কুতুবদিয়ায় ধূরুংবাজার কৃষি ব্যাংকে কাঙ্খিত সেবা মিলছে না

 

কুতুবদিয়া প্রতিনিধি:

কুতুবদিয়ায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ধূরংবাজার শাখায় কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। শাখা ম্যানেজারের স্বেচ্ছাচারিতায় স্থানীয় ব্র্যাক কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন উঠাতে না পারায় সোমবার (৩১ জুলাই) ব্যাংকেই তুঘলগি কাণ্ড ঘটেছে। হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।

রবিবার কৃষি ব্যাংক ধুরুংবাজার শাখায় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের ধূরুং শাখার স্টাফদের বেতনের সিট ও ৩০হাজার টাকা জমা দেন।  সোমবার তাদের ব্যক্তিগত একাউন্টে বেতনের টাকা তুলতে গেলে ব্যাংকের ম্যানেজার বেতন প্রদানে অনিহা প্রকাশ করে।

এক পর্যায়ে ব্যাংকের অন্যান্য স্টাফ ও ব্র্যাকের স্টাফদের সাথে ধাক্কা-ধাক্কি হয়। উত্তেজনা দেখা দিলে আশপাশের লোকজন এসে থামিয়ে দেন। এ শাখায় শুধু হয়রানি নয়, ঋণ নিতে গেলে শতকরা ১০ভাগ ঘুষ যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। মঙ্গলবার ৪০হাজার টাকার ঋণের জন্য ৪হাজার টাকা নেয়া হয়েছে এক লবন চাষির কাছ থেকে।

দক্ষিণ ধূরুং নুরার পাড়ার লবন চাষি নুরুল আবছার জানান, ৪০হাজার টাকা ঋণের জন্য তাকে পনের দিন ঘুরিয়ে গত সোমবার দাবিকৃত ৪হাজার টাকার স্থলে ৫০০ টাকা কম  দেয়ায় সেদিন ঋণ দেয় নি। মঙ্গলবার সকালে এক কর্মচারির মাধ্যমে ৪হাজার টাকা দিলে ১২টার দিকে তাকে ঋণ দেয়া হয়। একই দিন প্রদীপ পাড়ার বাসন্তী রানীর বীমার টাকা উঠাতে একটি সঞ্চয়ী হিসাব(৪৮৮২) খুলতে ফরম পুরণ বাবদ আরেক কর্মচারি ৪০০ টাকা নিয়েছে বলে ভুক্তভোগী জানান।

ডিপিএস হিসাব খুলতেও একই ভাবে ১০০-৫০০ টাকা নেয়া হয় বলে জানা গেছে।

ব্র্যাকের হিসাব কর্মকর্তা রবীন্দ্র দে, প্রজেক্ট অর্গানাইজার হেলাল উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম, রন্ট কুমার কর প্রমূখ জানান, সংস্থার মূল একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা থাকা সত্বেও ম্যানেজার বারবার তাদের বেতন দিতে নানা গড়িমসি করেন। আজ না কাল এমন করে হয়রানি করেন।

তারা আরো বলেন,  গ্রাহকদের ঋনের টাকা প্রদানের জন্য জরুরী চেক দেয়া হলেও ঘন্টার পর ঘন্টা তাদের বসিয়ে রাখা হয়। ওই শাখার ক্যাশিয়ার উর্মি বলেন, জুন ক্লোজিং এর কথা বলে ওই মাসের বেতন তিনি ব্যাংকে ৩বার গিয়েও উঠাতে পারেননি। তিনি আরো বলেন, কৃষি ব্যাংকে তার একটি ডিপিএস মেয়াদ পুর্তিতে টাকা উঠাতে গেলে বর্তমান ম্যানেজার রুঢ় আচরণ করে তাকে ২ মাস পরে যেতে বলেন। পরে কৃষি ব্যাংক কুতুবদিয়া শাখা ম্যানেজারের হস্তক্ষেপে দ্রুত তার অর্থ ফেরৎ পান।

ব্র্যাকের ধূরুং শাখা ম্যানেজার উৎপল পাল বলেন, উপজেলায় শীর্ষ বেসরকারি সংস্থা হিসেবে কৃষি ব্যাংক ধূরুং শাখায় অন্তত ১৪-১৫ বছর ধরে তারা নিয়মিত লেনদেন করে আসছেন। বর্তমান ম্যানেজার আসার পর থেকেই তারা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেননা। যার দরুণ তাদের গ্রাহকদের ঋণসহ নানা ব্যাংকিং সেবা দিতেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া সোমবার বেতন নিতে এসে ব্যাংকের কতিপয় কর্মচারিদের হাতে তারা লাঞ্চিত হয়েছেন।  যে কারণে দীর্ঘ ১৪ বছর পর তাদের সংস্থার মূল হিসাবসহ স্টাফদের বেতনভাতার প্রয়োজনে ব্যক্তিগত একাউন্টও প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে  জানান তিনি।

ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার দিলীপ চক্রবর্তী বলেন, গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ি প্রায়ই অর্থঘাটতি থাকে। এটি তারা বোঝার চেষ্টা করেন না। ব্যাংকের স্টাফ স্বল্পতা প্রকট। অধিকাংশ সময় কাজের চাপ বেশি।

তিনি বলেন, ব্র্যাকের লেনদেন তারা গুঁটিয়ে নিচ্ছেন। শুধু বেতনের জন্য হিসাব পরিচালনা করার দরুণ তাদের ম্যানেজারকে আসতে বললেও তিনি আসেন নি। যে কারণে একদিন দেরি হওয়ায় ব্যাংকে তারা এসে হৈচৈ শুরু করেন। এটি কাম্য নয়। কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে বৃহৎ একটা সংস্থার লেনদেন গুঁটিয়ে নিচ্ছে। এমন প্রশ্নের জবাবে ম্যানেজার বলেন, এটা তাদের কথা । আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন