চকরিয়ায় ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডবে নিহত দুুই, আহত শতাধিক, ১০ হাজার বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত

চকরিয়া প্রতিনিধি :
কক্সবাজারের চকরিয়ায় ঘুর্ণিঝড় ‘মোরা’র তান্ডবে ও সৃষ্ট দমকা হাওয়ার তান্ডবে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গাছ উপড়ে পড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে ১০ হাজার ২২৮টি বসতবাড়ি। সম্পুর্ণভাবে ভেঙ্গে গেছে ১ হাজার ২৯৩টি বসতঘর। তারমধ্যে ১৮ ইউনিয়নে ভেঙ্গে গেছে ১ হাজার ১৯৩টি বসতঘর এবং পৌরসভার ৯টি ওর্য়াডে ভেঙ্গে গেছে ৮০টি বসতবাড়ি। সড়কের উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ে প্রায় দুইঘন্টা ধরে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ঘুর্ণিঝড় মোরা তান্ডবে উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নে সড়ক এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন বসতঘরের লক্ষাধিক গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। বিধস্ত হয়েছে হাজার হাজার বসতঘর এবং বিপুল পরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সড়ক এবং গৃহস্থলী গাছ পড়ে বিদ্যুতের সংযোগ লাইন ছিঁেড় যাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে উপজেলার বিদ্যুত ব্যবস্থা। অনেক এলাকায় আভ্যন্তরিণ সড়ক যোগাযোগ এখনো বন্ধ রয়েছে।

অপরদিকে ঘুর্ণিঝড় মোরা’র তান্ডবে গাছ চাপা পড়ে উপজেলার পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নে এক নারী ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নে একজনসহ দুইজন নিহত হয়েছে।  নিহতরা হলেন: উপজেলার পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নে সিকদারপাড়া গ্রামের মৃত নুরুল আলমের স্ত্রী ছায়রা খাতুন (৬৫) ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্বডুমখালী গ্রামের আবদুল জব্বারে ছেলে রাহমত উল্লাহ (৫০)। এছাড়া ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডব চলাকালে বসতঘর রক্ষা করতে গিয়ে অন্তত শতাধিক ব্যক্তি কমবেশি আহত হয়েছে। পূর্ববড়ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আরিফ দুলাল জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোরা’র আঘাতে তার ইউনিয়নে অন্তত ৪শতাধিক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছ পড়ে অনেক স্থানে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং গাছের চাপায় এক বৃদ্ধা মহিলা নিহত হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘুর্ণিঝড় মোরা তান্ডব মোকাবেলায় আগের দিন সোমবার দুপুর থেকে উপজেলা পরিষদে অবস্থা পর্যবেক্ষনের জন্য কন্টোল রুম খোলা হয়। সেখান থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দুর্গত এলাকার খবরা-খবর নেয়া হয়। ইউএনও বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যানরা এলাকার ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকা জমা দিয়েছেন। তালিকা মতে ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডবে উপজেলায় ১০ হাজার ২২৮টি বসতঘর বিধস্ত হয়েছে। তারমধ্যে ১হাজার ১৯৩টি বসতঘর সম্পুর্ণভাবে বিধস্ত এবং ৯ হাজার ৩৫টি বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ বেশির ভাগ বসতঘর কাঁচা ও আধা পাঁকা।

তিনি আরো বলেন, ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবেলায় সর্তকর্তা জানিয়ে আগেরদিন এলাকাজুড়ে মাইকিং করার পর উপজেলার প্রায় শতাধিক সাইক্লোন শেল্টার কাম বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয় ৭৪ হাজার ৭৩০ জন নারী-পুরুষ। ঘুর্ণিঝড় মোরা’র তান্ডবে গাছ চাপা পড়ে উপজেলায় দুইজন নিহত হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ জাফর আলম জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোরা মোকাবেলায় উপজেলার পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয় এবং উপকূলীয় এলাকার সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসতে ব্যাপক তৎপরতা চালানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে গিয়ে তাৎক্ষনিকভাবে ত্রাণ তৎপরতাসহ সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে এবং সরকারের উর্ধ্বতন দপ্তরে দ্রুত সময়ে বরাদ্ধ ও সাহায্যের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। এছাড়াও রোজা পালনের জন্য ২৯ মে রাতে তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ২০ বস্তা চিড়া ও ১০ বস্তা চিনিসহ অন্যান্য খাবার সামগ্রী ও নগদ টাকা বিতরণ করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন