মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে খাগড়াছড়িতে জেএসএস’র কর্মসূচি

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির(এমএন) লারমা গ্রুপের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাকে মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে প্রত্যাহারের দাবিতে আগামীকাল ১২ জানুয়ারি (শুক্রবার) জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সকালে খাগড়াছড়ি শহরের খাগড়াপুর কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, কেন্দ্রীয় জেএসএস(এমএন) লারমা গ্রুপের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল কান্তি চাকমা, রাজনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক বিভূ রঞ্জন চাকমা, যুব বিষয়ক সম্পাদক প্রীতিময় চাকমা ও কেন্দ্রীয় নেতা সোহাগ চাকমা।

সাংবাদিক সম্মেলনে সুস্থ তদন্তের মাধ্যমে ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমার প্রকৃত হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে বিচার দাবি করে বলেন, আমরাও মিঠুন হত্যাকাণ্ডের  নিন্দা জানাই। পরিবার মামলা না করায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। পুলিশের মামলায় মিঠুন চাকমা হত্যাকাণ্ডকে ইউপিডিএফ’র বিবাদমান গ্রুপের ভিতর রাজনৈতিক, আদর্শিক এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আভ্যন্তরীন কোন্দল বলে উল্লেখ করেছে।

পুলিশ প্রশাসন অত্যন্ত তৎপরতার সাথে তদন্ত কাজ চালাচ্ছে। অথচ গত ৯ জানুয়ারি জনৈক অনিক বিকাশ চাকমা বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছে। মামলায় জেএসএস(এমএন) লারমা গ্রুপের চার শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ ১৭জনকে আসামি করে আরো একটি মামলা করেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মীকে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও হয়রানী করার রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে জনৈক অনিক বিকাশ চাকমা আরো একটি মামলা দায়ের করেছে দাবি করে সাংবাদিক সম্মেলনে জেএসএস নেতৃবৃন্দ বলেন, ভ্রাতিঘাতি সংঘাত অবসানের জন্য আমরা জাতীয় ঐক্যেরও ডাক দিয়েছি। অথচ ভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক দলের হাতে আমাদের ৪৪জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে দায়েরকৃত মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, অনি বিকাশ চাকমা তার এজাহারে সুদর্শন চাকমার লাইসেন্স করা পয়েন্ট টুটু রাইফেল দিয়ে মিঠুন চাকমার মাথায় গুলি করা হয় উল্লেখ করা হলেও তদন্তে  সুদর্শন চাকমার কাছে এ ধরনের কোন অস্ত্র নেই বলে প্রমাণিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৩ জানুয়ারি দুপুরে খাগড়াছড়ি শহরের স্লুইস গেইট এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’র  (ইউপিডিএফ) কেন্দ্রীয় নেতা মিঠুন চাকমা নিহত হয়।

মিঠুন চাকমার হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে ৬ ও ৭ জানুয়ারি পর পর দু’দিন ইউপিডিএফ’র  সড়ক অবরোধ পালনকালে খাগড়াছড়িতে ব্যাপক গাড়ি  ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের সাথে সংঘর্ষ এবং আধা সামরিক বাহিনীর বিজিবি’র গাড়ি বহরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

ইউপিডিএফ মিঠুন চাকমা  হত্যাকাণ্ডের জন্য সদ্য গঠিত ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিককে দায়ী করে আসছে। তবে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এ হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে বলেছেন, এটি প্রসীতের ইউপিডিএফ’র আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে হয়েছে।

এদিকে ঘটনার চারদিন পর গেল ৬ জানুয়ারি এসআই একেএম মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’র (ইউপিডিএফ) কেন্দ্রীয় নেতা মিঠুন চাকমা হত্যাকাণ্ডে ৭/৮ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান জানান, পরিবারের কেউ মামলা না করায় ন্যায় বিচারের স্বার্থে পুলিশ মামলাটি করেছেন। অপর দিকে ৯ জানুয়ারি জনৈক অনি বিকাশ চাকমা নিজেকে নিহত মিঠুন চাকমার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে জেএসএস(এমএন) গ্রুপের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক তাতিন্দ্র লাল চাকমা ওরফে মেজর পেলে, একই দলের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক বাঘাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা, সহ-সভাপতি ও রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট শক্তিমান চাকমা, সদ্য গঠিত ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক’র আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা, সদস্য সচিব শ্যামল কান্তি চাকমা জলেয়াসহ ১৭জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা করে। তবে মিঠুন চাকমার পরিবার পরের দিন ‘মিঠুন চাকমা হত্যাকাণ্ডে পরিবারের পক্ষ থেকে কোন মামলা করা হয়নি’ বলে লিখিত ভাবে  প্রতিবাদ জানান।

উল্লেখ, প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১৯ বছর পর গেল বছরের ১৫ নভেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রভাবশালী পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ ভেঙ্গে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামে আরো একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। বিভক্তির পর সংগঠনটির কোন নেতাকর্মী প্রথম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন