প্রত্যাবাসন নিয়ে ধোঁয়াশা, ঘর ফেলে পালিয়েছে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গারা

কক্সবাজার প্রতিনিধি:
শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা সাড়া না দিয়ে প্রত্যাবাসনকে আটকে দিয়েছে। নানা আলোচনা-সমালোচনা সত্ত্বেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি।

১৫ নভেম্বর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ ধার্য্য ও সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গারা না আসায় ভেস্তে গেছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক একটি বড় শক্তি কাজ করছে। আর এই সত্য প্রমাণের মধ্যদিয়ে পুরো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াই হুমকির সম্মুখিন হল বলে মনে করছেন কক্সবাজারের সচেতন মহল।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমরা শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়ে আসছি, প্রথম দিকে রোহিঙ্গারাও বলেছিল মিয়ানমার ফিরিয়ে নিলে তারা ফিরে যাবে। কিন্তু রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসন বিরোধী যে কর্মকাণ্ড দেখালো, এটা তো আমাদের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ালো। পাশাপাশি এটা আমাদের দেশের জন্যও হুমকি।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, উখিয়া-টেকনাফে স্থানীয়রা এখন সংখ্যালঘু। আমরাই এখন রোহিঙ্গা দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছি। স্থানীয়দের জমিজমা দখলে নিয়েছে রোহিঙ্গারা। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের মাঝে উল্লাস চলছে, স্থানীয়দের মাঝে হতাশা, আর মুচকি মুচকি হাসছে জাতিসংঘভুক্ত সংস্থাসহ উন্নয়ন সংস্থার লোকজন। আর গভীর সংকটের মুখোমুখি বাংলাদেশ।

‘ইউনিসেফের হিসাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বছরে অন্তত ৬০ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। কিন্তু প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী ফেরত নিবে প্রতিদিন দেড়শ রোহিঙ্গা। সে হিসাবে বছরে ৩৬৫ দিনই যদি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যায় তাহলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৪ হাজার। এ অবস্থায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে সময় লাগবে অন্তত ২২ বছর।

কক্সবাজার পিপলস ফোরামের মূখপাত্র এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে প্রথমত আমরা অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছি, আবাসন এবং সামাজিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে আছি। এমন পরিস্থিতিতে সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে, যাতে করে আন্তজার্তিক সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানো যায়। এবং রোহিঙ্গাদের মাঝে কর্মরত এনজিওদের সমস্ত কাজ বন্ধ করে দিতে হবে।

জানা গেছে-রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন অনেকটা ভীতির সংশয় নিয়ে কাজ করছে এনজিওরা। গেল ১০ দিনে ৯০ ভাগ এনজিও’র কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে কাজ করতে পারেনি। এমনকি রোহিঙ্গারা ধর্মঘটের ডাক দিয়ে দোকান-পাঠ পর্যন্ত বন্ধ রেখেছিল। আবার যাদের প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত করেছিল তাদেরকে ক্যাম্পের বিভিন্ন মাঝিরা পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে বলে অনেকে জানিয়েছেন। বর্তমানে ঘর ফেলে পালিয়েছে রোহিঙ্গারা। আবার কেউ কেউ ঘরে থেকেও দরজা তালাবদ্ধ রেখেছে। যাতে বাইরে থেকে দেখে মনে হয় ঘরে মানুষ নেই।

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সিদ্বান্ত অনুযায়ী নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে উখিয়ার জামতলী ও টেকনাফের উনচিপ্রাং শরণার্থী শিবির থেকে ৪৮৫ পরিবারের ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গাকে প্রথম দফায় প্রত্যাবাসন শুরু করার কথা। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও টেকনাফের কেরুনতলী সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন দেড়শজন রোহিঙ্গাকে মিয়নমারে ফেরত পাঠানোর সিদ্বান্ত হয়। এ প্রেক্ষিতে (১৫ নভেম্বর) ৩০ পরিবারের ১৫০ জন রোহিঙ্গাকে ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে প্রত্যাবাসনের কথা ছিল। এমনকি প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার দুই দেশের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হলে রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রত্যাবাসন নিয়ে আবারও গভীর অনিশ্চয়তার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়ল স্থানাীয়রা। যার ফলে আলোর মূখ দেখবে না প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন