে। তবে সারা বছর শিকার তেমন হয়না। ফাল্গুন ও চৈত্র মাস শিকারের মূল সময়।
তার শিকারের মাঝে সবচেয়ে সফলতা আসে বিগত চার বছর আগে। নয়শত টাকা দিয়ে একটা শিকারী মোরগ কিনে ঐ মোরগ দিয়ে ৯৭টি শিকার করেছে বলে মুচকি হেসে জানায়। এখনও প্রায়ই তার ফাঁদে বন মোরগ ধরা পড়ে বলে জানায়। তাছাড়া ছোট বাচ্চা মোরগকে শিকারী হিসাবে বানাতে পারলেই ৩/৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়।
নায়েব আরো জানায়, বন মোরগের মাংস বেশ সু-স্বাদু তাই গ্রাহকেরও অভাব নেই। দাম বেশি হলেও অগ্রিম অর্ডারেই সব মোগর বিক্রি হয়ে যায়। সাইজ ছোট হলে কমপকেক্ষ ৫শত, মাঝারী ৬শত ও বড় হলে ৭শত টাকা অনায়াসেই বিক্রি হয়। বন মোরগ শিকার ছাড়াও সে রাজ মিস্ত্রির শ্রমিক ও রিকসার প্যাডেল চাপিয়েই সংসারের খরচ মেটায়। নায়েব আলীর ১ ছেলে শাকিব পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্র ও মেয়ে নাসরিন ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে।
তবে তার অনেক দু:খের কথাও এ প্রতিবেদকের সাথে ভাগাভাগি করে। সে জানায় মা-বাবাসহ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬জন। একখানা প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড রয়েছে তার পিতার নামে। তাছাড়া অ-উপজাতীয় গুচ্ছগ্রামে রেশন কার্ড. ভিজিডি কার্ড, বয়স্ক ভাতা কোনটাই নেই। তার দাবি ৪০ দিনের কর্মসূচী, এলজিইডির আওতাধীন এলজিএলইপির আওতাধীন শ্রমিকের কাজে তার স্ত্রীকে নিয়োগ দেয়া হলে অন্তত মা-বাবা ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভালোভাবে দিনযাপন করা যেত।