চকরিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নামে বনভূমি দখলকে কেন্দ্র করে তিনদিন ধরে গোলাগুলি

দখল

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়ায় সামাজিক বনায়নের বিপুল পরিমাণ জায়গা জবর দখলে নেওয়ার জন্য দুই সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল দফায় দফায় গোলাগুলি ও মহড়ায় লিপ্ত হয়েছে। গত তিনদিন ধরে এই অবস্থা অব্যাহত থাকায় আশপাশের মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহূর্তে বনভূমি জবর-দখল নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ দেখা দিতে পারে।

জানা গেছে, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ফাঁসিয়াখালী বিটের আলোচিত উচিতার বিল মৌজার সামাজিক বনায়নের ৭১২ দশমিক ৮৯ একর বনভূমি এবং পাদদেশের ২০ একর সমতল ভূমি দখলে নেওয়ার প্রতিযোগীতায় নেমেছে দুই পক্ষ।

স্থানীয়রা জানায়, গত সোমবার থেকে তিনদিন ধরে দফায় দফায় দুই সন্ত্রাসী দলের মধ্যে কয়েকশত রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছে। দুই পক্ষে অন্তত দুই শতাধিক সশস্ত্র লোক সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। গোলাগুলির সময় এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় পুলিশ ও বনবিভাগ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলেও দখলবাজ সন্ত্রাসীদের মারমুখি তৎপরতার কারণে বার বার পিছু হটছে।

জানা যায়, সশস্ত্র জবর দখলকারীদের এক পক্ষে ফাঁসিয়াখালীর এবং অন্যপক্ষে পাশের ইউনিয়ন চিরিঙ্গার পালাকাটা, পৌরসভার পালাকাটা, করাইয়াঘোনাসহ আশপাশের লোকজন জড়িত রয়েছে। একপক্ষ ভূমিহীন এবং অন্যপক্ষ বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙিয়ে বঙ্গবন্ধু গুচ্ছগ্রাম সাইনবোর্ড টাঙিয়ে বনভূমি জবর দখলের চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন বার বার। ইতিপূর্বেও বিবাদমান দখলকারীরা উচিতার বিল মৌজায় অসংখ্যবার বনভূমি জবর-দখলে নিয়ে অবৈধ বসতি নির্মাণ করে প্লট আকারে বিক্রি করেছিল। ২০১২ সালে ফাঁসিয়াখালী বনবিটের অধীনে ২০০৮ থেকে ২০০৯ ও ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের সামাজিক বনায়নের আওতায় ৯০ হেক্টর আগর বাগানের লক্ষাধিক গাছ কেটে নিয়ে যায়। একইভাবে গত তিনদিন ধরে উজাড় করা ৭১২ দশমিক ৮৯ একর বনভূমি এবং পাদদেশের ২০ একর সমতল ভূমি জবর দখল করে নিতে গেলে বিবাদমান দুই সন্ত্রাসী দলের মধ্যে দফায় দফায় বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। তবে এ সময় কেউ হতাহত হয়েছে কী না তা নিশ্চিত করে বলতে না পারলেও সংঘর্ষে জড়ানো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জর কর্মকর্তা এবিএম জসিম উদ্দিন জানান, ফাঁসিয়াখালী বন বিটের উচিতার বিল মৌজার প্রায় ৯১২ দশমিক ৮৯ একর সংরক্ষিত বনভূমি জবরদ দখলে নেওয়ার জন্য গত তিনবছর ধরে অসংখ্যবার চেষ্টা চালিয়েছে। ইতিপূর্বে সেখানে অবৈধভাবে নির্মিত কয়েকশত বসতি অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বিবাদমান সশস্ত্র দল দুটি এসব বনভূমি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে অস্ত্রের মহড়া এবং সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় সামাজিক বনায়নের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া এসব বনভূমির জবর দখল ঠেকাতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। অচিরেই বিভিন্ন সংস্থার লোকজনের সমন্বয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে দখলে নেওয়া এসব বনভূমি পুনরুদ্ধার করা হবে’।

রেঞ্জ কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙিয়ে এবং সাইনবোর্ড টাঙিয়ে এসব বনভূমি জবর দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে দখলবাজ-সন্ত্রাসীরা। প্লট আকারে বনভূমি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে দখলবাজ সন্ত্রাসীরা কয়েকশত গরীর লোকজনের কাছ থেকে অন্তত দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে। বিষয়টি ইতিমধ্যে লিখিতভাবে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জানান, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কোন লোক সংরক্ষিত বনভূমি জবর দখলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। যারা এসব কর্মকাণ্ড করছেন, তারা বাইরের লোক। প্রতিদিন ব্যাপক গোলাগুলির শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হচ্ছে। এতে এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে জবর দখলকারীদের হঠানো না গেলে অশান্ত হয়ে উঠবে এলাকার পরিবেশ।

সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের সংগঠন চকরিয়া আগর বাগান সমবায় সমিতির সভাপতি আবু বক্কর ছিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল কাদের বলেন, ‘সরকার মহৎ উদ্দেশ্যে সামাজিক বনায়নের আওতায় বাগান সৃজন করে কয়েকশত উপকারভোগী নির্বাচন করে উচিতার বিল মৌজায় বনভূমি বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু বনভূমি দখলবাজ সন্ত্রাসীদের তৎপরতার মুখে সামাজিক বনায়নের মতো বৃহৎ প্রকল্প ভেস্তে যেতে চলেছে। এজন্য দখলবাজরা জাতির জনকের নামও ব্যবহার করছে।’

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘যখনই বনভূমি দখল নিয়ে দুইপক্ষ মুখোমুখি এবং গোলাগুলিতে লিপ্ত হওয়ার খবর পেয়েছি তখনই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। কোন অবস্থাতেই বনভূমি জবর দখল করতে দেওয়া হবে না কাউকে। ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাহেদুল ইসলাম আমার সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করেছেন। প্রয়োজনে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ এবং বনকর্মীরা যৌথভাবে অভিযান চালাচ্ছে জবর দখলকারীদের উচ্ছেদে’।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন