ফুটবল খেলতে গিয়ে চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীতে ৫ ছাত্রের সলিল সমাধি: ৫ জনেরই লাশই উদ্ধার

চকরিয়া প্রতিনিধি: :

বাংলাদেশ ফুটবল পাগল জাতি। বিশেষ করে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ফুটবল সমর্থন নিয়ে পুরো জাতি যে পাগলামিতে মেতেছে তারই বলি হলো কক্সবাজারের চকরিয়ার ৫ স্কুল ছাত্র। চকরিয়ার চকরিয়া গ্রামার স্কুলের আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থক দুই দল স্কুল ছাত্র ফুটবল খেলার পর মাতামুহুরী নদীতে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে সলিল সমাধি ঘটেছে ৫ ছাত্রের। থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের গুহায় আটকে পড়া ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধার অভিযান নিয়ে সারা বিশ্ব তোল হলেও চকরিয়ার আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল সমর্থক এই ফুটবল প্রেমী কিশোরদের খবর সারা বিশ্বের অজানা।

কক্সবাজারের চকরিয়ায় উপজেলার মাতামুহুরী নদীতে সদ্য জেগে উঠা বালু চরে বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলে নদীতে গোসল করতে নামে পৌরশহরে অবস্থিত চকরিয়া গ্রামার স্কুলের ৫ মেধাবী ছাত্রের সলিল সমাধি হয়েছে।

১৪ জুলাই(শনিবার) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে চিরিংগা মাতামুহুরী ব্রীজের দক্ষিণ পাশে ফুটবল খেলতে গিয়ে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে।

মাতামুহুরী নদীতে নিখোঁজ হওয়া ছাত্ররা হলেন, চকরিয়া গ্রামার স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ও আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আনোয়ার হোছাইনের দু’পুত্র আমিনুল হোছাইন এমশাদ (১৭) ও তার ছোট ভাই একই স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র আফতাব হোছাইন মেহেরাব (১৫), একই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ও মানিকপুর তদরুপ ভট্টাচার্যের পুত্র তুর্ণ ভট্টাচার্য (১৭), গ্রামার স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের পুত্র ও ১০ম শ্রেণির ছাত্র সাঈদ জাওয়াদ আরভি (১৭) ও চিরিংগা সরকারী হাসপাতাল পাড়ার মোহাম্মদ শওকতের পুত্র ১০ম শ্রেণির ছাত্র ফারহান বিন শওকত (১৭)।

নদীতে ৫ ছাত্র নিখোঁজের ঘটনায় চকরিয়ার সর্বত্র নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহতদের পরিবারের কান্নায় ও আহাজারীতে আকাশ-বাতাশ ভারি হয়ে উঠেছে। তাদের বাড়িতে নিহত ছাত্রদের একনজর দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভীড় জমাচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মাতামুহুরী নদীতে চিরিংগা ব্রীজের নিচে সদ্য জেগে উঠা বালু চরে চকরিয়া গ্রামার স্কুলের একদল ছাত্র ও ক্ষুদে ফুটবলার বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলতে যায়। তাদের মধ্যে একদল আর্জেন্টিনা সার্পোটার ও অপর দল ব্রাজিল সাপোর্টার হয়ে ২২জন শিক্ষার্থী দুই দলে বিভক্ত হয়ে ফুটবল খেলেন। খেলে শেষে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মাতামুহুরী নদীতে গোসল করতে নামে ওই ক্ষুদে ফুটবলার।

তৎমধ্যে ৬জন ছাত্র নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয়ে যায়।একজনকে তাদের সহপাঠিরা মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে চকরিয়া একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।ঘটনার ৩ঘন্টা পর স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিস ডিফেন্স ষ্টেশনের একদল ডুবুরি নদীতে জাল ফেলে নিখোঁজ হওয়া ৫ ছাত্রের মৃতবস্থায় উদ্ধার করেন।

চকরিয়া ও কক্সবাজারের ফায়ার সার্ভিস ও ডুবুরি দল লাশ উদ্ধারে তৎপরতা এখনো অব্যহত রেখেছে। এ ঘটনার পর হাজার হাজার শোকার্ত জনতা নদীর দু’ধারে অবস্থান করছে।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘স্থানীয় একদল জেলে জাল নিয়ে খুঁজতে নামলে ১২টা ৫ মিনিট পযর্ন্ত পর পর ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।’

চকরিয়া উপজেলা সরকারি কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার মো. ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত। তার নেতৃত্বে চলছিল উদ্ধার অভিযান।

তিনি বলেন, কক্সবাজারের কোথাও ডুবুরি দল পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামে খবর দেওয়া হয়েছে। এর আগেই স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী ও এলাকার লোকজন নানাভাবে খোঁজ করে একজনকে জীবিত ও ৫ জনের লাশ উদ্ধার করেছে।

ঘটনার খবর পেয়ে মাতামুহুরী নদীর চরে ছুটে যান চকরিয়া-পেকুয়া আসনের জাতীয় সংসদ আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইলিয়াছ, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজী মো: মতিউল ইসলামসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তারা শোকাহত পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

আজ সকাল ১১ টায় মাতামুহুরী নদীর চরে নিহত ৫ খুদে ফুটবলারের জানাজা পড়ানো হবে।

অপরদিকে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম, চকরিয়া পেকুয়া উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান মানিক, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম লিটু, চকরিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবদুল মজিদ, চকরিয়া ইমাম সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা রুহুল কুদুছ আনোয়ারী আল আজহারী ও চকরিয়া সমিতির সভাপতি লায়ন কমরুদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক হামিদ হোছাইনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন