কাউখালীর শিশু সদনের ৬ মেয়ে শিক্ষার্থীর ভুতুরে আচরণ! আক্রান্তদের ‘ভার্জিনিটি টেস্ট’র কথা বলছেন চিকিৎসকরা
প্রতিনিধি কাউখালী:
রাঙামাটি কাউখালীর মারমা পল্লী বড়ডলু মৈত্রী শিশু সদনে অসুস্থ্য ৬ মেয়ে শিক্ষার্থীর জীবন তন্ত্র-মন্ত্রে আটকে আছে। অস্বাভাবিক আচরণের ৬ দিনেও এসব শিক্ষার্থীদের চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়নি। এদিকে কথিত ‘ভুতে ধরা’ নিয়ে এখনও কৌতুহল কাটেনি।
তবে ওই ৬ শিক্ষার্থী যৌণ নিপীড়ণের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে থাকতে পারে এমন অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসকরা বলছেন ‘আক্রান্তদের ভার্জিনিটি টেস্ট (কুমারিত্ব পরীক্ষা) করা ছাড়া যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যাবেনা’।
শনিবার(২১ জুলাই) কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গঠিত ৫ সদস্যের মেডিকেল টিম শিশু সদনটি পরিদর্শন করেছেন। তারা আক্রান্তরা ছাড়াও সদনের অন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলেছেন। এ সময় বেশি আক্রান্ত দুই কিশোরীকে সদনে পাওয়া যায়নি। তাদেরকে তিনদিন আগে কবিরাজী চিকিৎসার কথা বলে শিশু সদন থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। এঘটনার কদিন আগে শিশু সদনটির খণ্ডকালীন শিক্ষক (প্রধান শিক্ষকের বড় ভাইয়ের ছেলে) অংচাচিং মারমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব কারণে ঘটনাটি নিয়ে বেশ কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।
মেডিকেল টিম ছাড়া ওই শিশু সদনে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কেউ যাননি। শনিবার বিকেলে এই প্রতিবেদক মুঠোফোনে ইউএনও জহিরুল হায়াতের কাছে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন। যৌন হয়রানীর বিষয়টি তিনি অবগত নন বলে জানান। তবে শনিবার সরেজমিন শিশু সদনে গিয়ে দেখা যায় আক্রান্ত কিশোরীরা সদনেই অবস্থান করছে।
ঘটনাস্থলে মেডিকেল টিমের চিকিৎসক প্রদীপ কুমার নাথ সাংবাদিকদের জানান, ৬ মেয়ে শিক্ষার্থীর ভার্জিনিটি টেস্ট (কুমারিত্ব পরীক্ষা) করা ছাড়া যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে কিনা নিশ্চিত হওয়া যাবেনা। টিমের অপর সদস্য আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসাইন জানান, ৪ শিক্ষার্থী কিছুটা স্বাভাবিক আছে। রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে।
সদনে পাঠদান বন্ধ: ৬ দিন ধরে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে আছে। খাওয়া দাওয়াও ঠিক মতো হচ্ছেনা শিক্ষার্থীদের। সবার মধ্যেই ভয় দেখা দিয়েছে। স্থানীয় চিংথোয়াই কার্বারী বলেন, ‘এ ঘটনায় জনমনে ভয় তৈরি হয়েছে। অন্য শিক্ষার্থীরাও ভয়ে আছে’। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক অংচিনু মারমা জানান, বেশি আক্রান্ত দুই শিক্ষার্থীকে তাদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া সদনের সব শিক্ষার্থীকে ছুটি দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার কার্যক্রম শুরু করবো।
গত ১৬ জুলাই বিকেল থেকে কাউখালী উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের মারমা পল্লী বড়ডলু মৈত্রী শিশু সদনের ৬ মেয়ে শিক্ষার্থী আস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। ৬ মেয়ে শিক্ষার্থীর একজন একটু হেঁসে উঠলেই বাকিরা খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠছে। একজনের কান্নায় অন্যরা বিলাপ করছে। এমনকি একজন মাটিতে শুয়ে হাত-পা ছুড়লে বাকিরাও অবিকল তাই করছে। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে তা বলতে পারছেন না কেউই।
এরপর থেকেই চিকিৎসকের পরিবর্তে স্থানীয় কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বিষয়টিকে কর্তৃপক্ষ ‘ভুতে ধরেছে’ বলে দাবি করলেও স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ওই মেয়ে শিক্ষার্থী যৌণ নিপীড়ণের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে থাকতে পারে। মূলত বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাবার ভয়ে চিকিসাকেন্দ্রে নেয়া হচ্ছেনা। বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি করেছেন স্থানীয় অনেকেই।