কক্সবাজারে নানা আয়োজন আর উচ্ছ্বাসে বর্ষবরণ

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

বর্ণিল প্রাণের উচ্ছ্বাসে বাংলা নববর্ষকে বরণ করেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারবাসী। ‘অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে’ এ শ্লোগান নিয়ে আয়োজন করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার।

‘মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা, অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা’ এই আহবানে ররিবার (১৪ এপ্রিল) নতুন বছরকে বরণ করে নিতে মেতেছিল পর্যটন শহর।

রবিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে ভোরের আলতো হাওয়ায় বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে র‌্যালিটি শহরের প্রধান সড়ক ঘুড়ে শহীদ দৌলত ময়দানে শেষ হয়।

এসময় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

র‌্যালিতে বড়দের পাশাপাশি ছোট্টদের উপস্থিতি উৎসবে মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

পরে বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে দিনব্যাপী কক্সবাজারে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও পান্তা ইলিশের আয়োজন।

জয়ধ্বনি চলে কক্সবাজার শহীদ দৌলত মাঠে। শিশুরা গাইছে মনের মাধুরি দিয়ে বাঙালির ঐহিত্যসমৃদ্ধ নানা গান। গাইছে- এসো হে বৈশাখ এসো। নতুন এই দিনে বসে পান্তা-ইলিশ, পিঠা-পুলি বিক্রির হাঠ। বিক্রি হয় নানা স্বাদের ফলের রস। শিশুদের চোয়ালে শিল্পির তুলিছে আঁকছে ১৪২৬ বঙ্গাব্দ, এসো বৈশাখ এসো, শুভ বাংলা নববর্ষ ইত্যাদি।

পরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিচ বাইক প্রতিযোগিতা ও ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

কক্সবাজারে বর্ষবরণের উৎসবে কেউ এসেছেন পরিবার পরিজন নিয়ে, কেউ এসেছেন যুগল। আবার অনেকেই এসেছেন দল বেধে। তরুণ-তরুণী, শিশুরা আর সব বয়সের নারী-পুরুষ সেজেছেন রঙিণ সাজে। নারীরা সাদা জমিনে লাল পেড়ে শাড়িতে খোঁপায় সাদা ফুল, আর পুরুষদের লাল-সাদা পাঞ্জাবি-পাজামার সাজের অনুকরণে শিশু-কিশোরদের বর্ণিল সাজে সেজেছে বাংলাদেশ।

পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে নতুন দিনের শপথ নিয়েছে সবাই।

মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর লোকজ মেলায় ভিন্ন এক সাজে সেজেছে গোটা কক্সবাজার।

শোভাযাত্রা উপলক্ষে সকাল থেকেই কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি ময়দান ও জেলা প্রশাসন চত্বর এলাকায় মানুষ জড়ো হতে থাকেন। ৯টা বাজতেই পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। লাল-সাদা পোশাকে উচ্ছ্বল নারীদের মাথায় শোভিত নানা রঙের ফুল। তরুণদের বাজারি সাজ। বাঁশি-ভেপু আর বাদ্যের শব্দে আনন্দের উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। তপ্ত রোদে ঘেমে ওঠেন সবাই, হাতে হাতে বর্ণিল পাখা।

জেলা প্রশাসন ছাড়াও কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ, কক্সবাজার প্রেসক্লাব, সরকারি কলেজ, সিটি কলেজ ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ আরও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বর্ষবরণের নানা কর্মসূচি পালন করেন।

এদিকে বর্ষবরণে ব্যাপক পর্যটক সমাগম ঘটে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। বিকেলে সৈকত এলাকায় তীল ধারনের ঠাঁই ছিল না পর্যটকদের। হোটেল-মোটেল ও কটেজে কোন রুমই খালি ছিল না।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও তারকা মানের হোটেল গুলোতে নিজেদের মতো করে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে কক্সবাজার শরের অধিকাংশ হোটেল-গেষ্ট হাউজ অগ্রিম বুকিং ছিল।

তবে বরাবরের মত পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন হোটেলে রুম বুকিংয়ে বিশেষ ছাড়ও দিচ্ছে। এতে করে এবছর পর্যটক কক্সবাজারের প্রতি আরও বেশী আগ্রহী হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের বিভিন্ন বৈশাখী মেলার খাবার স্টলে ইলিশ পান্তা খাবারের আয়োজন করেছে বিভিন্ন হোটেল। শহরের অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো থেকে শুরু করে কলাতলি ও সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে ভ্রাম্যমাণ রেস্টুরেন্টে ছিল ইলিশ-পান্তার আয়োজন।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, কক্সবাজারে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উদযাপনে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজারে নানা আয়োজন আর উচ্ছ্বাসে বর্ষবরণ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন