Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

ক্যাম্পে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারের বুচিডংয়ের ১২টি গ্রামে সেনা ও তাদের দোসর উগ্রপন্থি সশস্ত্র মগ জনগোষ্ঠিরা বার্মিজ ভাষায় বাঙ্গালী লিখা সাদা কার্ড (ন্যাশন্যাল ভেরিফিকেশন কার্ড) ধরিয়ে দেওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের চাপ প্রয়োগ করছে। এমনকি কার্ড নিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের সেনা ক্যাম্পে ধরে নিয়ে নির্যাতন করছে।

যে কারণে সেখানে বসবাসরত অবশিষ্ট রোহিঙ্গারাও এদেশে পাড়ি জমাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকা ডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছে। গত মঙ্গলবার(৩১ অক্টোবার) উখিয়া ও টেকনাফে পৃথক নৌকা ডুবির ঘটনায় শিশু সহ ৭জন রোহিঙ্গা মারা গেছে। তারপরেও রোহিঙ্গা আসা থামেনি।

মিয়ানমারের ওপারের লোকজনের বরাদ দিয়ে সীমান্তে বসবাসকারী স্থানীয়রা জানিয়েছেন ২দিন ধরে উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তের ওপারে মেদি এবং লম্বাবিলের ওপারে কোয়াংছিবন সীমান্তে আরো ৩০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। আশ্রয়হীন এসব রোহিঙ্গারা বৃষ্টিতে ভিজে ক্ষুধায় তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়ছে।

এদিকে উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পলিথিনের ঝুপড়িতে আশ্রিত রোহিঙ্গারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ঠাণ্ডায় কাঁপছে। শীত বস্ত্রের অভাবে শিশুরা নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠাণ্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। বৃষ্টির কারণে অনেকের ঘরে চুলা জ¦লেনি। অভুক্ত অবস্থায় নির্ঘূম রাত কাটাতে হয়েছে আশ্রয়হীন শতশত রোহিঙ্গা পরিবারকে। বুধবার(১ নভেম্বর) কুতুপালং লম্বাশিয়া, মধুরছড়া ক্যাম্প ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। কুতুপালং কমিউনিটি সেন্টারে দায়িত্বরত চিকিৎসক অজিত বড়–য়া জানান, বৃষ্টির কারণে ঠাণ্ডা জনিত রোগে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়েছে।

বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত উখিয়ায় সাড়ে ৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসব রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করলেও সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকার কারণে হাজারেরও অধিক রোহিঙ্গা পরিবার এখনো পর্যন্ত আশ্রয় খুঁজে পায়নি। আশ্রয়হীন এসব রোহিঙ্গারা কারো কারো ঝুপড়ির বারান্দায় ২/৩ফুটের মতো জায়গায় ছোট্ট একটি পলিথিনের আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।

এসব রোহিঙ্গাদের তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তারা ছুটে এসে বলেন, আমাদের নামটা একটু লিখুন, আমরা এ পর্যন্তও কিছু পায়নি। বুচিডংয়ের ওয়াশিলাপাড়া থেকে শাহপরীর দ্বীপ হয়ে আসা আবু ছৈয়দ (৩৫) জানায়, তার স্ত্রীসহ ৫জন ছেলে/মেয়ে নিয়ে ৩তিন আগে মধুরছড়া ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছি। হাতে টাকা পয়সা না থাকায় সে বাঁশ, গাছ পলিথিন কিনতে পারেনি। তাই অন্যের ঝুপড়ির বারান্দায় কোন রকম রাত যাপন করছে। ত্রাণ সামগ্রী না পাওয়ার কারণে চুলোতে আগুন জ¦লেনি। পাশ্ববর্তী রোহিঙ্গারা কিছু খাবার দিয়েছিল, তা ছেলে/মেয়েরা ভাগাভাগী করে খেয়েছে।

মঙ্গলবার রাতভর বৃষ্টি হওয়ার কারণে আশ্রিত ও অনাশ্রিত সকল শ্রেণি পেশার রোহিঙ্গাদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে। লম্বাশিয়া ক্যাম্পের আশ্রিত বনি আলম(৪৫) জানায়, পাহাড় থেকে বেয়ে আসা বৃষ্টির পানিতে তার ঝুপড়ি কাদা পানিতে ভরে গেছে। একটুখানি বসার জায়গাও ছিলনা। ছেলে/মেয়ে নিয়ে রাতভর নির্ঘুম রাত যাপন করতে হয়েছে। একাধিক পরিবার জানায়, বৃষ্টির কারণে ঝুপড়িতে আশ্রিত প্রতিটি রোহিঙ্গার পরিবার কষ্ট পেয়েছে। লাকড়ির অভাবে অনেকেই রান্না করতে পারেনি।

এছাড়াও কুতুপালং, বালুখালী, ময়নারঘোনা, হাকিমপাড়া, তাজনিমারখোলা, শফিউল্লাহকাটা ঘুরে দেখা যায়, সদ্য অনুপ্রবেশকারী শতশত পরিবার রোহিঙ্গা মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুলের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছে। এসময় বৃষ্টির পাশাপাশি ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। একদিকে আশ্রয় ভাত, কাপড়ের অভাব অন্যদিকে রোগাক্রান্ত ছেলে/মেয়েদের নিয়ে অমানবিক দুর্ভোগে পড়েছে শতশত রোহিঙ্গা পরিবার।

রোহিঙ্গা নেতা ডা. জাফর আলম জানান, মিয়ানমারের বুচিডং এলাকার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে উগ্র মগ জনগোষ্ঠি ও সশস্ত্র মিয়ানমার সেনা সদস্যরা গ্রামে গ্রামে ঢুকে রোহিঙ্গাদের সাদা কার্ড নেওয়ার জন্য জোর জবরদস্তি করছে। এসব কার্ড গ্রহণ না করায় সেনা ক্যাম্পে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। প্রাণ ভয়ে এসব রোহিঙ্গারা এদেশে চলে আসার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতিমধ্যেই সীমান্তের ওপারে কোয়াংছিবন ও মেদি এলাকায় প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।

জড়ো হওয়া ওসব রোহিঙ্গাদের কয়েকটি পরিবার দালালের মাধ্যমে সীমান্তের আঞ্জুমানপাড়া দিয়ে বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এদের একজন বুচিডং মগনিপাড়া থেকে আসা দিল মোহাম্মদ (৫৫) জানায়, বুচিডং এলাকায় মিয়ানমার সেনারা নতুন করে নির্যাতন শুরু করেছে। তারা বসতবাড়িতে ঢুকে নিবন্ধনের কথা বলে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করছে। বিনিময়ে সাদা কার্ড ধরিয়ে দিচ্ছে। তাদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করছেনা। ফলে এসব রোহিঙ্গারা রাতারাতি গ্রাম ত্যাগ করে সীমান্ত এলাকায় জড়ো হচ্ছে।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক ও সেক্রেটারি মোহাম্মদ নুর জানান, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এদের অনেকেই থাকা জায়গা যোগাড় করতে পারেনি। আশ্রয়হীন এসব রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ভাবে কষ্টের শিকার হচ্ছে। বেসরকারি ভাবে প্রদত্ত ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে আশ্রয়হীন এসব রোহিঙ্গারা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। তবে ক্যাম্পে দায়িত্বরত সেনা কর্মকর্তারা জানান, রোহিঙ্গাদের সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন জানান, বৃষ্টির কারনে ঠাণ্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জানান, গত ৩দিনে প্রায় আড়াই শতাধিক মা ও শিশু চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে শিশু রোগীর সংখ্যা আরো বাড়ছে বলেও তিনি জানায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন