তথ্য গোপন করে ভারতের নাগরিকরা বান্দরবানে আসায় পুলিশের তল্লাশী বৃদ্ধি

বান্দরবান প্রতিনিধি:
প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে বিদেশীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে পার্বত্য চট্টগ্রমে। বড় রাষ্ট্রগুলোর নাগরিকরা এ ব্যাপারে সরকারী বিধি নিষেধ উপেক্ষা করছেন। পরিচয় গোপন করে অনুমতি ছাড়া বান্দরবানে ইদানিং ভারতীয় নাগরিকদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। গত ১৫ দিনে পরিচয় গোপন রেখে বান্দরবানে প্রবেশ করা ৮ ভারতীয় নাগরিককে সনাক্ত করেছে স্থানীয় গোয়েন্দা সূত্র।

এরমধ্যে, গত ২ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ১১ টায় পরিচয় গোপন রেখে বান্দরবানে প্রবেশ করার দায়ে ১ ভারতীয় নাগরিক ও তার ৪ বাংলাদেশী সহযোগীকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, বান্দরবানে পর্যটন এলাকা নীলগিরিতে গেলে প্রবেশ টিকিট কাটার সময় ভারতীয় নাগরিক মোনালিসা ভট্রাচারিয়ার কথা শুনে সন্দেহজনক মনে হলে তাৎক্ষনিক নীলগীরিতে দায়িত্বরত গোয়েন্দা সংস্থা ভারতীয় নাগরিক মোনালিনা আচারিয়াসহ তার সাথে থাকা বাংলাদেশি ৪ নাগরিককে আটক করে বান্দরবান সদর থানায় সপর্দ করে ।

আটককৃত ব্যাক্তিরা হলেন, মোনালিসা ভট্রাচারিয়া- অমেকা এনক্লেব ইন্ডিয়া, মো: রেজা হোসেন- বগুড়া সদর, মো: মেহেদি হাসান- ধানমন্ডি, ঢাকা, মো: আনোয়ারুল হক- বিলাশ বাড়ি নওগা, এবং মো: রফিকুল ইসলাম- বগুড়া । বর্তমানে আটককৃত সকলকে বান্দরবান সদর থানার হেফাযতে রাখা হয়েছে ।

এদিকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গত ২০ অক্টোবর পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরি থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার মাজেদুল হক মন্ডল, একই এলাকার নজরুল হক মন্ডল, কলকাতার বিবি ফরিদা, একই এলাকার আসমিফ মন্ডল, আমিনা মন্ডল, মহিউদ্দিন মোল্লা ও সাহিল হোসাইনকে আটক করে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। পরে তাদেরকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ তাদের আটক না করে বান্দরবান জেলার বাইরে পুশ ব্যাক করে। তারা বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা ইমানুর রহমানের সহযোগিতায় তথ্য গোপন করে বান্দরবানে বেড়াতে এসেছিল।

এই বিষয়ে শুক্রবার আটক ভারতীয় নাগরিক মোনালিসা ভট্রাচারিয়া থানায় পার্বত্যনিউজকে জানায়, ‌’আমি অফিসের কাজে চট্রগ্রাম এসেছি, আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার। আজ শুক্রবার ছুটির দিন। বাংলাদেশে কোনদিন আসিনি, চট্রগ্রামের কাছাকাছি বান্দরবান পর্যটন এলাকা, তাই কলিগদের সাথে নিয়ে বান্দরবান ঘুরতে চলে এসেছি, কিন্তু ভুলবশতঃ আমরা রেইসা চেক পোস্টে অনুমতি চেয়ে নাম এন্টি করিনি, কারণ বিষয়টি তিনি জানতেন না। তিনি সকলের কাছে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন।
তিনি সঠিক বলছেন কিনা স্থানীয় পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

বান্দরবান সদর থানার দায়িত্বরত অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম পার্বত্যনিউজের বান্দরবান জেলা প্রতিনিধিকে জানান, আসলে তারা ২ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ১১ টায় নীলগিরিতে রওনা দেয়। ভ্রমণের জন্য, সেখানে পৌঁছে প্রবেশের জন্য টিকিট কাটতে গেলে মোনালিসার ভট্টচারিয়ার কথা বার্তা সন্দেহজনক মনে হলে নীলগীরিতে কর্মরত গোয়েন্দা সংস্থা তাদের সকলকে আটক করে এবং পরবর্তীতে তাদেরকে সন্ধ্যা ৬ টার দিয়ে বান্দরবান সদর থানায় সপর্দ করা হয় ।

অফিসার ইনচার্জ পার্বত্যনিউজকে আরো বলেন, আমরা সকল সত্যতা জানার চেষ্টা করছি। পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকতাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকল অইনগত প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে ।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার পার্বত্যনিউজকে জানান, বান্দরবান শহরে প্রবেশ করার জন্য বান্দরবান কেরানীরহাট সড়কের রেইছা ও রাঙ্গামাটি কাপ্তাই সড়কের ডলুপাড়া এলাকায় দুটি চেকপোস্ট রয়েছে। এসব চেকপোস্টে বান্দরবানে আসা বিদেশী নাগরিকদের বিষয়ে তথ্য যাচাই বাছাই করা হয়। তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো বিদেশী নাগরিক পার্বত্য এলাকায় প্রবেশ করতে পারেন না। কিন্তু ভারতের বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের লোকজন বাংলা ভাষায় কথা বলায়, চেহারায় সাদৃশ্য থাকায় তাদের বিষয়ে তথ্য যাচাই করা অনেক সময় কষ্টকর হয়ে পড়ে। অনেক সময়ে তারাও ঝামেলা এড়াতে চেকপোস্টগুলোতে তথ্য না দিয়েই পার্বত্য এলাকা ভ্রমণ করেন।

তিনি আরো জানান, বিষয়টি এখন প্রশাসনের নজরে এসেছে। সব চেকপোস্টগুলোতে এখন বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে। অধিকতর যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। তবে গাড়ি তল্লাশি বা তথ্য যাচাই বাছাই করার সময় সাধারন মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে।

বান্দরবান জেলা শহরের প্রবেশপথের সবকটি চেকপোস্টে তল্লাশি বাড়িয়েছে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

জেলা প্রশাসন জানান, পাসপোর্ট ভিসা থাকলেও পার্বত্য জেলায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত কারণে বিদেশিদের প্রশাসনের পূর্বানুমতি নিতে হয়। কে কোথায় যাবেন, কখন আসবেন, কোথায় থাকবেন সে, কোন কোনা এলাকা পরিদর্শন করবেন, কাদের সাথে দেখা করবেন, কি কাজ- এ তথ্যগুলোও লিখিতভাবে প্রশাসনকে পূর্বেই জানাতে হয়। অনুমোদন ছাড়া কেউ প্রবেশ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

কিন্তু দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আট ভারতীয় নাগরিক বিনা অনুমতিতে বান্দরবানে প্রবেশ করায় বান্দরবান জেলা শহরে প্রবেশ পথের সবকটি চেকপোস্টে কড়া নজদারী করছে যৌথ বাহিনী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন