কক্সবাজার পৌর নির্বাচন: জমে উঠেছে প্রচারণা, মানছেনা আচরণ বিধি
কক্সবাজার প্রতিনিধি:
ঘনিয়ে আসছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন। ভোটের লড়াইয়ের সেই মাহেন্দ্র ক্ষণকে সামনে রেখে পুরোদুমে প্রচারণা চালাচ্ছে প্রার্থীরা। মেয়র, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীরা সবাই সমান হারে প্রচারণা চালাচ্ছে।
সবাই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতা করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। প্রার্থীদের প্রচারণা জমে ওঠায় পুরো পৌর এলাকা ভোটের আমেজে মুখর হয়ে উঠেছে।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, গত ৪ জুলাই প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে সব প্রার্থী পুরোদমে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েন। সেই থেকে তারা লাগাতার গণসংযোগসহ নানাভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। মূল্যবান ভোটটি পেতে ভোটারদের ঘরে ঘরে হাজির হচ্ছে প্রার্থীরা। উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি আর অঙ্গীকার ব্যক্ত করছেন ভোটারদের কাছে। ভোটারদের হাতে ধরে, বুকে জড়িয়ে আর কুশল বিনিময় করে ভোট প্রত্যাশা করছেন।
পাড়ায় পাড়ায়, অলিতে-গলিতে দিন পেরিয়ে রাত অবধি চলছে একটানা প্রচারণা। একই সাথে মাইকিং আর নানা প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে সমানভাবে। মাইকিং চলছে দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অলি-গলিসহ পুরো শহরে। তবে এতে শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়র প্রার্থীদের পাঁচজনই ভোটের প্রচারণা নিয়ে মাঠে রয়েছেন। পাঁচ প্রার্থীই সমর্থক বেষ্টিত হয়ে নিজেরা ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। একই সঙ্গে তাদের স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের লোকজন, দলীয় নেতাকর্মী এবং সমর্থকরাও তাদের পক্ষে পৃথকভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যানের প্রচারণায় এগিয়ে থাকলেও খুব একটা পিছিয়ে নেই নাগরিক কমিটির প্রার্থী (জামায়াত সমর্থিত) বর্তমান মেয়র সরওয়ার কামাল (নারিকেল গাছ) এবং বিএনপি মনোনিত ধানের শীষের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম। তারাও সারাদিন বিভিন্ন পাড়ায়-পাড়ায়, অলিতে-গলিতে ঘুরে ঘুরে ধর্ণা দিচ্ছেন ভোটারদের দরজায়। একইভাবে স্ত্রী-সন্তান ও পবিরারের লোকজনসহ দলীয় নেতাকর্মী এবং সমর্থকেরাও তাদের জন্য পৃথক পৃথক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বিএনপির প্রার্থী রফিকুল ইসলামের পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত প্রচারণা চালাচ্ছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. শামীম আরা স্বপ্না।
একইভাবে জাতীয় পার্টি মনোনিত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী রুহুল আমিন সিকদার এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র মনোনিত হাতপাখার প্রার্থী জাহেদুর রহমানও নিয়মিত প্রচারণা চালাচ্ছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও প্রতিযোগী প্রার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতা দিয়ে সমানতালে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এদিকে নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে বলেও অভিযোগ আসছে। কমবেশি সব প্রার্থীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আসছে। বিশেষ করে গণসংযোগ, মাইংকিং নিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে বেশি।
গেল শনিবার শহরের নুনিয়ার ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষকদের মাঝে প্রচারণা চালিয়েছেন নৌকা প্রতীকের এক সমর্থক। এই দৃশ্যের একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে বিরোধী প্রার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়া ২নং ওয়ার্ডের সরকার দলীয় প্রার্থী একাধিক নির্বাচনী অফিস করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একই সাথে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিংয়ের সময় সীমা থাকলেও আরও বেশি রাত অবধি মাইকিং করছে অনেক প্রার্থী।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে পাঁচ মেয়র প্রার্থীসহ মোট ৮৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে। কক্সবাজার পৌর সভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৮৩ হাজার ৭২৮ জন। এতে পুরুষ ভোটার ৪৪ হাজার ৩৭৩ জন ও মহিলা ভোটার ৩৯ হাজার ৩৫৫ জন।
আগামী ২৫ জুলাই ভোট গ্রহণ করা হবে। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনের সাড়ে ৭ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছে। প্রচারণা করতে গিয়ে অনেক প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে বলে জানতে পারছি। তবে অভিযোগ খুব একটা আসছে না। তারপরও প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি। না হলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।’
এদিকে নির্বাচনে প্রার্থীদের আচরণ বিধি মানতে একটি নীতিমালা জারি করেছে জেলা নির্বাচন। ২৫ জুলাই নির্বাচন উপলক্ষে এ বিধিমালা প্রকাশ করা হয়।
একটি অবাধ, সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সংঘটিত করতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সকল প্রার্থীর অবগতির জন্য বিধিমালায় বিভিন্ন শর্তাদি উল্লেখ করা হয়েছে।
তন্মধ্যে, সকল প্রার্থীগণ তাদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের বাইরে প্রচার প্রচারণা চলাতে পারবেনা ও দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত একটি ওয়ার্ডে একাধিক মাইক ব্যবহার না করে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর জন্য এ বিধিমালা প্রকাশ পায়।
অন্যান্য বিধিমালার মধ্যে রয়েছে, কোন প্রার্থী তার নির্বাচনী পোষ্টার কোন স্থাপনার দেয়াল, বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছ-পালা, ব্রীজ-কালভার্ট, সড়ক বিভাজক ইত্যাদিতে লাগাতে পারবে না।
মেয়র প্রার্থীদের জন্য স্পষ্ট বলা হয়েছে, তাদের নির্বাচনী এলাকায় সর্বোচ্চ ৫টি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন এবং সংরক্ষিত মহিলা প্রার্থী ও কাউন্সিলরগণ তাদের নির্বাচনী এলাকা তথা এক ওয়ার্ডে ১টি করে নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন। অর্থাৎ মহিলা র্প্রাথীগণ ১টি করে তিন ওয়ার্ডে ৩টি ক্যাম্প স্থাপন করতে পারবেন।
শর্ত থাকে যে, উক্ত নির্বাচনী ক্যাম্পগুলো সর্বোচ্চ ৩৬ বর্গ মিটার হতে পারবে, এর বেশি না এবং ক্যাম্পে কোন প্রকার আলোক সজ্জা করা যাবে না।
শব্দ বর্ধনকারী যন্ত্র টিভি, ভিসিডি ও ক্যাবল নেটওয়ার্ক সংযুক্ত স্যাটেলাইট চ্যানেল চালানো যাবে না।
কোন প্রকার জীবন্ত প্রতীক ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না এবং নির্বাচনী প্রতীকের আকার, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা কোনভাবেই ৩ মিটারের বেশি হতে পারবে না।
কোন প্রার্থী সংশ্লিষ্ট পৌরসভা বা কোন প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে বা গোপনে কোন প্রকার চাঁদা বা অনুদান দিতে বা অঙ্গিকার করতে পারবেন না।
জনসাধারণের চলাচলের পথ বন্ধ রেখে, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে নির্বাচনী পথসভা, মিছিল মিটিং সভা/সমাবেশ কিংবা শো-ডাউন করা যাবে না।
কোন প্রার্থী বা তার পক্ষে থেকে কোন ব্যক্তি ধর্মীয় উপসনালয়ে নির্বাচনী প্রচরাণা চলাতে পারবে না। নির্বাচনী প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য প্রদান, কোন ধরনের তিক্ত ও উস্কানীমূলক বা মানহানিকর কিংবা লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন বক্তব্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সবশেষে, প্রার্থীর ছবি এবং প্রতীক সম্বলিত টি-শার্ট, ফতুয়া, জ্যাকেট, টুপি, পাঞ্জাবী ব্যবহার করতে পারবে না বলে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে এ নির্বাচনী বিধিমালাতে।
এসব বিধিমালার আলোকে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য সকলকে স্বাগতম জানান, কক্সবাজার নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং অফিসার।