ফের পাহাড় ধ্বসে অর্ধশত বাড়িঘর বিধস্ত, লামা ও আলীকদমে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

লামা প্রতিনিধি:

তিন দিনের ভারী বর্ষণে পাহাড় ধ্বসে বান্দরবানের লামায় অর্ধশত বাড়িঘর মাটির নিচে চাপা পড়ে বিধস্ত হয়েছে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ডুবে গেছে লামা পৌর এলাকাসহ লামা ও আলীকদম উপজেলার ৯ টি ইউনিয়ন।

বর্তমানে এসব এলাকায় অর্ধ লক্ষাধিক লোক পানি বন্দি হয়ে রযেছে। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন পাশ্ববর্তী বিভিন্ন স্কুল ও মাদরাসায়। মাতামুহুরী নদী, লামাখাল, ইয়াংছা খাল, বগাইছড়িখাল ও পোপা খালের পানি এখন বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে পাহাড় ধ্বস ও বন্যার পানিতে রাস্তা-ঘাট ডুবে যাওয়ায় লামা-চকরিয়া ও আলীকদম-চকরিয়া সড়কের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

বন্যায় ঘরবাড়ি ও হাটবাজার ডুবে যাওয়ায় চরম খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। ২০ দিনের দিনের ব্যবধানে লামা বাজারে পানি ওঠায় সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা সীমাহীন কষ্টের মধ্যে আছে।

গত রোববার সকাল থেকে প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে উপজেলায় অবস্থিত নদী, খাল ও ঝিরির পানি ফুঁসে উঠে। সোমবার বিকেল নাগাদ লামা পৌর এলাকার নয়াপাড়া, বাসস্ট্যান্ড, টিএন্ডটি পাড়া, বাজারপাড়া, লামা বাজার, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিলপাড়া, বড় নুনারবিলপাড়া, লাইনঝিরি, ফকিরপাড়া, হাজ্বীপাড়া, কলিঙ্গাবিলপাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়ার্টার সমূহ, থানা এলাকা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজার, হারগাজা, বগাইছড়ি, বনপুর ও লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা, অংহ্লাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

লামা উপজেলা সদরের সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বর্তমানে পানির নীচে ডুবে আছে। চেয়ারম্যানপাড়া, নয়াপাড়, রূপসীপাড়া, লাইনঝিরি, ফাঁসিয়াখালী ও ফাইতংয়ে পাহাড় ধ্বসে প্রায় অর্ধশত মাটি চাপা পড়েছে। আগ থেকে নিরাপদে সরে যাওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

পাহাড়ি ঢলের কারণে লামার আভ্যন্তরিণ সড়ক যোগযোগ বন্ধ হয়েগেছে। লামা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়ুয়া জানান, হাঠৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় বাজারে শত শত ব্যবসায়ী দোকানের মালামাল সরানোর সুযোগ পায়নি। পানিতে ভিজে ব্যবসায়ীদেও কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে ইয়াংছা বাজার, হারগাজা, বগাইছড়ি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রবল বর্ষণে পাহাড়ের মাটি ধ্বসে পড়ে ও বর্ষণের পানির স্রোতের টানে ইয়াংছা-বনপুর, বগাইছড়ি-হারগাজা-সাফেরঘাটা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

লামা রূপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা জানান, পাহাড়ি ঢলে দরদরী, মুসলিমপাড়া, নয়াপাড়া ও সিলেরতুয়া এলাকা এখন পানির নিচে। পানি আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব এলাকায় শত শত উপজাতি ও বাঙালী চরম দূর্ভোগে পড়েছে। লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম জানান, পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘর ডুবে পানিতে বন্দি হয়ে পড়া লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এজন্য নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

৩নং ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, সোমবার থেকে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। প্রচুর স্থানে পাহাড় ধ্বস হয়েছে তবে প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। এসময় ত্রাণের প্রয়োজন ছিল। অধিকাংশ মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার।

নৌকা যোগে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, লামা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, লামা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, নুনার বিল ও চেয়ারম্যান পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যা কবলিত শত শত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া লোকজনের জন্য খাবার ও পানির প্রয়োজন বলে দূর্গতরা জানান।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিন ওয়ান নু জানান, পাহাড় ধ্বসের অনেক খবর পাওয়া গেছে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেওয়া লোকজনকে সাধ্যমত শুকনা খাবার চিড়া, মুড়ি, কিস্কুট ও খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী জানান, বন্যা কবলিতরা আশ্রয় নেওয়ার জন্য উচস্থিানে থাকা স্কুল ও মাদরাসা খুলে দেওয়া হযেছে।

আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম জানান, আলীকদমে চৈক্ষ্যং ও সদর পাহাড়ি ঢলে ডুবে গেছে। এতে ডুবেছে শতশত বাড়ি ঘর ও দোকানপাট। পানি বন্দি লোকজনকে নৌকা যোগে নিরাপদে সিরে নেওয়া হযেছে।

চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, উপজেলার মংচা পাড়া, রোয়াম্ভু, বশির কারবারী পাড়া, যোগেন্দ্র পাড়া, মোস্তাক পাড়া, পাড়া, রেপার পাড়া বাজার পাড়া, ছাবের মিয়া পাড়া, আমতলীর চরসহ বেশ কিছু এলাকায় কয়েকশ ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নায়িরুজ্জামান বলেন, বন্যা ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়া লোকজন আশ্রয় নেওয়ার জন্য কয়েকটি বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন