জুম ধানের বাম্পার ফলনে হাসছে পার্বত্য চট্রগ্রামের পাহাড়, হাসছে কৃষক

snapshot20130919155517

দুলাল হোসেন,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:
 পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি পাহাড়ে এবছর জুম ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাতাসে-প্রতিটি পাহাড়ের জুম ধান ক্ষেতগুলো ঝন-ঝন করে  বাজছে। ঐতিহৗবাহী সোনালী জুম ধানের সুর ও ছন্দে মন ও প্রান ভরে যাচ্ছে জুমিয়াদের (কৃষকদের)। জুম ধানের বাম্পার ফলনে হাসছে পাহাড় এবং হাসছে জুমিয়ারা। কোথাও কোথাও কাটা শুরু হয়েছে জুম ধানের। কাটা চলবে পুরো মাস জুড়ে।

পার্বত্য চট্রগ্রামের জুমিয়ারা পাহাড়ে শতশত বছর ধরে চাষ করে  আসছে জুম ধানের। এক দশক আগে ও পাহাড়ে স্বল্প পরিসরে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় ধানের চাষ করত জুমিয়ারা। যেগুলো ছিল মিষ্টি ও সু-স্বাদু। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে, খাদ্য চাহিদা মেটাতে, গত কয়েক বছর থেকে জুমিয়ারা ঝুকেছে উচ্চ ফলনশীল ধানের দিকে।

 পুরুষ জুমিয়ারা প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল মাসে পাহাড়ে বা পাহাড়ের ঢালুতে আগুন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা ও জঙ্গল পরিষ্কার করে আর মে-জুন মাসে জুম ধানের চাষ শুরু করে। সময়ে সময়ে আগাছা বাছাই করে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। আর ফলন পাকার পরে তা কাটা এবং প্রক্রিয়াজাত করার দায়িত্ব পড়ে মহিলা জুমিয়াদের। এ বছর ভালো আবহাওয়া ও পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় তিন পার্বত্য জেলায় ভালো জুম ধান হয়েছে।

কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, এ বছর তিন পার্বত্য জেলায় ৪৫,১৭০ একর জমিতে চাষ হয়েছে জুম ধানের। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলায় ১২,৫৭০ একর, রাঙ্গামাটি জেলায় ১১,৬০০ একর এবং বান্দরবান জেলায় ২১,০০০ একর পাহাড়ে জুম চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি একরে ৪০ থেকে ৫০ মন ধান। এ হিসেবে তিন পার্বত্য জেলায় ১৮ লক্ষ থেকে ২২ লক্ষ মন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে কৃষি কর্মকর্তারা। কিন্তু জুমিয়ারা বলছেন এবার জুমে বাম্পার ধান হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তারা ফলন পাবে বেশী।

পাহাড়ের জুমিয়ারা জুম চাষ করার মাধ্যমে নিজেদের অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে সক্ষম হচ্ছে।খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কে  সাতমাইল এলাকার জুম চাষী চারুবিকাশ ত্রিপুরা জানান, এবার পাহাড়ে জুম ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার কারণে আমরা অনেক খুশি।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর’র উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, রুপালী মারমা জানান, এবছর জুম ধান ভালো হওয়ায় খুশি পাহাড়ের কৃষকেরা।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, এ বছর আরহাওয়া ভালো থাকায় জুম ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাছাড়া জন সংখ্যার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিতে দেশীয় জাতের ধানের পরিবর্তে এখন বেশী ফলন পাওয়ার লক্ষ্যে জুমিয়ারা উচ্চ ফলনশীল জাতের জুম ধান চাষে ঝুকে পড়েছে।

 পাহাড়ে চাষাবাদ পদ্ধতির কথা শুনলে সমতলের অনেকেই অবাক হবেন। কিন্তু কৃষি বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী চাষ করে পাহাড়েও যে সোনা ফলানো যায়-তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত খাগড়াছড়ি পাহাড়ে পাহাড়ে জুমের বাম্পার ফলন । দুর্গম পাহাড়ের বুক চিরে বৈরী প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে সোনা ফলানো জুমিয়াদের সংসারে সুখের বসন্ত আসুক এই প্রত্যাশা সকলের।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন