জুরাছড়িতে আ’লীগের পদত্যাগের হিড়িক: ৩ দফায় ২শতাধিক নেতাকর্মীর পদত্যাগ

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:

আওয়ামী লীগের জুরাছড়ি কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দু চাকমা হত্যা ও আরো দুই নেতাকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় সন্ত্রাসীদের হুমকীর কারণে ওই উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পদত্যাগের যেন হিড়িক পড়েছে। সবাই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে পদত্যাগপত্র জমা করলেও মুলত তাদেরকে নিত্য হুমকী দিচ্ছে আঞ্চলিক দলগুলির পেশী শক্তির নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যেই ভয়ে ৩য় দফাসহ প্রায় ২শতাধিক নেতাকর্মী দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আঞ্চলিক দলগুলো। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রগুলো দাবি করছে এতেই বোঝা যাচ্ছে যে অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দাপট কতটুকু। তারা না মানছে মানুষের অধিকার না মানছে আইন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মুছে ফেলা এতো সহজ নয় বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।

প্রতিদিনই পদত্যাগপত্র স্ব-স্ব সভাপতির কাছে জমা দিচ্ছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।  আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের সাবেক দুই ইউপি চেয়ারম্যান, সাংগঠনিক সম্পাদক লাল বিহারী চাকমাসহ আরোও ৫২জন নেতা-কর্মী সোমবার পদত্যাগ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর আগে ১ম দফায় ১২জন ও ২য় দফায় ১১১জন পদত্যাগ করেন।  উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা অরবিন্দু চাকমার খুন হওয়ার পর এ নিয়ে তৃতীয় দফায় প্রায় ২শত জন নেতাকর্মী পদত্যাগ করলো।

সোমবার (ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় উপজেলা সদরে এসে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে তাদের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন জুরাছড়ি আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা-কর্মী।  এদের মধ্যে প্রথম সারির নেতা  উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লাল বিহারী চাকমা, মৈদং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান বরুন তালুকদার, দুমদুম্যা ইউনিয়নের নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তরুন মনি চাকমা, মহিলা লীগেরসহ সভাপতি জ্যোৎস্না চাকমা, ইউনিয়ন শাখারসহ সভাপতি চন্দা চাকমা, সাধারণ সম্পাদক তারকা চাকমাসহ অনেক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে গত রবিবার আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক মায়া নন্দ দেওয়ান, শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক  সন্তোষ দেওয়ান, আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য বিরঙ্গ লাল চাকমা, যুব লীগেরসহ সভাপতি মিঠুন চাকমা, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জতির ময় চাকমা, কৃষক লীগের যুগ্ম সম্পাদক বঙিম চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক মাইকেল চাকমা, দপ্তর সম্পাদক বন চন্দ্র চাকমা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নীল পুতি চাকমা, কার্যকরী কমিটির সদস্য সন্তোষ চাকমা, সুনিল কান্তি চাকমা, দয়ামুনি চাকমা, অরুন কান্তি চাকমা, জুরাছড়ি ইউনিয়ন ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক কাকন মোহন চাকমা, সদস্য মোহর চাকমা পদত্যাগ করেন।

ইতিমধ্যে পদত্যাগকৃত আওয়ামী লীগের নব্য সদস্য হচ্ছে ৭০জন।  তারা হচ্ছে, জুরাছড়ি ইউনিয়নের কুসুমছড়ি গ্রামের পিত্তি রাজ চাকমা, রেবতী চাকমা, নোয়া রাম চাকমা, এডিসন চাকমা, প্রিয় লাল চাকমা, রিপন চাকমা, মহেন্দ্র চাকমা, যতিন্দ্র চাকমা, কুঞ্জধন চাকমা, রিতু জীবন চাকমা,দয়াল চাকমা, ভিতর বালুখালী গ্রামের বিজয় লক্ষ্য চাকমা, সাপছড়ির গ্রামের কিরণ কুমার চাকমা, শিণছড়ির প্রেম রঞ্জন চাকমা, ভুবন চন্দ্র চাকমা।

বনযোগীছড়া ইউনিয়নের বহেরাছড়ি গ্রামের সুনীল চাকমা, বিন্দু চাকমা, প্রভু রঞ্জন চাকমা, জ্যোতি চাকমা, পূন্যসেন চাকমা, রাজেন্দ্র চাকমা, অরুন জীবন চাকমা, শ্রীকান্ত চাকমা, উদয়ন চাকমা, বেকাবেক্যা গ্রামের শান্তি রতন, ধামাই পাড়া গ্রামের বিমল চাকমা, শৈলেন চাকমা, প্রীতি বিন্দু চাকমা, কৃষ্ণ মোহন চাকমা, কাংরাছড়ি(রাস্তা মাথা) গ্রামের দয়া কুমার চাকমা।

মৈদং ইউনিয়নের অঞ্জ লাল চাকমা,  অনিল চাকমা, হিরো নাক্ষ্য চাকমা, লাল বিহারী চাকমা, ললিত চন্দ্র চাকমা, রবিধন চাকমা, বিক্রম চাকমা, নাগরি চাকমা, সজ্জিত তালুকদার, তপন চাকমা, রাঙ্গীদাশ চাকমা, দবনা চাকমা, জৎস চাকমা, প্রান্ত চাকমা, অরুন কুমার চাকমা, শান্তি প্রিয় চাকমা, নির্মল চাকমা, নিখিল প্রিয় চাকমা, মিঠুন চাকমা, কাঞ্চন কুমার চাকমা, সুরময় চাকমা, সুনীল বরণ চাকমা, ধনেশ্বর চাকমা, হিমায়ন চাকমা।

দুমদুম্যা ইউনিয়নের মেগনাথ চাকমা, বেবী সোনা চাকমা, ভাগ্য ধন চাকমা, নিরঞ্জয় চাকমা, রুমেল চাকমা, স্বপন চাকমা, সুচী রানী চাকমা, সুজতা চাকমা, সুমতি চাকমা, সোনালীকা চাকমা, সমীরণ চাকমা, দুরগো নাথ চাকমা, নোমেল চাকমা, কমলা রঞ্জন চাকমা, চিক্ক রঞ্জন চাকমা, অনিল বিকাশ চাকমা, সম্রাট সুর চাকমা, অনিল বরণ চাকমা, বিরভদ্র চাকমা, নিপুন্ন চাকমা, বিকাশ চাকমা, প্রীতি বিন্দু চাকমা, সুভনন্দ চাকমা, দয়া লক্ষী চাকমা, কালো নন্দ চাকমা, জীবন বিকাশ চাকমা, চান্দু চাকমা, সুন্দরী চাকমা, করুনা ময় চাকমা, কালা কেতু চাকমা, পদ্মা দেবী চাকমা পদত্যাগ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের সংগঠক বিরঙ্গ লাল চাকমা।

এদিকে পদত্যাগকৃত মহিলা লীগের জুরাছড়ি ইউনিয়নের বালুখালী গ্রামের মুনি বালা চাকমা, শিলছড়ি গ্রামের শেফালীকা চাকমা, চঞ্চলা চাকমা, প্রেমলতা চাকমা, কোনতলা চাকমা, আল্পনা চাকমা, চিক্কোবী চাকমা, মায়া লতা চাকমা, মালতি চাকমা, কল্পনা চাকমা, কুসুমছড়ি গ্রামের বিনঙ্গ লতা চাকমা(জুলি), ঊষা রানী চাকমা, বিত্তো লতা চাকমা, সুফলা চাকমা, রঞ্জন মগী চাকমা, রুপ্তা চাকমা, স্বপ্না দেবী চাকমা, দীপিকা চাকমা, কিরণ মালা চাকমা, লক্ষী রানী চাকমা, লতিকা চাকমা, ফুল রানী চাকমা, রিংকি চাকমা, মায়াবী চাকমা, সুন্দরী চাকমা, রুমি চাকমা. রুমেন চাকমা, মমতা দেওয়ান, লক্ষী দেবী চাকমা।

বনযোগীছড়া ইউনিয়নের বেকাবেক্যা গ্রামের যত্ন শোভা চাকমা, বহেরাছড়ি গ্রামের কামনা চাকমা, বিশাখা চাকমা, ঝর্না চাকমা, জ্ঞান সভা চাকমা, চিক্কা রানী চাকমা, মেদরী চাকমা, অনিতা চাকমা, সুরংখ লতা চাকমা, হেঙ্গদী চাকমা, পিংকি চাকমা, বোধ রানী চাকমা, পারবিনা চাকমা, সঞ্জিতা চাকমা।

পদত্যাগকৃত ছাত্র লীগের নব্য যোগদানকৃত কুসুমছড়ি গ্রামের অভিজিৎ চাকমা, সোহেল চাকমা, হিমেল চাকমা, রিটন চাকমা, মিটন চাকমা, লুলাংছড়ি গ্রামের সুমন চাকমা।  বনযোগীছড়া ইউনিয়নের ধামাইপাড়া গ্রামের মিশর চাকমা।

এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার কারণে সকল দলীয় কার্যক্রম থেকে সেচ্চায় অব্যহতি নিচ্ছেন।  ইতিমধ্যে তারা দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে পদত্যাগপত্র স্ব-স্ব সভাপতির কাছে পাঠিয়েছেন বলে দাবি করেন।

কুসুমছড়ি জুলি, মমতা, ঊষারানী চাকমা এসময় জানান, আমরা কৃষিজীবী ও দিন মজুর।  দিন এনে দিন খায়, কাজ না করলে পেটে ভাত জোটে না।  এমন অবস্থায় কিছু না বুঝে সংগঠনে যোগ দিয়েছি।  প্রায় সময় সভা-সমাবেশ থাকে তাতে যোগ দেওয়া সম্ভব হয়না।  তাই দল থেকে আমরা সেচ্চাই পদত্যাগ করছি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবর্তক চাকমা দলীয় কর্মীর পদত্যাগ বিষয়ে মুঠোফোনে এবং পদত্যাগপত্র হাতে পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।  যুব লীগের সভাপতি সুমতি বিকাশ দেওয়ান বলেন, যুব লীগের বেশ কিছু পদত্যাগপত্র হাতে পেয়েছি।  গঠনতন্ত্র মূলে তাদের সদস্য বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

মহিলা লীগের সভানেত্রী কল্পিতা চাকমা জানান জুরাছড়ি ও বনযোগীছড়া ইউনিয়নের কুসুমছড়ি, বহেরাছড়ি, আনন্দ পাড়ার অনেক গুলো নব্য যোগদানকারী সদস্য’র সাধারণ সদস্য পদ বাতিলের পদত্যাগপত্র হাতে পেয়েছি।

কৃষক লীগের সভাপতি কেতন চাকমা বলেন, যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ আটজনের পদত্যাগপত্র নিশ্চিত করে বলেন, এই কমিটি এখনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি।  সুতরাং পদত্যাগের প্রয়োজন হয় না।  তারপরেও বিধি মোতাবেক তাদের আবেদন মঞ্জুর করা হবে।

এদিকে শনিবার রাতে জুরাছড়ি নেতা-কর্মীদের পদত্যাগের বিষয়ে জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ একটি বিবৃতি দিয়েছে।  জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বরের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, জনসংহতি সমিতির  (জেএসএস)সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাদের নেতা-কর্মীদের হত্যার ভয় দেখিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করছে। তবে জনসংহতি সমিতি বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন