পানছড়ির মায়াবীনি’র রূপে মুগ্ধ দর্শনার্থী
পানছড়ি প্রতিনিধি:
মুহাম্মদ আবুল হাশেমের বাড়ি মহেশখালী উপজেলায়। চাকুরীর সুবাদে সুদূর ভারত সীমান্তঘেঁষা পানছড়ি উপজেলায় আগমন। নতুন কর্মস্থলেই এসেই অত্র উপজেলাকে করে তুলেছে প্রাণ চাঞ্চল্য। শিক্ষা, খেলাধুলায় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সফলতা দেখিয়ে পানছড়ির অজপাড়া গাঁ কং-চাইরীপাড়ায় গড়ে তুলেছে ভ্রমন পিপাসুদের জন্য “মায়াবীনি”। চারিদিকে পানিতে ঘেরা একটি লেকের বুক চিরে ফুটে উঠেছে কয়েকটি টিলা। মহেশখালীর সে ভদ্রলোক পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম মৎস্য অফিসের আমন্ত্রণে লেক দেখতে গিয়েই স্থানটিকে মনে আঁকড়ে ধরেন।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমার সাথে মত বিনিময় করে অতঃপর সবুজের সমারোহে বাঁশ, সেগুন ও আম্রকাননে ঘেরা এ লেকটিকে “মায়াবীনি” নামেই জেলা প্রশাসক রাশেদুল ইসলাম ও তাঁর সহধর্মীনি কার্নিছ ফাতেমা স্বর্ণার মাধ্যমে উদ্বোধন করে পদযাত্রা শুরু করান। যাত্রালগ্ন থেকেই মহেলাখালির মিষ্টি পানের মতো করে এই মিষ্টি ‘মায়াবীনি’র একটু পরশ নিতে দর্শনার্থীর মন যেন আর সইছে না। ছুটির দিন শুক্রবার ছাড়াও নিত্য জমে উঠে পর্যটকের ভিড় জমে।
মায়াবীনির আসল রূপ:- প্রাকৃতিকভাবেই দর্শনার্থীদের নজরকাড়া মায়াবীনির চারিদিক পানিতে ঘেরা। লেকের পানিতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ভেসে বেড়ানোর দৃশ্য দেখতে দারুণ। লেকের মাঝ বরাবর টিলাতে তৈরি হয়েছে বিশ্রামাগার গোলঘর। গোলঘর থেকে পাহাড়ে যাওয়ার রাস্তাগুলো প্রাকৃতিকভাবে বাঁশের সাঁকো’র তৈরি। লেকে ঘুরার জন্য রয়েছে কয়েকটি নৌকা। পড়ন্ত বিকেলে চারিদিকে নৌকায় করে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে এখন প্রায়ই নৌকা নিয়ে কাড়াকাড়ি। নৌকায় চড়ে এপার-ওপার ঘুরতে ঘুরতে আনন্দে আত্মহারা দর্শনার্থীরা বার বার ছুঁয়ে নেয় মায়াবীনির স্বচ্ছ পানির পরশ। তাছাড়া লেকের বুক চিরে ভেসে বেড়ায় হরেক রঙের হাঁসের পাল আর ডাঙায় মোরগ-মুরগি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে হাঁস-মুরগীর আপনালয়ে ফিরে আসার দৃশ্যও মনোরম। মায়াবীনি বিশ্রামাগারের উত্তরে বাঁশের সাঁকো পার হলেই সেগুনতলা। সেখানে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হয়েছে দোলনা। পাশাপাশি দুটি গাছের সাথে গাছ বেঁধে রশি ও কাঠ দিয়ে বানানো হয়েছে কয়েকটি দোলনা। কোমলমতি শিশুদের পাশাপাশি বুড়ো শিশুরাও দোলে এ দোলনায়। যার মধ্যে অন্যতম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম, অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান, প্রেসক্লাব সভাপতি নূতন ধন চাকমা, ৩নং পানছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান নাজির হোসেন, উল্টাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় চাকমা, পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুলতান মাহামুদ, উল্টাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান রফিকুল ইসলাম বাবুল, সহকারী নান্টু চাকমাসহ অনেকেই।
জানা যায়, কংচাইরী পাড়ার একঝাঁক তরুণ উদ্যোক্তা মাছ, হাঁস ও মুরগী চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষে ‘একতা সমিতি’ নামে একটি সমিতি করে লেক তৈরির উদ্যোগ নেয়। তাঁদের এ উদ্যোগে হাতে বাড়িয়ে দেয় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। সমিতির সভাপতি অংলাপ্রু মার্মা বলেন, এ সমিতির মাধ্যমে আমরা গ্রামের অসহায় লোকদের সহায়তা, শিক্ষা বৃত্তি, অসহায় ও গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তা করে যাছি। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা এ লেকটিকে পর্যটন স্পটে রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। এখনও অনেক কাজ বাকী। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ লেক জেলার সবচেয়ে বড় এবং আধুনিক পর্যটন স্পটে রূপ নিতে পারে।
পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা জানান, লেকে যাওয়ার জন্য উপজেলার এডিবি প্রকল্প থেকে সাত লাখ টাকা ব্যায়ে ৭০০ ফুট দৈর্ঘ্য পথ ইট সলিং ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। লেকটিকে পরিপূর্ণ পর্যটন স্পট করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বড় ধরনের বরাদ্ধ পেলেই তা সম্ভব। এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করা হয়েছে।
পানছড়ি প্রেসক্লাব সভাপতি নূতন ধন চাকমা জানায়, মায়াবীনির মায়ায় মুগ্ধ হয়ে দারিদ্র মাহামুদ তার ফেসবুকে এরি মাঝে উপন্যাস ২টি পর্ব পোষ্ট দিয়েছে। যার শেষান্তে লেখা রয়েছে….আরও আসছে।
এলাকাবাসীরা জানায়, প্রতিদিনই দর্শনার্থী আসে। কেউ উপভোগে কেউবা বনভোজনে। তাছাড়া এলাকার অনেক মহিলারা এখন মায়াবীনি লেকের পাড়ে পিঠা বিক্রি করছে। ছিং হল মুং, ছেস বং মুং, কেংদ মুং, রিফ্রি মুং নামীয় মারমা পিঠার রয়েছে প্রচুর চাহিদা। এর পাশাপাশি গেল ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে ষাটোর্দ্ধ আচু মারমা মনমাতানো নৃত্য মায়াবীনিকে বেশ জমিয়ে দিয়েছিল। প্রশাসনের মাধ্যমে মায়াবীনি সামনে আরো নতুন রূপ নিবে বলে তাদের ধারনা।