কুতুবদিয়ায় পর্যটন বিকাশে মেগা প্রকল্প


এম. এ মান্নান

দেশের মৌল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। বাতিঘরের জন্য বিখ্যাত বঙ্গোপসাগর বেষ্টিত এ জনপদের পুরোটাই যেন পর্যটনের বিশাল ক্ষেত্র। দেশের পর্যটন শিল্পের অফুরন্ত সম্ভার কক্সবাজার জেলার উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার এ দ্বীপটি।

এ দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে রয়েছে প্রায় ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র্র সৈকত। ঐতিহাসিক কুতুব শরীফ দরবার, বিভিন্ন স্থানে সুদীর্ঘ লবণের মাঠ, গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে এনে শুঁটকি তৈরি করার শুঁটকিমহাল, পশ্চিমে সৈকত জুড়ে সাগরের জলরাশির বিশাল বিশাল ঢেউ বেড়িবাঁধে আছড়ে পড়ার মোহনীয় দৃশ্য, দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ পাইলট প্রকল্প, উপকূলীয় ঝাউবন ঘেরা সমুদ্র সৈকতে সূর্যাস্ত রাতের অন্ধকারে জাহাজকে পথ দেখানো নতুন বাতিঘরসহ সব কিছুই যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে সাগর কন্যা কুতুবদিয়ায়।

পর্যটন-ব্যবসার অনন্য ক্ষেত্রও রয়েছে এই দ্বীপে। কিন্তু অযত্ন-অবহেলা এবং রাজনৈতিক গ্যাঁড়াকলে ব্যবসা আর পর্যটনের ক্ষেত্র হিসেবে দ্বীপের কোন উন্নয়ন হয়নি এতদিন। দ্বীপের প্রায় দেড় লক্ষ মানুষও বঞ্চিত হচ্ছে আশার আলো থেকে।

তবে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পর্যটন বিকাশে মেগা প্রকল্প হাতে নেয়ায় আশার আলো দেখছে দ্বীপবাসী। ইতিমধ্যে সমুদ্র সৈকতে মাটি ভরাট, শহীদ মিনারে আলোকোজ্জ্বল মাঠ, ফুলের নার্সারি, পার্ক, যোগাযোগ সুবিধা ইত্যাদির কাজ চলছে। তাই এখন আর দেশি-বিদেশি পর্যটকরা বঞ্চিত হবেন না কুতুবদিয়ার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ থেকে। যুগ যুগ ধরে পর্যটন আর ব্যবসায়ের ক্ষেত্র হিসেবে অপার সম্ভাবনার আলো দেখার অপেক্ষা এখন।

দেশের মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোলে কুতুবদিয়া দ্বীপের অবস্থান। মানচিত্রে কুতুবদিয়া দ্বীপ দেখতে অনেকটা বেসবলের ব্যাট বা মুরগির রানের মতো। চারদিকে পানি বেষ্টিত কুতুবদিয়ার পশ্চিমে সুবিস্তৃত বঙ্গোপসাগর, পূর্বে কুতুবদিয়া চ্যানেল, দক্ষিণে সাগর পেরিয়ে মহেশখালী এবং উত্তরে সাগর পেরিয়ে বাঁশখালী। সড়কপথে পেকুয়ার মগনামা ঘাটে গিয়ে নৌ-পথে বোটে তিন কিলোমিটারেরও বেশি প্রশস্ত কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়ে পৌঁছানো যায় এখানে। সাধারণ বোটে ২০-৩০ মিনিট, স্পিড বোটে ৫-৭ মিনিট সময় লাগে পারাপারে। কুতুবদিয়ার ৬টি ইউনিয়নরে মধ্যে শতাব্দীকাল (১৯১৭ সালে) পূর্বে বড়ঘোপ ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত হয় কুতুবদিয়া থানা এবং ১৯৮৩ সালে

উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। গত ৩০ ডিসেম্বর কুতুবদিয়া থানার শতবর্ষ উদযাপন হয়েছে জাঁকজমক ভাবে।
উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক সাধক শাহ আবদুল মালেক মহিউদ্দিন আল-কুতুবী (রহ.) এর জন্মও এই দ্বীপে। তাঁর ঐতিহাসিক কুতুব শরীফ দরবার ছাড়াও এখানে আরো রয়েছে কুতুব আউলিয়ার মাজার, ঐতিহাসিক কালারমার মসজিদ, ১৮৪৬ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত ঐতিহাসিক বাতিঘরের ধবংসাবশেষ, নতুন বাতি ঘর, শুঁটকি মহাল, দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প, ঝাউবাগানসহ ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকত।
মালেক শাহের ওফাত উপলক্ষে প্রতিবছর ১৯ ফেব্রুয়ারি বার্ষিক ওরশ অনুষ্ঠিত হয় এখানে।

বার্ষিক ফাতিহায় কয়েক লাখ মানুষ কুতুব শরীফ দরবারে সমবেত হন। যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে সরকারের সুনজর আগের তুলনায় বেড়েছে। সারা বছরই কুতুবদিয়ায় পর্যটক যেমন বাড়তে শুরু করেছে, তেমনি এখানকার মানুষ ও সরকার আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। দ্বীপ রক্ষায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ, সংস্কারের কাজ অনেকটাই এগিয়ে। এটি লবণ ও শুঁটকি মাছের অন্যতম ক্ষেত্র। দ্বীপের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রয়োজন বিদ্যুৎ ও শক্তিশালী বেড়িবাঁধ, যা দ্বীপের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের অন্যতম পর্যটন ও ব্যবসা ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলবে কুতুবদিয়াকে।

যোগাযোগের দুরবস্থা ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধায় কিছুটা পিছিয়ে থাকায় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারছে না এ দ্বীপ। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে পর্যটন ও ব্যবসায়ের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে ওঠবে এ দ্বীপ। যদি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় তাহলে কুতুবদিয়ার ঝাউবন ঘেরা বিশাল সমুদ্র সৈকতও পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠতে পারে।

এ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চৌধুরী বলেন, দ্বীপের দৃষ্টিনন্দন পর্যটন বিকাশে মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সরকারি বিশেষ বরাদ্দ ছাড়াও বেসরকারি ও ব্যক্তি বিশেষকে যুক্ত করা হচ্ছে পর্যটন বিকাশে। স্পটগুলো রক্ষার্থে ও নতুন স্পট তৈরিতে যথাযোগ্য উদ্যোগ চলছে। ইতোমধ্যে চলতি পর্যটন মৌওসুমে পর্যটকরা আসতেও শুরু করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে আরো সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে কুতুবদিয়ার পর্যটন সম্ভাবনাকে পুরোমাত্রায় কাজে লাগিয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের আর্থিকভাবে লাভবান করার পাশাপাশি সরকারও এখান থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন