খাগড়াছড়িতে তামাক চাষে খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ হুমকির মুখে

Khagrachari Picture(04) 14-02-2017 copy

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

প্রশাসনের নাকের ডগায় পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি দখল করে নিচ্ছে বিষাক্ত তামাক। বাদ যাচ্ছে না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায়ও। গত বছর খাগড়াছড়িতে দুটি কোম্পানি তামাকের বিষ ছড়ালেও চলতি বছর নতুন করে আরও একটি কোম্পানি চাষীদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। ফলে গত বছরের চেয়ে জেলায় এ বছর  তামাক চাষও বেড়েছে।

তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য নির্মিত হয়েছে ধুমঘর। সেখানে প্রতিদিন  জ্বালানো হচ্ছে শত শত মণ বনজ সম্পদ কাঠ। এ সব ধুমঘর থেকে বের হবে বিষাক্ত ধোঁয়া। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।এদিকে তামাক চাষের কারণে খাগড়াছড়ি জেলার খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছে পরিবেশবিদরা।

খাগড়াছড়ি জেলা মাইনী, ফেনী, চেঙ্গী, ধলিয়া, মানিকছড়ি  ধরুং খালের যে দিকে চোখ যায় শুধু তামাক আর তামাক। এত দিন খাগড়াছড়িতে বৃটিশ ও ঢাকা টোবাকো কোম্পানি তামাক চাষের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করলেও চলতি বছর যোগ হয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ। তামাক চাষের জন্য আগাম টাকা, সার কীটনাশকসহ সব ধরনের সহযোগীতা দিচ্ছে টোবাকো কোম্পানি গুলো।

Khagrachari Picture(02) 14-02-2017 copy

ফলে ক্ষতিকর জেনেও তামাক চাষ করছে কৃষকেরা। বিষাক্ত তামাক চাষের ফলে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন হুমকীর মুখে পড়েছে তেমনি ফসলের জমি হ্রাস পেয়ে খাদ্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তামাক চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে নারী শ্রমিক। তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগ-ব্যধি।

শিক্ষকরা বলছে, তামাক চাষীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা অসহায়। দীঘিনালা ছোট মেরুং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কাসেম বলেন, বিদ্যালয় আঙ্গিনা ঘেঁষে গড়ে উঠা তামাক চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিদ্যালয়ের পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ভুগছে নানা রোগ-শোকে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিবাদ করেও কোন ফল পাচ্ছি না।

Khagrachari Picture(05) 14-02-2017 copy

তামাক চাষী শুকুর আলী বলেন, সবজি চাষে বাজারজাতকরণে নিশ্চয়তা নেই। লোকসানের মুখে পড়তে হয়। পক্ষান্তরে তামাক চাষে বাজারজাতের নিশ্চিয়তাসহ তামাক চাষের জন্য আগাম টাকা, সার কীটনাশকসহ সব ধরনের সহযোগীতা দিচ্ছে বিভিন্ন টোবাকো কোম্পানি গুলো। ফলে ক্ষতিকর জেনেও তারা তামাক চাষ করছে।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কর্মকর্তার তরুন ভট্টাচার্য্য জানান, চলতি বছর জেলায় তামাক চাষ গত বছরের চেয়ে ৪২ হেক্টর বেড়েছে স্বীকার করে বলেন, তামাক চাষ রোধে কৃষি বিভাগের পক্ষে মাল্টিমিডিয়া কোম্পানির সাথে লড়াই করার সক্ষমতা নেই। এর জন্য প্রয়োজন প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টা।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ সু-রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক প্রদীপ চৌধুরী বলেন, তামাক চাষের কারণে খাদ্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। এ তামাক বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া না হলে ভবিষ্যত প্রজম্মের জন্য ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে।

তামাক চাষের বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চলতি বছরে এ অঞ্চলে তামাক চুলিও বেড়েছে। চুল্লিগুলোতে ব্যাপক হারে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে বনজ সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

Khagrachari Picture(03) 14-02-2017 copy

এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, জেলা প্রশাসন তামাক চুল্লিগুলোতে ব্যাপক হারে কাঠ পোড়ানোর কথা স্বীকার করলেও সু-স্পষ্ট আইন না থাকার কারণে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করে অন্য ফসলে ফেরানোর জন্য কার্যক্রম চলছে বলেও তিনি জানান।

বিশেষজ্ঞরা জানান, কোন জমিতে এক বার তামাক চাষ করা হলে সে জমিতে আর কোন ফসল ফলানো যায় না। এ ভাবে তামাক চাষ অব্যাহত থাকলে এক দিকে বিষাক্ত তামাকের ছোবলে পরিবেশ যেমন হুমকীর মুখে পড়বে তেমনি অদূর ভবিষ্যতে খাদ্য সংকটে পড়বে জেলাবাসী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন