ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে অতিথি পাখির আগমন

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়ায় অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের লেক।

সাফারি পার্কের অভ্যন্তরে বন্যপ্রাণীর পানীয় জলের জন্য ২টি কৃত্রিম হ্রদ রয়েছে। প্রতিবছর শীতের মৌসুম আসলেই এ কৃত্রিম হ্রদ (লেকে) আগমন ঘটে হাজারো অতিথি পাখির। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে ডুলাহাজারা রিজার্ভ ফরেস্টে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য সম্বলিত বনাঞ্চলে এই সাফারি পার্কটি অবস্থিত। বর্তমানে এ পার্কের আয়তন ৯০০ হেক্টর। জেলা সদর হতে উত্তরে পার্কটির দূরত্ব ৫০ কি.মি. এবং চকরিয়া সদর হতে দক্ষিণে ১০ কি.মি.। প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত নির্জন উঁচুনিচু টিলা, প্রবাহমান ছড়া, হ্রদ, বিচিত্র গর্জন ও প্রাকৃতিক বৃক্ষ চিরসবুজে জানা-অজানা গাছ-গাছালি অপূর্ব উদ্ভিদ রাজির সমাহার ও ঘন আচ্ছাদনে গড়ে উঠেছে সাফারি পার্কটি।

শীত বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবছরের মতো চলতি বছরেও হাজারো অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে সাফারি পার্কের লেক পয়েন্টে। পার্কের লেকজুড়ে হাজার হাজার লাল পদ্মের মাঝে পাখিদের ওড়াউড়িতে চোখ জুড়িয়ে যায় পার্কে ভ্রমণে আসা দর্শনার্থীদের।

প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে হিমালয়ের উত্তরে শীত নামতে শুরু করে। ফলে উত্তরের শীত প্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং ও ভারত থেকে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। এসময় দক্ষিণ এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল দেশে হাজারো অতিথি পাখির আগমন ঘটে। বাংলাদেশের যেসব এলাকায় অতিথি পাখি আসে তার মধ্যে চকরিয়াস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক হলো অন্যতম।

পার্ক সূত্রে জানা যায়, শীত প্রধান দেশে যখন অতিরিক্ত শীত পড়া শুরু করে তখন অতিথি পাখির আগমন ঘটে সাফারি পার্কের এ লেকে। মূলত উড়ে আসা পাখি সাধারণত বিশ্রাম নেয় লেকের পানিতে ভাসতে থাকা পদ্ম ফুলের উপর। এ অতিথি পাখিগুলো হাঁস জাতীয় পাখি।

উড়ে আসা অতিথি পাখির মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিরিয়া, পান্তামুখী, পাতারি, মুরগ্যাধি, পাতারী হাঁস, জলকুক্কুট, খয়রা ও কামপাখি রয়েছে। এছাড়া মানিকজোড়, কলাই, ছোট নগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা, চিতাটুপি, বামুনিয়া হাঁস, লাল গুড়গুটি, নর্দানপিনটেল ও কাস্তেচাড়া প্রভৃতি পাখিও মাঝে মধ্যে দেখা মিলে এই লেকে। এরা ডানায় ভর করে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে চলে আসে এ অঞ্চলে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে স্ব-স্ত্রীক ঘুরতে আসা হাটহাজারী এলাকার ওমান প্রবাসী দর্শনার্থী নজরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ওমানে ছিলাম। এক সপ্তাহ পূর্বে দেশে আসছি। প্রবাসে থাকার কারণে ছেলে-মেয়ে নিয়ে তেমন কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সুযোগটা হয়নি। ডিসেম্বর মাসে তাদের পরীক্ষা শেষ হওয়ার সুবাদে যে কয়েকদিন স্কুল বন্ধ রয়েছে এরই মধ্যে পরিবারের লোকজন নিয়ে ভ্রমনে বের হলাম। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ভ্রমনে এসে ছেলে-মেয়ে খুবই আনন্দিত হয়েছে। পার্কের ভ্রমণের মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে পার্কের ভেতরের জেব্রা বেস্টনির ধারে লেক পয়েন্ট এলাকায় অতিথি পাখিদের কিচিরমিচির শব্দটাই বেশি ভাল লাগছে। যে কোনো দর্শনার্থীর মনে দোলা দেবে এ অতিথি পাখির কলকাকলিতে। কোন কিছু পাখির দিকে ছুড়ানো হলেই মনে হয় যেন কোনো বাঁশির সুর শোনা যাচ্ছে।

সাফারি পার্কের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবছরই শীতের মৌসুম আসলে পার্কের অভ্যন্তরীণ লেকগুলোতে হাজার হাজার অতিথি পাখির আগমন ঘটে। বিশেষ করে যখন খুব বেশি শীত পড়ে তখন এ পাখির দেখা মেলে পার্কের লেকে। অতিথি পাখির এ আগমনটা পার্কে আগত দর্শনার্থীদের বাড়তি বিনোদনের রূপ দিয়েছে। পাখিগুলো এক নজর দেখতে পর্যটকদের ভীড়ও বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, পার্কের লেকে আসা অতিথি পাখিদের যাতে দর্শনার্থীরা বিরক্ত না করে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন