খাগড়াছড়িতে অবরোধ : সন্ত্রাসের পক্ষে জনভোগান্তি

khagrachari-aborodh-news-pic-02-copy

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মাল বোঝাই ট্রাকে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়িতে ‘সুপার জ্যোতি চাকমা‘র মুক্তি সংগ্রাম কমিটি’র ডাকা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি অনেকটা ঢিলেঢালা ভাবে পালিত হয়েছে। তবে এ অবরোধকে সন্ত্রাসের পক্ষে জনভোগান্তি বলে মনে করছেন জেলার সচেতন মহল।

মঙ্গলবার রাতে ‘সুপার জ্যোতি চাকমা‘র মুক্তি সংগ্রাম কমিটি’র পক্ষে কমিটির সদস্য ও দুল্যাতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ত্রিলন চাকমা প্রকাশ দয়াধন স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ অবরোধের ডাক দেন।

রোরবার (১ জানুয়ারি) রাত ২টার দিকে খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমাকে তার  সরকারি বাসভবন থেকে পাচ রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি বিদেশি পিস্তলসহ আটক করে যৌথবাহিনী। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে লক্ষীছড়ি থানায় অস্ত্র আইনের ১৯৭৮ সালের ১৯এর (ক) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। সোমবার বিকালে তাকে খাগড়াছড়ি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মো. নোমানের আদালতে হাজির করা হলে আদালত তার জামিন না-মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠনোর নির্দেশ দেন।

এর পরপরই সোমবার বিকালে খাগড়াছড়িতে তার মুক্তি দাবি করে মানববন্ধন করে জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদ। এর একদিন পরেই বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত লক্ষীছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অংগ্যপ্রু মারমাকে আহ্বায়ক করে গঠিত ‘সুপার জ্যোতি চাকমা‘র মুক্তি সংগ্রাম কমিটি’ এ অবরোধের ডাক দেয়।

অস্ত্রসহ আটক একজনের মুক্তির দাবিতে ডাকা এ অবরোধ কতোটা যৌক্তিক- এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক উপজাতীয় জনপ্রতিনিধি পার্বত্যনিউজকে বলেন, এ অবরোধকে সমর্থন করার কোন সুযোগ নেই। কারণ বিষয়টির ফায়সালা আইনগতভাবেই হতে হবে। এ অবরোধের কারণে পাহাড়ে মানুষে মানুষে আস্থার সঙ্কট তৈরি হবে বলেও মনে করেন তিনি।

মাটিরাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি এমএম জাহাঙ্গীর আলম এ অবরোধকে সন্ত্রাসের পক্ষে জনভোগান্তি উল্লেখ করে বলেন, তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত যারা অবরোধ আহ্বান করেছে। তিনি বলেন, একজন অস্ত্রধারীকে বাঁচাতে এভাবে অবরোধ আহ্বান অবৈধ অস্ত্রধারীদের আরও উৎসাহিত করবে।

এ জাতীয় অবরোধ দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি উল্লেখ করে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও খাগড়াছড়ি পৌরসভার কাউন্সিলর মো. আবদুল মজিদ বলেন, এ অবরোধ আহ্বানকারীদের বাড়ি-ঘরে তল্লাশি করা হলেও অবৈধ অস্ত্র পাওয়া যাবে। একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠির পক্ষে সাধারণ জনগণের ভোগান্তি মেনে নেয়ার মতো নয় দাবি করে তিনি আইন করে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন। পাহাড়ী জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই ইউপিডিএফ-জেএসএসসহ বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের সাথে জড়িত দাবি করে তিনি বলেন, প্রশাসনের এ বিষয়ে আরও কঠোর হওয়া উচিত ছিল।

গেল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পার্বত্য শান্তিচুক্তি চুক্তিবিরোধী উগ্রসাম্প্রদায়িক ইউপিডিএফ’র সমর্থন নিয়ে সুপার জ্যোতি চাকমা খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি পার্বত্য শান্তিচুক্তি চুক্তিবিরোধী উগ্রসাম্প্রদায়িক ইউপিডিএফ’র এজেন্ডা বাস্তবায়নে নানাভাবে তৎপর ছিলেন বলেও জনশ্রুতি আছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন