খাগড়াছড়িতে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালবাসায় পাষণ্ডকে শাস্তির বদলে মুক্তি


নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি: অবশেষে নির্যাতিতা স্ত্রীর আকুতি ও জিম্মায় ছাড়া পেল পাষণ্ড স্বামী মো. মাসুদ। বুধবার রাতে খাগড়াছড়ি সদর থানায় পৌরসভার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে আর নির্যাতন না করার শর্তে মো. মাসুদ ও তার বাবা মো. ফয়েজ আহমেদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বুধবার সকালে খাগড়াছড়ি শহরের মেহেদীবাগ এলাকায় বাড়ির উঠানে ফেলে স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে নির্মম-নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় এক যুবক রোকেয়া বেগমের উপর নির্যাতনে ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। অল্প সময়ের মধ্যেই নির্যাতনের ভিডিওটি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে বিষয়টির সত্যতা খুঁজে পান। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানালে মাসুদকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। কিন্তু স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালবাসায় পাষণ্ডকে শাস্তির বদলে ছেড়ে দিতে হয়েছে পুলিশকে। নির্যাতনের দৃশ্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। পাষণ্ড মাসুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন সোস্যাল এক্টিভিস্টরা।

৮/১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক নারী তার মাত্র এক বছরের দুধের শিশুকে দু’হাতে বুকে জড়িয়ে আগলে মাটিতে লুটিয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। আর তাকে লাঠি দিয়ে বেধর পেটাচ্ছেন তার পাষন্ড স্বামী। নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য বার বার আকুতি জানালেও রেহাই মিলছে না। লাঠির আঘাত লাগছে শিশুটির গায়েও।

খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইন-চার্জ(ওসি) সাহাদাত হোসেন টিটো বলেন, নির্যাতিতা গৃহবধূর আকুতিতে পাষণ্ড স্বামীকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। তবে স্ত্রী রোকেয়াকে আর নির্যাতন করা হবে না এবং নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিবে এমন শর্তে মাসুদ ও তার বাবা মো. ফয়েজ’র কাছ থেকে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে। পরে স্ত্রীর জিম্মায় তাকে থানা থেকে যেতে দেয়া হয়। এসময় সংশ্লিষ্ট পৌর কাউন্সিলর মো. মাসুদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ জানায়, রোকেয়া বেগম নোয়াখালীর জামাপুর গ্রামের মৃত সালামত উল্লাহ’র মেয়ে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে খাগড়াছড়ির ফয়েজ আহমেদের ছেলে মো. মাসুদের সাথে তার বিয়ে দেওয়া হয়। মূলত যৌতুকের জন্য রোকেয়া বেগমের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয় এবং এই নির্যাতন নিত্যদিনের ঘটনা বলে জানান স্থানীয়রা।

প্রতিবেশীদের মতে, ২০১৪ সালে পারিবারিকভাবে মাসুদের সঙ্গে রোকেয়া বেগমের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দু’টি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য রোকেয়ার উপর চলতো অমানবিক নির্যাতন। দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে নীরবে স্বামীর নির্যাতন সহ্য করে চলছিলেন রোকেয়া। নির্যাতনের বিষয়টি স্থানীয়রা জানলেও কেউ এতো দিন মুখ খুলেনি।

রোকেয়া বেগম সাংবাদিকদের জানান,পৃথিবীতে তার আর কেউ নেই। তাকে আশ্রয় দেওয়ার মতো কেউ নেই। তাই মেরে ফেললেও দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর কাছে থাকতে চান। এখন দেখার বিষয়, পাষণ্ড স্বামী তার প্রতি স্ত্রী রোকেয়া বেগমের এমন ভালোবাসাকে সম্মান জানায় কিনা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন