প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষিত: বিভিন্ন উসিলায় ডাক্তার নেই হাসপাতালে

nc-haspatal-pic-07-11-2016-copy

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি:

ডাক্তারদের যারা গ্রামে নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করছে না তাদের বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছর ২৫ ডিসেম্বর স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) এর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে এ নির্দেশ দেন। এছাড়াও গত বছর ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী মোহাম্মদ নাছিম বলেছিলেন, নিয়োগ পাওয়ার পর দুই বছরের মধ্যে কোন ডাক্তারকে বদলি করা যাবে না। কিন্তু এ নির্দেশনা মানেননি খোদ স্বাস্থ্য বিভাগ। বিভিন্ন বিভিন্ন সীমান্তবর্তী উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ডাক্তারদের বদলি করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কেউ আবার  রয়েছে প্রেষণে বান্দরবান জেলা সদরে।

জানা গেছে, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে গত বছরের জুলাই ও এ বছরের এপ্রিলে দুই দফায় চার হাজার ১৩৩ জনকে অ্যাডহক ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। যার মধ্যে ৩৩তম বিসিএস থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োগ পান ডা: সাগর দেব তপু, ডা: মুবিনুল হক চৌধুরী, ডা: উচিংনু চাক, ডা: পলাশ চৌধুরী, ডা: লিপিকা চৌধুরী, ডা: মাহমুদা চৌধুরী, ডা: লিপিকা। তৎসময় নিয়োগ পাওয়া এসব ডাক্তারা নিজ কর্মস্থলে যোগদানের পর প্রাণচাঞ্চ্যলতা ফিরে পায় হাসপাতাল জুড়ে। অসহায় সাধারণ রোগীরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালমূখী হতে থাকে। তারপরও এলাকাবাসীর মাঝে প্রশ্ন ছিল এসব ডাক্তার আগামী দুই বছর নিজ কর্মস্থলে থাকবেন তো?

ঠিক তাই হয়ে,  এক বছরের মাথায় বিভিন্ন উপায়ে হাসপাতাল ছেড়েছে চিকিৎসকরা। নাইক্ষ্যংছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে ডাক্তার আছে মাত্র দুই জন। তারাও সমঝোতার ভিত্তিতে সাপ্তাহিক হারে কর্মস্থলে যান। মাঝে মধ্যে কোন ডাক্তারই থাকেনা হাসপাতালে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিয়োগ পাওয়ার এক বছরের মাথায় এ হাসপাতাল ছেড়ে দুই জন বদলি হন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দুইজন রয়েছে বান্দরবান সদর হাসপাতালে প্রেষণে এবং দুইজন ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ে। নিয়োগের পর ২-৩ মাস নিজ কর্মস্থলে থাকলেও থেকেছেন উপজেলা ও জেলায়। তাদের কারো চাকরিস্থল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হলেও দেখা মেলেনি কখনো। এছাড়াও হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য বায়োমেট্টিক মেশিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক রাখার স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা থাকলেও নাইক্ষ্যংছড়ি হাসপাতালে তা অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছর যাবত ডা: উচিংনু ও ডা: পলাশ চৌধুরী বান্দরবান সদরে প্রেষনে রয়েছেন। এছাড়াও ডা: মুবিনুল হক, ডা: মাহমুদা রয়েছেন ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ে। ডা: সালমান করিম খাঁন রয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনেষ্টেশিয়া কোর্সে। এর আগে বদলি হয়ে গেছেন ডা: লিপিকা চৌধুরী ও শাওন বড়ুয়া। সর্বশেষ গত শনিবার রামু সদর হাসপাতালে বদলির আদেশ হয়েছে ডা: শিরিন বেগমের। যার কারণে দীর্ঘদিন ডাক্তার শূন্যতা থাকা নাইক্ষ্যংছড়ি হাসপাতালে আবারো সাধারণ জনগণ চিকিৎসা বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে সচেতন নাগরিকরা এ প্রতিবেদককে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার চিকিৎসকদের গ্রামে গিয়ে সেবা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি চিকিৎসকদের গ্রামে থাকতে না চাইলে চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। জাতীয় সংসদে বেশ কয়েকজন সাংসদও অ্যাডহক চিকিৎসকদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠে। কিন্তু বর্তমানে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রশ্ন জেগেছে অ্যাডহক ডাক্তারদের খুঁটির জোর নিয়ে!

জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মংহ্লা প্রু এ প্রতিবেদককে জানান, দুই জন ডাক্তার চট্টগ্রামে বদলি হয়ে গেছেন। দুই জন রয়েছে জেলা সদরে প্রেষণে। তিনি আরও জানান, পার্বত্য অঞ্চলে দুই বছর চাকরীরত ডাক্তারদের জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধা রয়েছে। তারপরও যোগদানের আগেই বদলি হয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি রয়েছে আমাদের কারো কারো। তাই, কর্তৃপক্ষ কাউকে বদলি করলে ব্যাক্তিগতভাবে তার কিছু করার থাকে না বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন