পাহাড়ে প্রাণের উৎসব বৈসাবি


জমির উদ্দিন:

পাহাড়ে বসবাসকারী ১১টি জাতিসত্তার মধ্যে খিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার কারণে বম, পাংখো ও লুসাই জনজাতি খ্রিস্টাব্দ নববর্ষ উদ্যাপনের বাইরে নিজস্ব কোনো কর্মসূচি রাখে না। তবে অন্যদের বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ আয়োজনে তারাও অংশ নেয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

অন্য আটটি জাতিসত্তার মধ্যে বর্ষবরণ উৎসব আয়োজনে কিছুটা ভিন্নতা পাওয়া যায়। বিশেষ করে চাকমা, ত্রিপুরা, ম্রো ও তঞ্চঙ্গ্যা জনজাতি বঙ্গাব্দ পঞ্জিকা অনুসরণে তাদের কর্মসূচি সাজায়। মারমা জনজাতি মিয়ানমারে ব্যবহৃত সাক্রয় পঞ্জিকা অনুসরণ করে। একই পঞ্জিকা অনুসরণের কারণে মারমাদের সাংগ্রাই উৎসবের সঙ্গে ম্রোদের চাংক্রান, খেয়াংদের সাংলান, খুমিদের সাংক্রাইন, চাকদের সাংক্রান অনুষ্ঠানে খুব একটা পার্থক্য নেই। বিশিষ্ট লেখক মং ক্য শোয়ে নু বলেন, ‘বছরের এই সময়জুড়ে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে, জনপদে জনপদে বিরাজ করে অনাবিল আনন্দধারা। বিগত বছরে না পাওয়ার দুঃখগাথা ভুলে এখানকার অধিবাসীরা বোনে এক স্বপ্নের আগামী’।

জাগ্রত করো, উদ্যত করো, নির্ভয় করো হে’ এ স্লোগানকে ধারণ করে বান্দরবানে শুরু হয় বাঙালির উৎসব পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা। স্থানীয় রাজার মাঠে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে নববর্ষ শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং এমপি।

‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো হে’ গেয়ে নতুন বাংলা বছরকে স্বাগত জানায় শিল্পীরা। বাহারি রঙের পোশাকে সজ্জিত হয়ে পাহাড়ের বাঙালি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠি প্রাণের টানে ছুটে আসে এ শোভাযাত্রায়।
বান্দরবানে বৈশাখের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। পুরোনোকে ভুলে নতুনকে আলিঙ্গন করার দিন।

শোভাযাত্রায় বসবাসরত ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও প্রথাগত নেতৃবৃন্দসহ নানা বয়সের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজ নিজ ঐতিহ্যের পোষাক পরিধান করে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
প্রতি বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে চলে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবার পান্তা-ইলিশ, সাথে থাকে শুকনো মরিচ পোড়া দিয়ে আলু ভর্তা। একই সাথে চলে রাজারমাঠে পাহাড়ি-বাঙালি শিশু-কিশোর ও শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

শিশু একাডেমিতে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। রাজার মাঠে বলিখেলা। চলে মহিলাদের দাড়িয়াবান্দা খেলা, বালক-বালিকাদের মোরগ লড়াই প্রতিযোগিতা চলে। সব শেষে র‌্যাফেল ড্র এর মাধ্যমে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

পাহাড়-হ্রদ আর অরণ্যের শহর বান্দরবান-রাঙামাটি-খাগড়াছড়িতে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের উৎসব, পাহাড়িদের প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি’। চাকমাদের ভাষায় এ উৎসবকে বিঝু, ত্রিপুরাদের ভাষায় বৈসুক ও মারমাদের ভাষায় সাংগ্রাই, তংচঙ্গ্যাদের ভাষায় বিষু, অহমিয়াদের ভাষায় বিহু নামে আখ্যায়িত করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ১৩টি জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রধান তিন সম্প্রদায়ের প্রাণের এই উৎসবের নামের আদ্যাক্ষর নিয়েই তাই এই উৎসবকে অনেকেই ‘বৈসাবি’ নামে অভিহিত করে থাকে।

তবে প্রতিটি সম্প্রদায়ই নিজ নিজ নামে অভিহিত করে নিজস্ব উৎসবকে। প্রতি কছর তিন থেকে পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবের প্রথম দিনকে চাকমা ভাষায় ‘ফুল বিঝু’, দ্বিতীয় দিনকে ‘মূল বিঝু’ আর তৃতীয় দিনকে ‘নুয়াবঝর’ বা ‘গোজ্যা পেজ্যা দিন’ বলা হয়। এভাবেই ত্রিপুরারা প্রথম দিনকে ‘হারিবুইসুক’, দ্বিতীয় দিনকে ‘বুইসুকমা’, ও তৃতীয় দিনকে ‘বিসিকাতাল’ ম্রো সম্প্রাদায় বর্ষবরণ তাদের ভাষায় চাংক্রান আর মারমা সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ উৎসবকে সাংগ্রাই বলে নামে অভিহিত করে থাকে।

সাংগ্রাই: বৈসাবি উৎসবের ‘সা’ আদ্যাক্ষরটি পাহাড়ের অন্যতম নৃ-গোষ্ঠি মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ উৎসব থেকে নেওয়া। মারমাদের অন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব হলো ‘মাহা সাংগ্রাইং’। মারমারা সাধারণত চান্দ্রমাস অনুসারে এ দিনটি পালন করে থাকে। বছরের শেষ দুই দিন ও নববর্ষের প্রথম দিন- এ তিন দিন পালিত হয় এই উৎসব। সাংগ্রাই উৎসব উদ্যাপনের সময় মারমা যুবক-যুবতীরা পিঠা তৈরি করার জন্য চালের গুঁড়া প্রস্তুত করে। এ সময় ‘পানিখেলা’ জলকেলী হয়। এই খেলার সময় এক জায়গায় পানি ভর্তি রেখে যুবক-যুবতীরা একে অন্যের দিকে পানি ছুড়ে মারে। স্নিগ্ধতায়, ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায় ভিজিয়ে দেয় পরস্পরকে। এ ছাড়া এ দিন মারমারা বৌদ্ধমন্দিরে গিয়ে ধর্মীয় বাণী শ্রবণ করে। চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে সাংগ্রাই উৎসব পালন করা হয় বলে ধারণা করা হয়। সংক্রান্তি শব্দ থেকেই সাংগ্রাই শব্দটি এসেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বৈসাবি উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হলো মারমা তরুণ-তরুণীদের পানিখেলা বা জলকেলী। মারমারা উৎসব উদ্যাপন পরিষদ ও বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রতিবছর মারমা অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় এই পানি উৎসব পালন করে থাকে।

বুদ্ধমূর্তি স্নান: মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় বর্তমান মায়ানমারের আকিয়াব রাজ্যের কিয়কটো শহরে তাঁর একটি মূর্তি নির্মাণ করা হয়। পরে এই মূর্তির অংশ বিশেষ দিয়ে তৈরি অনেকগুলো মূর্তি বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। বোমাং রাজারা ১৮১৪ সালে এর একটি বান্দরবান নিয়ে এসে জেলা সদরের রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে অধিষ্ঠান করা হয়। সে বছর থেকেই এই বুদ্ধমূর্তিকে স্নান করানোর রীতি প্রচলিত হয়ে আসছে। পুরোনো বছরের সব গ্লানি মুছে দিয়ে নতুন বছরকে আবাহনের লক্ষ্যে প্রথমে ‘আসাং ম্রো বা জীবন্ত বুদ্ধমূর্তিকে স্নান করানো হয়। প্রতি বছর উজানী পাড়াস্থ সাঙ্গু নদীর চরে অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র বুদ্ধমূর্তি স্নান। রাজগুরু উপসানালয় হতে

সারিবদ্ধভাবে বৌদ্ধধর্মীয় গুরুরা (ভান্তেরা) কষ্টিপাথর ও স্বর্ণের বৌদ্ধমূর্তি সহকারে পায়ে হেঁটে নদীর চরে গিয়ে সমবেত হন। সেখানে সম্মিলিত প্রার্থনায় বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী ও শিশু-কিশোররা অংশ নেয়। চন্দন মিশ্রিত পানি দিয়ে বুদ্ধ মূর্তি ¯œান করানো হয়। এরপর শুরু হয় তরুণ-তরুণীদের পানিখেলা বা জলকেলী।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গৌতম বুদ্ধের সময় মহেন্দ্র নামে এক রাজা ছিলেন। এই রাজার রাজ্যে প্রতিবছর সংগঠিত অমঙ্গল কর্ম থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য মহেন্দ্র গৌতম বুদ্ধের কাছে প্রার্থনা করলে বুদ্ধ রাজাকে মারমা পঞ্জির বছরের শেষ দিন মঙ্গল সূত্রের পানি পুরো রাজ্যে ছিটানোর উপদেশ দেন। বুদ্ধের উপদেশ অনুযায়ী রাজা কাজ করলে সেই বছর রাজ্যে কোনো অমঙ্গল কাজ হয়নি।

এর পরবর্তী বছর থেকে রাজকুমার তার বাবার হস্তান্তরিত কাজ সম্পন্ন করেন। এই অনুসারে মারমারা দীর্ঘকাল ধরে এই অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন। মারমা বর্ষ পঞ্জিকা অনুযায়ী বছর শেষের দুই দিন আগে বৌদ্ধ মূর্তিগুলো পানি দিয়ে গোসল করানো হয়। তাদের বিশ্বাস, এই বুদ্ধমূর্তি ধোয়া পানিগুলোর সংস্পর্শে এসে সব পানি মঙ্গল সূত্রের পানির মতো পবিত্র হয়। এই পানি দিয়ে খেলায় মেতে উঠে মারমারা।

বৈসুক: ত্রিপুরাদের ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও প্রধানতম উৎসব হলো বুইসুক বা বৈসুক। চৈত্র মাসের শেষের দুই দিন ও নববর্ষের প্রথম দিনটিসহ মোট তিন দিন ধরে পালন করা হয় এই উৎসব। চৈত্র মাসের শেষ দুই দিনের প্রথম দিনটিকে ত্রিপুরারা ‘হারি বুইসুক’ আর শেষ দিনটিকে ‘বুইসুকমা’ বলে থাকে। আর নববর্ষের প্রথম দিনটিকে তারা বলে ‘বিসিকাতাল’। উৎসবের প্রথম দিন ত্রিপুরা ছেলেমেয়েরা গাছ থেকে ফুল তোলে। ফুল দিয়ে ঘর সাজায়। কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করে। ঝুঁড়িতে ধান নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে মোরগ-মুরগিকে ছিটিয়ে দেয়। গৃহপালিত সব প্রাণীকে খুব ভোরে ছেড়ে দেয়। পরিচ্ছন্ন কাপড়চোপড় পরে ছেলেমেয়েরা গ্রামের ঘরে ঘরে ঘুরে বেড়ায়। ছেলেমেয়েদের বিচিত্র পিঠা আর বড়দের মদ ও অন্যান্য পানীয় পান করানো হয়। বৈসুক শুরুর দিন থেকে ‘গরাইয়া’ নৃত্য দল গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রতি ঘরের উঠানে নৃত্য করে। এই আনন্দদায়ক ও চিত্তাকর্ষক নৃত্যকে ত্রিপুরারা গরাইয়া নৃত্য বা খেরেবাই নৃত্য বলে থাকে। এই নৃত্য ২২টি অসাধারণ মুদ্রায় সৃষ্টি করা হয়। এই নৃত্য দলের শিল্পীদের একজনের কাঁধে বাঁধা শূলে থাকে একটি খাদি। যদি কোনো ঘরের উঠোনে এই শূলটি বসানো হয়, তবে ঘরের মালিককে গরাইয়া দেবতার পূজা দিতে হয়। এভাবে প্রতি ঘরের উঠানে নৃত্য শেষে শিল্পীদের মদ, মুরগির বাচ্চা, চালের বিনিময়ে শিল্পীরা সুর করে সেই গৃহস্থকে আশীর্বাদ করে। নৃত্যশেষে শিল্পীরা উপঢৌকন হিসেবে পাওয়া সামগ্রী দিয়ে গরাইয়া দেবতার পূজা করে। কোনো শিল্পী যদি একবার এই গড়াইয়া নৃত্যে অংশ নেন, তবে তাঁকে তিন বছর পর পর এই নৃত্যে অংশ নিতে হয়, নতুবা তাঁর অমঙ্গল এমনকি মৃত্যু হয় বলে ‘ত্রিপুরা মিথ’ আছে। এই লোকনৃত্যটিতে ১৬ থেকে ১০০-১৫০ এমনকি ৫০০ জন পর্যন্ত অংশ নিতে পারে। বৈসুক উৎসবের জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় নৃত্যটি দেখার জন্য প্রতি বৈসুকে সারা দেশের শত শত সংস্কৃতিকর্মী ও শিল্পী পার্বত্য চট্টগ্রামে আসেন।

বিঝু: পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় নৃ-গোষ্ঠি হলো চাকমা। বিঝু তাই এখানে এনে দেয় এক অন্য রকম অনুভূতি আর মোহনীয় আবেশের দ্যোতনা। এই উৎসবের সঙ্গে তাই যেন দুলে ওঠে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম। উৎসবের প্রথম দিনকে চাকমারা বলে ‘ফুলবিঝু’। এ দিন বিঝুর ফুল তুলে ঘর সাজানো হয়। পরে সে ফুল দিনান্তে ভাসিয়ে দেয়া হয় নদীতে। বিঝুর সময় ছোট ছেলেমেয়েরা পরিচ্ছন্ন কাপড় পরে দলবেঁধে বাড়ি বাড়ি বেড়াতে যায়। তারা সবাই বয়স্কদের সালাম করে এবং ঘরের হাঁস-মুরগিকে ধান-চাল খাওয়ায়। এ সময় ঘরে ঘরে রান্না করা হয় ‘পাঁচন’ নামের এক বিখ্যাত খাবার। গ্রাম্য ছেলেমেয়েরা গিলাখেলা, গুদু (হাডুডু) খেলায় মেতে ওঠে আর আকাশ প্রদীপ জ্বালায় এবং বাজি ফোটায় মহানন্দে। বয়স্করা মদ ‘জগরা’ বা ‘কাঞ্জি’ পান করে। নববর্ষের দিন মাছ-মাংসসহ মজার মজার খাবারের থাকে আয়োজন। কেননা এই দিন ভালো কিছু খেলে সারা বছর ধরে ভালো খাবার জুটবে বলে তারা বিশ্বাস করে।

চাংক্রান: ম্রো সম্প্রাদায় বর্ষবরণ বা বৈসাবি উৎসব পালন করে। ম্রোরা নববর্ষকে তাদের ভাষায় চাংক্রান বলে। বাঁশির সুরের মূর্ছনায় ঢাকঢোল ও বাদ্য বাজনার তালে তালে দল বেঁধে লোকনৃত্যে মাতিয়ে তোলে ম্রো তরুণ-তরুণীসহ নারী-পুরুষেরা। লোকনৃত্য, কোমর তাঁত বুনন, পুতির মালা গাঁথা ও পিঠা তৈরির প্রতিযোগিতার আয়োজন চলে। ম্রোদের ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে জেলার বিভিন্ন পাড়া থেকে দল বেঁধে শত শত যুবক-যুবতী নারী-পুরুষ সদর উপজেলার নির্দিষ্ট একটি এলাকায় উৎসবে মেতে উঠে। শক্তি ও কৌশল খাটিয়ে বাঁশ নিয়ে এক পাড়ার সাথে অন্য পাড়ার যুবক ও বিবাহিতদের চলে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। এ উৎসব পরিণত হয়েছে ম্রো সম্প্রদায়ের মিলন মেলা।

ম্রো যুবকরা তাদের ঐতিহ্যবাহী সাজ-পোশাকে পরে মুখে ঠোঁটে টকটকে লাল রং লাগিয়ে আর মাথায় খোপায় ও কানে পাহাড়ী ফুল গুজে উৎসবে আসে। আর যুবতীরা হাতে রূপার কাঁকন, পায়ে বালা ও গলায় রংবেরং এর পুতির মালা ও রূপার তৈরি গলা থেকে কোমর পর্যন্ত চেইন পরিধান করে চুলের খোপায় রংবেরং এর ফুল গুজে মুখে বিভিন্ন ধরনের প্রসাদনী লাগিয়ে রংবেরং পোশাকে উৎসব পালনে জড়ো হয়। ঐতিহ্যবাহী টাকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

উৎসব উদযাপন পরিষদ এবং বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটের যৌথ আয়োজনে চলে এ উৎসব। সবশেষে ম্রোদের গো হত্যা, যুবক-যুবতী, নারী-পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী নাচ।
তঞ্চঙ্গ্যা জনজাতির বিষু উৎসব উপলক্ষ্যে ঘিলা খেলা চলে সারা রাত।

প্রতি বছরই ঘুরেফিরে আসে বিঝু, বিহু, বিষু, সাংগ্রাই উৎসব। পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণের আবেশ। নব-আনন্দে জাগে পাহাড়ের প্রাণ। পার্বত্যাঞ্চলজুড়ে শুরু হয় এক মহামিলনের মেলা। বৈসাবি উৎসব হয়ে ওঠে তাই পাহাড়ের প্রাণের উৎসব।

চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন এই উৎসবকে বিঝু, মারমারা সাংগ্রাই এবং ত্রিপুরারা বৈসু বা বৈসুক বলে। ত্রিপুরাদের বৈসুর (বৈ), মারমাদের সাংগ্রাইয়ের (সা) চাকমাদের বিঝুর (বি) থেকে পাহাড়ের এই উৎসবকে সম্মিলিতভাবে বৈসাবি বলে অবহিত করা হয়।

 

সূত্র: পাক্ষিক পার্বত্যনিউজ, বর্ষ ১, সংখ্যা ৪ ও ৫।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন