খাগড়াছড়িতে মহাজোটের প্রার্থি হিসাবে জাতীয় পার্টি থাকবে আওয়ামী লীগ নয়- সোলাইমান আলম শেঠ
সোলাইমান আলম শেঠ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। চট্টগ্রামের বনেদী ব্যবসায়ী। দাদা চট্টগ্রামের জমিদার ছিলো বলে তার দাবী। বাবা মাহবুবুল আলম শেঠ। পারিবারিক ব্যবসা রিয়েল এস্টেট। শেঠ প্রোপার্টিজ নামে চলে এই ব্যবসা। বর্তমানে যার এমডি তিনি। এর বাইরেও এক্সপোর্ট, ইমপোর্টের ব্যবসা রয়েছে-যেগুলো পরিবারের অন্য সদস্যরা দেখাশোনা করে। চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেই পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন তিনি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খাগড়াছড়ি-২৯৮ আসনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। বর্তমানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মহাজোটের মনোনয়ন নিতে। সম্প্রতি পার্বত্যনিউজের সাথে এই নির্বাচন ভাবনা নিয়ে কথা বলেন তিনি। তার সে আলাপচারিতা নিম্নে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
পার্বত্যনিউজ: আপনার বাড়ি চট্টগ্রামে। কেন্দ্রীয় রাজনীতি করেন। খাগড়াছড়িতে নির্বাচন করতে গেলেন কেন?
সোলাইমান শেঠ: আমরা ১৯৭৮ সাল থেকে মাটিরাঙ্গায় ব্যবসা করি। সেখানে স’মিল ও মার্কেট, বাগান এবং আরও জায়গা জমির মালিক। খাগড়াছড়ির সাথে আমার বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। আবেগের সম্পর্ক। আমি খাগড়াছড়ির মানুষকে খুব ভালবাসি। এরশাদ সাহেব যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি খাগড়াছড়ির জেলা পরিষদ গঠন করেন। তখন থেকেই তাঁর রাজনীতি ও তাকে আমার ভালো লাগে।
খাগড়াছড়ির মানুষ খুব সহজ সরল, আমার তাদের খুব ভালো লাগে। যদি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করতে পারি, তবে একটি সুন্দর খাগড়াছড়ি উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
আপনি জানেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমি মহাজোট থেকে প্রার্থী ছিলাম। কুজেন বাবু (কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরা) প্রথমে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন উনি নির্বাচন করবেন না এবং আমাকে সমর্থন করবেন। পরবর্তীতে কেন যেন উনি আবার আসলেন জানি না। তাতে আমার কোনো দুঃখ নাই। রাজনীতির মাঠে যেহেতু আছি, আজ না হয় কাল কিংবা পরশু আমি আসব অবশ্যই।
পার্বত্যনিউজ: কিন্তু ওখানে তো মহাজোট থেকে প্রার্থি দেয়া হয়েছে।? আপনারা তো জোটবদ্ধ নির্বাচন করছেন?
সোলাইমান শেঠ: মহাজোট থেকে এখনো কোনো প্রার্থী দেওয়া হয়নি। এখানে ওপেন করেই দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকেও দেওয়া হয়েছে, জাতীয় পার্টি থেকেও দেওয়া হয়েছে। আমরা মহাজোটকে অনেক সিট ছেড়েছি। মহাজোটের উচিত এখানে ছেড়ে দেওয়া। তিনটি পাহাড়ী আসনে একটি বাঙালিকে দেওয়া উচিত। বাঙালিদের অস্তিত্বের প্রশ্ন এটা। আমি যদি ওখানে টিকে যাই, পাহাড়ি বাঙালিকে এক করে দিতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।
পার্বত্যনিউজ: কিন্তু খাগড়াছড়ির অনেক লোকে তো আপনাকে বসন্তের কোকিল বলে?
সোলাইমান শেঠ: ২০১৪ সাল থেকে দীর্ঘ পাঁচ বছর আমি খাগড়াছড়ির রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম না। এখানে আমাদের কমিটি আছে। জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তর দল। সবাই বলে বিএনপি হল দ্বিতীয় বৃহত্তর। আমিও বলি বিএনপি দ্বিতীয় দল। কিন্তু আমরাও কোনো অংশে কম নয়। আমরা যেদিকে হাত বাড়াই সেদিকেই সরকার গঠন হয়। আমরা যদি বিএনপির দিকে হাত বাড়াই তাহলে বিএনপি সরকার গঠন করে, যদি আ’লীদের দিকে হাত বাড়াই তাহলে আ’লীগ সরকার গঠন করে। ৯৬ থেকে শুরু করে তিন তিনটা টার্মে আমরা হাত বাড়িয়েছিলাম বলে আ’লীগ সরকার গঠন করেছে। জাতীয় পার্টি বাংলাদেশে একটা ফ্যাক্টর। ছোটও বলা যায় না আবার বড়ও বলা যায় না। কী বলা যায় তা জনগণই জানে। আমরা যেদিকে যাব সেদিকেই সরকার গঠন হবে।
পার্বত্যনিউজ: খাগড়াছড়ির মানুষ তাদের বিপদে আপদে আপনাকে কি পাশে পায়?
সোলাইমান শেঠ: গত ত্রিশ বছরে খাগড়াছড়িতে মণ্ডপ, মন্দির, মসজিদ এমন কোনো জায়গা নাই আমি যেখানে সাহায্য করিনি। আমি এখনো করছি, করেও যাব। মানুষ আমাকে পছন্দ করে। আমি নিজেকে বলি আমি একজন সাদা মনের মানুষ। আমি কিছু নেওয়ার জন্য যাচ্ছি না। আমি চাচ্ছি কিছু দেওয়ার জন্য। আমি চাচ্ছি খাগড়াছড়িকে দিয়ে বিশ্ব আরেকবার বাংলাদেশকে চিনুক।
পার্বত্যনিউজ: মহাজোটের নমিনেশন পাওয়ার ব্যাপারে আপনি কতোটা আশাবাদী?
সোলাইমান শেঠ: মহাজোট আমাকে এখনো দেয়নি। কিন্ত আমার পার্টি আমাকে নমিনেশন দিয়েছে। সুতরাং আমি শেষ পর্যন্ত থাকবো। মহাজোট তো আমাকে প্রার্থী দিতে আমার দলকে কোনো বাধা দেয়নি। তাহলে নিশ্চই আমার নমিনেশন মহাজোটেরই একটি অংশ। মহাজোটও আমাকে দিয়েছে, জাতীয় পার্টিও আমাকে দিয়েছে। এটা হয়ত পরিবর্তন হতেও পারে, নাও হতে পারে। না হলেও তো আমি নির্বাচন করব। শুধু আমার চেয়ারম্যান যদি আমাকে বলে তুমি প্রত্যাহার করে নাও। আমি তাহলে তাকে প্রশ্ন করব, কেন? আমার চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছেন, এখানে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকবে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকবে না। আমাকে খাগড়াছড়ির আনাচে কানাচে মানুষ চিনে। আশা করি আমাকে কেউ এ পর্যন্ত খারাপ বলেনি।
পার্বত্যনিউজ: খাগড়াছড়িতে নির্বাচন করার মতো জাতীয় পার্টির ভিত্তি আছে কতোটুকু?
সোলাইমান শেঠ: খাগড়াছড়িতে আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা মোটামুটি। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনের কাজকর্ম পরিচালনা করার মত যথেষ্ট লোকজন আছে।
পার্বত্যনিউজ: পাহাড়ে তো আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন আছে, তাদের সামনে আপনি কতোটুকু টিকতে পারবেন?
সোলাইমান শেঠ: পাহাড়ে যে সকল সশস্ত্র সংগঠন আছে, আমি ওদেরকে সন্ত্রাসী বলব না। ওরাও তো বাঙালি। বাঙালি বলতে ওরা বাংলা ভাষায় কথা বলে। বাংলা কথায় বলে সেই হিসেবে আমি ওদেরকে বাঙালি মনে করি। আমি পাহাড়ি-বাঙালি সবাইকে এক মনে করি। আমি কারো পার্থক্য করি না। বাঙালিদের সাথে তো তাদের কোনো ঝগড়া নেই। তাদের নিজেদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান করতে হলে ওদের সাথে অন্তত বসতে তো হবে। আমি মনে করি এটা আমি সমাধান করতে পারব।
পার্বত্যনিউজ: আপনি নির্বাচিত হলে খাগড়াছড়ির জন্য কোন কাজগুলোকে প্রাধান্য দেবেন?
সোলাইমান শেঠ: আমি নির্বাচনের জয়ী হলে সেখানকার যুবকদের অন্তত এক হাজার মোটর সাইকেল ফ্রি দিব। পাঠাওয়ের মতো। প্রতিদিন তারা তিন শ টাকা করে জমা দিবে। ওদের কাছ থেকে ৩০০ করে টাকা নিয়ে মোটর সাইকেল কেনার টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এরপর আরো দেয়া হবে। প্রতি মাসে মহিলাদের জন্য ১০০ টাকার বিনিময়ে ২০ কেজি চাল দিব। ১০০ করে টাকা নিলে তাদের কাছে চাল পৌঁছে দেওয়ার যে খরচ সেটা যেন উঠে আসে। পাহাড়ি অঞ্চলে বিভিন্ন কাচামাল, বিভিন্ন রকমের অনেক ফলের চাষ হয় । এসব ফল পচে নষ্ট হয়ে যায়, ভালো দাম পায় না। আমি সরকারকে ধরে ওখানে কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করে লিজ দিয়ে দিব এমন একটা পরিকল্পনা করেছি।
পার্বত্যনিউজ: পাহাড়ী সশস্ত্র সংগঠন সম্পর্কে আপনার ধারণা কি?
সোলাইমান শেঠ: ইউপিডিএফ বা অন্যান্য যে সকল পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন আছে তারাও চায় পাহাড়ি কিংবা বাঙালি যেই সাংসদ হিসেবে আসুক, একজন ভালো মানুষ আসুক। ওরাও চায় যে আমাদের জন্য করবে, আমাদের জন্য কিছু করবে সেই এই অঞ্চলে ক্ষমতায় আসুক। শ্রীলঙ্কায় অনেক সন্ত্রাসী দল ছিল, এখন কিন্তু তারা আর নেই। সেই রকম ঘটনা আমাদের এখানেও ঘটবে। এখানেও সব এক হয়ে যাবে। তখন কে জেএসএস বা কে ইউপিডিএফ সবাই এক হয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ, আমাদের পার্শবর্তী দেশ আছে যারা চায় আমরা অশান্তিতে থাকি। তারা অশান্তি সৃষ্টি করছে, তারা তো ষড়যন্ত্র করবেই। ওটা যদি আমরা রুখে দাড়াতে না পারি তা নাহলে তো আমরা রোহিঙ্গা হয়ে যাব। তখন পাহাড়ি কিংবা বাঙালি কেওই টিকতে পারবে না। কিছু অশুভ শক্তি আছে, যারা সবাইকেই এখান থেকে তাড়িয়ে দিবে।
আমি নির্বাচিত হলে ওরা দেখবে আমি একজন বাঙালি হয়েও পাহাড়ি কিংবা বাঙালিদের জন্য কী করতে পারি। আমাকে দিয়ে তাদের উপকার হবে। যেমন, বেকারত্ব দূর করা। কিছু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি এ অঞ্চলে তৈরি করা হবে। পাহাড়ি ছেলে-মেয়েরা চিটাগং কিংবা ঢাকাতে এসে চাকরি করছে। একজন পাহাড়ি ১২ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছে, থেকে, খেয়ে মাত্র দু হাজার টাকা ওদের হাতে থাকছে। যদি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি তৈরি করতে পারে তাহলে হয়ত তখন দু হাজার টাকা খরচ হবে দশ হাজার টাকেই থেকে যাবে।