পাহাড়ে উন্নয়নের মতো পূনর্বাসনেও বৈষম্য চলছে: লংগদু থেকে দুরছড়ি বাজার
তাজুল ইসলাম নাজিম
তিন পার্বত্য জেলায় আঞ্চলিক তিনটি সশস্ত্র গ্রুপের চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, গুম, হত্যা ইত্যাদি অনৈতিক কাজ একটি নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি অত্র এলাকার জনগণের কাছে পরিচিত একটি বিষয়। অস্ত্রের মুখে ঐ তিনটি দলই সাধারণ জনগণ, বাজার, ঠিকাদার, সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন উন্নয়ণমূলক কর্মকাণ্ড এবং প্রত্যেক স্তরে নির্দিষ্ট অংকের (মাসিক/বাৎসরিক) চাঁদা প্রতিনিয়ত আদায় করে থাকে।
প্রতি বছরই এই চাঁদার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং সে কারণে সাধারণ জনগণ তিনটি আঞ্চলিক দল ও তাদের পোষ্য অস্ত্রধারী ক্যাডার/সন্ত্রাসীদের উপরে বীতশ্রুদ্ধ। অন্যান্য এলাকার মত রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার দূরছড়ি বাজারও এই চাঁদাবাজির বাইরে নয়। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহত্তম বাজার। এই বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী বাঙালী। প্রতিবছর এখানেও তিনটি আঞ্চলিক সশস্ত্র দল চাঁদা আদায় করে থাকে।তবে গত বৎসর ছিল একটু ব্যতিক্রম।
ঘটনার বর্ণনায় ভূক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের শুরুতে হঠাৎ করেই তিনটি দলই তাদের ধার্য্য বাৎসরিক চাঁদার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে জেএসএস (সন্তু)। জেএসএস (সন্তু) পূর্বের তূলনায় তাদের চাঁদা বাড়িয়ে ৮ লক্ষ টাকা দাবী করে। স্থানীয় চীফ কালেক্টর নির্ভীক চাকমা গত ১০ আগস্ট ২০১৬ তারিখে যৌথবাহিনী কর্তৃক আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার হওয়ার পর নতুন নিয়োগকৃত চীফ কালেক্টর গতি বাবু (০১৮২৮-১২৫৪৬৩) উক্ত চাঁদা দাবী করে এবং বাজারে না এসে বাজার কমিটি কর্তৃক চাঁদা উত্তোলনপূর্বক তাদের কাছে দিয়ে আসতে বলে। বাজার কমিটি বিশাল অংকের চাঁদা প্রদানে অক্ষমতার কারণে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে সমঝোতা করতে চাইলেও জেএসএস (সন্তু) দল তাতে রাজি হয়নি। উপরন্তু বাজার কমিটিকে বারংবার চাপ ও হুমকি দিতে থাকে।
ঘটনাচক্রে ৩০ জুলাই ২০১৬ তারিখে রুয়েল চাকমা নাম এক যুবক বাজারে সংঘটিত একটি তুচ্ছ ঘটনায় একজন আনসার সদস্যের সাথে বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও বাজার কমিটি দূরছড়ি ক্যাম্পের স্মরণাপন্ন হলে মিমাংসা চলাকালীন সময় কোনরূপ সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই সুবীর অমরসেন চাকমা নামে এক বখাটে যুবক ক্যাম্পে ডিউটিরত একজন রেজিমেন্টাল পুলিশকে আক্রোশের বশবর্তী হয়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এ ঘটনার পর অমরসেন চাকমাকে স্বাভাবিক নিয়মে দূরছড়ি বাজার ডিপি ক্যাম্পের পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয় এবং পরবর্তীতে তার নামে বাঘাইছড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
অন্য কোন উপজীব্য (ইস্যু) না পেয়ে উপরোক্ত ঘটনাকে উপজীব্য (ইস্যু) করে ঐদিন থেকে স্থানীয় সাধারণ ও নিরীহ পাহাড়ী জনগোষ্ঠীকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে তাদেরকে হুমকির মাধ্যমে দুস্কৃতিকারী অমরসেন চাকমার মুক্তির দাবীতে দূরছড়ি বাজার বয়কট করা হয়। সাধারণ জনগণের বাজারে আসার ইচ্ছা ও প্রয়োজন থাকলেও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা বাজারে আসার সাহস পায়নি। ফলে এক নিদারুণ ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয় পাহাড়ী-বাঙ্গালী জনসাধারণ।
ভূক্তভোগীরা বাজার চালুর ব্যাপারে যোগাযোগ করলে পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ অমরসেনের মুক্তির পূর্বে বাজার চালু হবে না বলে স্রেফ জানিয়ে দেয়। হয়েছেও তাই। অমরসেন চাকমা জেল থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত ১৭ নভেম্বর ২০১৬ তারিখ পর্যন্ত (প্রায় ৩ মাস ১৯ দিন) অত্র এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণ কেন্দ্র দূরছড়ি বাজারটি বন্ধ থাকে। অথচ বিষ্ময়ের ব্যাপার হল, অমরসেনের গ্রেফতারের সাথে বাজার বয়কটের কোন সম্পর্ক নেই।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৬০ সাল হতে দূরছড়ি বাজার রহস্যজনকভাবে তিন/চার বার পুড়ে যায়। বাজার বয়কট থাকা অবস্থায় গত ২০ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে বাজারের সুমল দে নামক এক ব্যক্তির লেপের দোকান থেকে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে যার ভয়াবহতা অতীতের রেকর্ডস ছাড়িয়ে যায়। উক্ত অগ্নিকান্ডে ১৭২ টি দোকান এবং ১০০ জন ভাড়াটিয়া দোকানদারের মালামাল সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়। দোকান এবং বাড়ী-ঘর পুড়ে যাওয়ায় আনুমানিক ৪০ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়।
রহস্যজনক বলা হচ্ছে এ কারণে যে, দোকান পুড়ে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা গণমাধ্যমকে বলেছিল, “ক্ষতিগ্রস্ত কাপড় ব্যবসায়ী স্নেহাংশু দে জানান, তাঁর তিনটি দোকান ভষ্মিভূত হয়েছে। তিনি আরো জানান, তাঁর দোকানের পাশ্ববর্তী শিমুল দে এর লেপের দোকান থেকে অগ্নিকান্ড ঘটেছে। ঐ সময় শিমুল দে আগুন, আগুন বলে চিৎকার না করেই এবং দোকানদারগণকে না জানিয়ে তার দোকানে তালা লাগিয়ে তার স্ত্রীকে নিয়ে মোটর সাইকেলে করে পালিয়ে যায়। উপস্থিত অনেকেই বলেন, অগ্নি দূর্ঘটনার পূর্বেই তার দোকানের তিনশ পিস লেপ-তোষক অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছিল। শিমুলদেকে ঐদিন পাওয়া যায়নি। কোথায় আছেন তাও কেউ বলতে পারেনি। তাছাড়া অগ্নিকাণ্ডের প্রায় তিন মাস পূর্ব থেকেই উপজাতীয় জনগন দুরছড়ি বাজারটি বয়কট করায় বন্ধ ছিল।
শিমুল দে কী ভয়ে পালিয়েছেন ? না কী পালিয়ে যাওয়ার পিছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে ? জনমনে এখন এই প্রশ্ন জেগেছে। এই বিষয়ে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে কী? তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। নতুবা ভবিষ্যতে আরো বিরাট ক্ষতির আশংকা থেকে যাবে।”(দেখুন- ‘দুরছড়ি বাজারে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন’ পার্বত্যনিউজ, ২৬ অক্টোবর, ২০১৬)।
এবিষয়ে একই গণমাধ্যমে অন্য একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, “স্থানীয় ইউপি মেম্বার অলিন্দু চাকমা জানিয়েছেন, স্থানীয় ব্যবসায়ি সুবল দে’র লেপ তোষকের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তিনি জানান, আমি নিজেই প্রত্যক্ষ করেছি যে, আগুন লাগার সাথে সাথেই সুবল নিজ মোটর সাইকেল নিয়ে বাঘাইছড়ির দিকে পালিয়ে যাচ্ছিলো।
নিজের দোকান পুড়ে যাচ্ছে অথচ সে পালিয়ে যাচ্ছে এটা সন্দেহের সৃষ্টি করেছে অনেকের কাছে। সুবলের পিতার নাম বিন্দু দে। সে নিজে একাই থাকতো এখানে। দোকানটি ছাড়া তার কোন আত্মীয়-স্বজনও এ এলাকায় থাকেনা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাই স্থানীয়দের ধারনা তাকে দিয়েই হয়তো তৃতীয় পক্ষের কেউ পরিকল্পিতভাবে অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছে দূরছড়ি বাজারের বাসিন্দাদের।
তবে স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে আরও রহস্যজনক ব্যপার হল, গত কিছুদিন ধরেই এ বাজারের উপজাতীয় দোকানদাররা গোপনে তাদের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়া শুরু করেছিল। অনেকেরই আশঙ্কা হয়েছিল শীঘ্রই হয়তো কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে বাঙ্গালীদের আধিক্যের এই বাজারে। এতেই অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনাকে পরিকল্পিতই মনে করছেন সচেতন মহল। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার আগুন লাগিয়ে পুরো বাজারটিকে পুড়ে ধ্বংস লীলায় পরিণত করা হয়েছে ” (দেখুন- রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে বাঘাইছড়ির আড়াইশ স্থাপনা ছাই: নিহত ১, ক্ষতি ৩০ কোটি টাকা। পার্বত্যনিউজ, ২০ অক্টোবর, ২০১৬ দ্রষ্টব্য)।
কিন্তু এ অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে কোন মামলা বা তদন্ত কমিটি গঠনপূর্বক অগ্নিকাণ্ডের কারণ বের করার কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি আরো রহস্যজনকভাবে। তাই শিমুল দের এই রহস্যজনক আচরণের কারণ আজো জানা যায় নি।
এছাড়াও দুরছড়ি বাজারে অগ্নি দূর্ঘটনার সময় ব্যবহারের জন্য পানির হাউজ নাই এবং যে দুটি সেচ যন্ত্র ছিল তন্মধ্যে একটি বিকল ছিল । তাছাড়া দুরছড়ি বাজারের সংযোগ সড়কে ছোট্ট ব্রীজের উপর দিয়ে ফায়ার বিগ্রেড এ গাড়ি যাতায়তের সমস্যার কারণে খাগড়াছড়ি থেকে ফায়ার বিগ্রেডের গাড়ি সময় মত এসেও বাজারে প্রবেশ করতে পারেনি। যার ফলে এক ঘন্টার মধ্যে সমস্ত বাজারটি জ্বলে যায় বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ আনসার সহ স্থানীয় জনগণ এবং বাঁশ চালি পরিবহন শ্রমিক দলের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে। সামান্য কিছু অংশ অগ্নি দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছিল।
ঘটনার দিনই তাৎক্ষণিকভাবে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম তালুকদারের নির্দেশে ত্রাণকেন্দ্র খুলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী (জন প্রতি ২০ কেজি খাদ্যদ্রব্য) বিতরণ করা হয়। পরবর্তীতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, রাঙ্গামাটি এবং জেলা প্রশাসক, রাঙ্গামাটি উক্ত অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক যৎসামান্য আর্থিক সহায়তা (জন প্রতি ৪ হাজার টাকা ও সামান্য বস্ত্র এবং চাল-ডাল) প্রদানপূর্বক খুব শীঘ্রই ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ পূনর্বাসন/বাজার নির্মাণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন।
বাজারের সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায় যে, ভূক্তভোগীদের দাবীর প্রেক্ষিতে প্রতিটি দোকানের জন্য ৬ লক্ষ ৩৬ টাকা ধার্য্য করে জেলা প্রশাসক অফিস থেকে একটি প্রক্কলন পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বাজার কমিটির সভাপতি মো. আবুল খায়ের জানান যে, আর্থিক অনুদানের বিষয়ে তারা (বাজার কমিটি) তিনবার জেলা প্রশাসকের স্মরণাপন্ন হলে তিনি এ বিষয়ে তার কিছু করার নেই বলে জানান।
উল্লেখ্য জেলা প্রশাসক বাজার কমিটিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। সে মতে, গত ১৫ অক্টোবর ২০১৭ তারিখ বাজার কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব নববিক্রম ত্রিপুরার সাথে দেখা করেন। সচিব তাদেরকে জানান যে, পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিষয়ক প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছেন।
অন্যান্য এলাকার মতই পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময় যে কোন প্রকার দূর্ঘটনা ঘটলে সরকার এবং বিদেশী বিভিন্নস দাতা সংস্থা ও এনজিও থেকে যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করা হয়। বিশেষ করে পাহাড়ী বা কোন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ক্ষেত্রে এধরণের ক্ষতির বিষয়ে ব্যাপক ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে।
দূরছড়ি বাজারের ক্ষতিগ্রস্তরা উদাহরণ হিসাবে বলেন যে, সাম্প্রতিককালে পার্শ্ববর্তী লংগদু উপজেলায় ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সরকার, বিভিন্ন দাতাও এনজিও সংস্থা, ব্যক্তি, মানবাধিকার সংস্থা এবং সমতল/পাহাড়ী সংগঠনসমূহ ইতিমধ্যে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ ও নগদ অর্থ প্রদান করেছে তা উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারণকৃত ক্ষতির চেয়ে কয়েকগুণ বেশী। ভবিষ্যতে তারা আরো সহায়তা পাবে বলে নিশ্চিত আশা করছে। এ পর্যন্ত গড়ে এক একটি পরিবার লক্ষাধিক টাকা ত্রাণ পেয়েছে। এছাড়াও সরকার কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গৃহ নির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিটি বাড়ির জন্য ৫ লক্ষ২৫ হাজার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যার নির্মাণ কাজ শীঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে। ভূক্তভোগী পাহাড়ীরা সরকার ও অন্যান্য সংস্থা হতে ব্যাপক আর্থিক সহায়তা পাওয়ায় বেজায় খুশি।
বাজার ব্যবসায়ী বাঙ্গালীদের বক্তব্য হল, উপরোক্ত বিষয়ে বিভিন্ন মহলের সাহায্য নিয়ে তাদের কোন ক্ষোভ/ঈর্ষা নেই, ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পাবেন-এটাই স্বাভাবিক। আশ্চর্যজনকভাবে দূরছড়ি বাজারের দোকানপাট ছাড়াও ভাড়াটিয়াদের দোকানের বিপুল পরিমাণ মালামাল পুড়ে গেলে কোন কোন দোকানের ক্ষতির পরিমাণ ১৫/২০ লক্ষ টাকা হলেও কোন পক্ষ থেকেই এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোন সাহায্য সহযোগিতা/আর্থিক অনুদানের বিষয়টির অদ্যাবধি কোন প্রকার অগ্রগতি হয়নি। ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে দারুণ হতাশা বিরাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সরকার ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, পক্ষপাতিত্ব, একচোখানীতি তাদেরকে বিক্ষুব্ধ করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায় যে, তারা নিজস্ব অর্থায়নে, ধার করে, জমি/গবাদি পশু বিক্রি করেও চড়া সুদে ঋণ করে নিজেদের মত করে ঘর/দোকান তৈরী করে বাজার চালু করলেও সার্বিক বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয়। দোকান মালিকরা এখনো তাদের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ব্যবসা ও জীবনযাপন স্বাভাবিক করতে পারেনি।
দূরছড়ি বাজার অত্র এলাকার সবচাইতে বড় ও ঐতিহ্যবাহী বাজার। তাই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রাখতে এবং পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বাজারটির পূণঃনির্মাণ/ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রদান অত্যন্ত জরুরী। ভূক্তভোগী এবং ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের ক্ষতি পূরণের বিষয়ে সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।