Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

পার্বত্যমন্ত্রী হিসেবে দাদাকেই উপযুক্ত মনে করে রাঙামাটিবাসী

ইউসুফ হায়দার::

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে রাঙ্গামাটিবাসীর কাছে দাদা হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি দীপংকর তালুকদারই উপযুক্ত ব্যক্তি। প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন তিনি উপযুক্ত? উত্তর দেয়ার আগে প্রেক্ষাপটটা বলতে চাই। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি সম্পাদনের পর, চুক্তির আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার। তখন তিন পার্বত্য জেলার তিনটি আসন থেকেই নির্বাচিত তিনজন সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের। তাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কল্পরঞ্জন চাকমা। বয়োজ্যেষ্ঠতা এবং অভিজ্ঞতা বিবেচনা করেই পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রথম মন্ত্রী করা হয়েছিল কল্পরঞ্জন চাকমাকে।

২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসার পর এ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী করা হয় রাঙ্গামাটি থেকে বিএনপির টিকিটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মনিস্বপন দেওয়ানকে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সে সময় রাঙ্গামাটি থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। এর পর দশম সংসদ নির্বাচনের পর বান্দরবান থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। একই ধারাবাহিকতায় এবার খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়ার দাবি করতেই পারেন। অন্যদিকে বান্দরবান থেকে টানা ছয়বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর, যিনি দশম সংসদে এ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি এবার পূর্ণ মন্ত্রী হওয়ার দাবি করলে সেটাও অযৌক্তিক হবে না। কিন্তু সেসব দাবি বিবেচনায় রেখেও আমরা কেন মনে করছি যে, রাঙ্গামাটি থেকে নির্বাচিত দীপংকর তালুকদারই এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে বেশি উপযুক্ত? কারণ:

১. মানুষ দীপংকর দাদাকেই চায়: গত সোমবার (৩১ ডিসেম্বর ২০১৮) সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে পার্বত্যনিউজ.কম-এর ফ্যান পেইজে আমরা একটি জরিপ চালু করেছিল। খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যদায় টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান আছেন, তাই এই পোলে বীর বাহাদুর এবং দীপংকর তালুকদারের মধ্যে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিন পার্বত্য জেলার মানুষ কাকে দেখতে চান সেটা জানার চেষ্টা করে। শুক্রবার (৪ জানুয়ারি ২০১৯) সন্ধ্যা পর্যন্ত পোলের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, পোলে অংশ নেয়া ৪৭ শতাংশ মানুষ বীর বাহাদুরের পক্ষে রায় দিয়েছেন, অন্যদিকে দীপংকর তালুকদারের পক্ষে রায় দিয়েছেন ৫৩ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষের প্রত্যাশা দীপংকর দাদাকেই এবার পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হোক। পার্বত্যনিউজ.কম-এর ফ্যান পেইজের অনুসরণকারী মানুষের সংখ্যা আড়াই লাখের বেশি। আর তারা নির্দিষ্ট কোনো দল বা মতের অনুসারীও নয়। এখানে সব মত এবং পথের অনুসারীই আছেন। তাই তাদের মধ্য থেকে আসা এ মতামত একেবারে গুরুত্বহীন নয়।

২. দীপংকর তালুকদার জনপ্রিয় এবং দক্ষ সংগঠক: দশম সংসদ নির্বাচনে দীপংকর তালুকদার আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএস-এর প্রার্থী ঊষাতন তালুকদারের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। ফলে আন্তরিক হওয়ার পরও আয়তনের দিক থেকে দেশের বৃহত্তর জেলা রাঙ্গামাটিবাসীর যথাযথ উন্নয়নে তিনি ভূমিকা রাখতে পারেননি। কারণ ক্ষমতায় থেকেও যেখানে দলের নেতাকর্মী এবং জনগণের চাহিদা মেটাতে অন্যদের হিমশিম খেতে হয়, সেখানে তিনি ক্ষমতায় না থেকেও এটা করা তো প্রায় অসম্ভব একটি কাজ ছিল। তারপরও গত পাঁচটি বছর তিনি জনগণের উন্নয়ন চাহিদা এবং নেতাকর্মীদের চাহিদার সমন্বয় করে এসেছেন দক্ষতার সাথে। একই সাথে নেতাকর্মীদের মধ্যে নিজের প্রভাব এবং ভাবমর্যাদা এতটাই উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, যেখানে অন্যকেউ তাঁর নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস দেখানোরও সুযোগ হয়নি। যার প্রমাণ ক্ষমতাসীন অনেক মন্ত্রী এবং এমপির বিরুদ্ধে এবার একাধিক ব্যক্তিকে দলের নমিনেশন ফরম কিনতে এবং জমা দিতে দেখা গেছে, কিন্তু দীপংকর তালুকদারকে চ্যালেঞ্জ করে রাঙ্গামাটি থেকে আওয়ামী লীগের অন্যকেউ নমিনেশন ফরম পর্যন্ত নেননি। তাই এমন একজন দক্ষ এবং জনপ্রিয় ব্যক্তির হাতেই এবার পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বেশি মানানসই হতে পারে।

৩. তিনি অসাম্প্রায়িক এবং উদার মনের মানুষ: দীপংকর তালুকদারকে রাঙ্গামাটিবাসী দীর্ঘদিন থেকে একজন অসাম্প্রদায়িক ভাবমর্যাদার মানুষ হিসেবেই চেনে। এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে এবার তিনি যেটা করেছেন সেটা অবশ্যই এখানে তুলে ধরার দাবি রাখে। সাধারণত দেখা যায়, নির্বাচনের পূর্বে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে ভোটারদের মধ্যে নিজের ইতিবাচক মনোভাবের বার্তা অনেকেই দিতে চান। কিন্তু নির্বাচনের পর পরাজিত প্রার্থীদের বাসায় গিয়ে দেখা-সাক্ষাৎ করা বা তাদের সাথে সৌজন্য বিনিময় করার ঘটনা তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। দীপংকর তালুকদা এবার সেটা করেই নিজের উদার মনের পরিচয়টি আরো পোক্ত করেছেন। নির্বাচনে জয়লাভের পর তিনি রাঙ্গামাটি ডিসিবাংলো এলাকায় বিএনপির প্রার্থী মনিস্বপন দেওয়ানের বাসায় যান, ফুল ও মিষ্টি দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তাকে শুভেচ্ছা জানান। এর পর জাতীয় পার্টির প্রার্থী পারভেজ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী জসীমউদ্দিন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী জুই চাকমার বাসায় যান। তবে ঊষাতন তালুকদার বাসায় না থাকায় তার সাথে দেখা হয়নি। সে যাইহোক, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দীপংকর তালুকদার যে উদারতা ও বিনয়ের পরিচয় দিয়েছেন, আশা করি, তাকে পার্বত্য মন্ত্রী করা হলে তিনি এই উদারতা পার্বত্য তিন জেলাবাসীর প্রতিই অব্যাহত রাখবেন।

৪. পার্বত্য এলাকার সুষম উন্নয়নের স্বার্থে দাদাকে প্রয়োজন: পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়টি একটি অঞ্চলভিত্তিক মন্ত্রণালয়। এর আওতাধীন তিনটি জেলা হচ্ছে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি। ভৌগোলিক দিক থেকে রাঙ্গামাটির অবস্থান মধ্যস্থলে। রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান যাওয়া-আসা যতটা সহজ বান্দরবান কিংবা খাগড়াছড়ি থেকে বাকী দুই জেলায় আসা-যাওয়া ততটা সহজ নয়। এ কারণেই দীপংকর দাদাকে মন্ত্রী করা হলে তিনি যত সহজে বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি আসা-যাওয়া করতে পারবেন, তেমনি বাকী দুই জেলার জনগণও তাদের প্রয়োজনে রাঙ্গামাটি আসতে পারবেন। অন্য কোনো জেলা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হলে যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এটা যে কতটা বাস্তব সত্য তা গত পাঁচ বছরে রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়িবাসী হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। বান্দরবান জেলায় গত কয়েক বছরে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে এবং হচ্ছে বলে সম্প্রতি পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর একজন স্টাফ দাবি করেছেন তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে। কিন্তু একই সময়ে খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটি মিলিয়ে তার চারভাগের একভাগ প্রকল্প বরাদ্দ হয়েছে কিনা সন্দেহ আছে। শুধু তাই নয়, দশম সংসদের পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী তার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলায় কয়বার সফর করেছেন সেটাও হাতে গোনে বলে দেয়া যাবে। এ অবহেলার পেছনে কী কী কারণ আছে তা হয়তো সব বলা সম্ভব নয়। তবে এটাও সত্য যে, ভৌগোলিক অবস্থানগত দূরত্বের কারণেও মন্ত্রীর সাথে বাকী দুই জেলার মানুষের যোগাযোগ কিছুটা কঠিন ছিল, মন্ত্রীর পক্ষেও বান্দরবান থেকে অন্য দুই জেলাতে আসা-যাওয়াটা বাড়ানো সম্ভব হয়নি। ফলে একধরনের যোগাযোগহীনতা থেকেই বঞ্চনার শিকার হয়েছে বাকী দুই জেলা। আশা করি, এই যোগাযোগহীনতা থেকে মুক্তি দিয়ে পার্বত্যবাসীর সুষম উন্নয়নের স্বার্থে এবার দীপংকর তালুকদারকে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হবে।

আসলে কাকে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হবে, আর কাকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হবে না, সেটা নির্ধারণের একমাত্র এখতিয়ার সরকার প্রধান শেখ হাসিনার। তারপরও আমরা দীপংকর তালুকদারকে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করার ব্যাপারে যৌক্তিকতা তুলে ধরছি। আশা করি, পার্বত্যবাসীর সুষম উন্নয়নের স্বার্থেই বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে।

লেখক: সাংবাদিক


মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার বক্তব্য ও বিষয়বস্তু একান্তই লেখকের। পার্বত্যনিউজের সম্পাদকীয় নীতি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন