দুর্গতের পাশে রাঙামাটি মেডিকেলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিনিধি:
রাঙামাটির ভূমিধ্বসে মারা যায় অসংখ্য নিরীহ মানুষ, নেমে আসে বিপর্যয়। সুন্দর পাহাড়ে ঘেরা শহরটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে অন্য শহর হতে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন শহরে যেনো নেমে আসে অসভ্য কালোছায়া। স্বজনহারা, ঘরহারা মানুষরা তখন আশ্রয় নেয় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে।
রাঙামাটি মেডিকেলের ছাত্ররা এসব কিছুর সাক্ষী, নিজ চোখে দেখেছে মাটিচাপা লাশ, স্বজনহারা মানুষের হাহাকার। দূর্যোগের কারণে বন্ধ হয় কলেজ, হল ছেড়ে চলে যায় সবাই। কিন্তু যে শহরে তারা বিদ্যার্জনে এসেছে যে মানুষগুলো তাদের কে বিভিন্নভাবে আপন করে নিয়েছে, সাহায্য করেছে বিভিন্ন ভাবে।
তাদের প্রতি, পাহাড়ের প্রতি মমতার টানে মেডিকেল কলেজের ২য় ব্যাচের মনিটর অর্নব ও কামরুল হাসান সজীব উদ্যোগ নেয় তাদের পাশে দাঁড়ানোর। সাথে সাথে সাড়া মেলে ব্যাচের সব শিক্ষার্থীর। ১৭ তারিখে ফেসবুকে তৈরি হলো ইভেন্ট ‘ভুমিধ্বসে দুর্গতদের পাশে এগিয়ে আসুন’। সাড়া পাওয়া যায় ঢাকা, চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত বন্ধুদের।
এছাড়াও এতে সাড়া দেয় কলেজের অধ্যক্ষ ডা. টিপু সুলতান, ডা. বিপ্লব বড়ুয়াসহ অন্যান্য শিক্ষকদের। যাদের অনুপ্রেরণা ছাত্রদের এগিয়ে যেতে সাহস যোগায়। শুরু হলো বিভিন্ন স্থান হতে সাহায্য তোলা, বন্ধুদের কেউ ডোনেশন বক্স নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে শহরের মার্কেটে মার্কেটে, কেউ যাচ্ছে কোচিং সেন্টারে, কেউ বা স্যারদের কাছে। বিভিন্ন সংগঠন যেমন হাতেহাত ফাউন্ডেশন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
একদিকে খোঁজ চলছে আশ্রয়কেন্দ্রে কোন জিনিসটির অভাব, কোনটি পেলে এ ঘরহারা, স্বজনহারা মানুষরা একটু স্বস্তি পাবে যা ত্রাণ হিসেবে দেয়া যাবে। ৫দিনের তৎপরতায় ৩০০টি পরিবারকে ১৭টি করে ত্রাণ সামগ্রী দেবার মতো অর্থের যোগান মেলে। ফল স্বরুপ ২২ জুন ত্রাণ দেয়ার জন্য ৭জন অর্নব, সজীব, সাবিত, সাঈদ, জয়দেব, ইফরাদ, চয়ন। রাঙামাটির ছাত্রসহ অন্যান্য হাতেহাত ফাউন্ডেশনের সদস্য আরিফ, রমিজ, ফারুক, মুহিব, কামরুল, রাকিব।
এছাড়ও মো. বিল্লাল, অসীম, পরাগ, ত্রাণ নিয়ে বোট সহযোগে রওনা দেয়। বেলা ১২টার পর থেকে শুরু ত্রাণ বিতরণ যেখানে উপস্থিত ছিলেন অধক্ষ ডা. টিপু সুলতান, রাঙামাটি মেডিকেল কলজের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক। ত্রাণ বিতরণের আগ মুহূর্ত থেকে শুরু মুষুলধারে বৃষ্টি, যেনো থামতেই চায় না। কিন্তু এ বাঁধা থামাতে পারেনি এ তরুণদের। টানা ৬-৭ ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে ৫টি আশ্রয়কেন্দ্র রাঙামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, পুলিশ লাইন্স স্কুল, মনোঘর আবাসিক স্কুল, যুব উন্নয়ন কেন্দ্র, ভেদভেদি পৌর উচ্চবিদ্যালয়সহ একটি প্রত্যন্ত গ্রামের নাম উল্লাছড়া ত্রাণ দেয়া হয়। সন্ধ্যা নাগাদ ত্রাণ কাজ শেষ করে এ তরুণরা প্রবল বর্ষণের মাঝে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বোট সহযোগে রওনা দেয়। বাসায় ফিরে রাত ১২টার পর।