উখিয়া প্রতিনিধি:
উখিয়া উপজেলায় প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ব্যয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করলেও নির্ধারিত সময়ে কেউ দরপত্র দাখিল করেনি। ফলে কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশ না নেওয়ায় প্রকল্পের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ঠিকাদারদের ভাষ্য রোহিঙ্গাদের প্রভাবে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য দ্বিগুন বেড়ে যাওয়ায় ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন আশঙ্কায় তারা অংশ নেয়নি।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সিডিউল টেন্ডারের ড্রপ ও ওপেনিং এর ধার্য্য তারিখ ছিল। কিন্তু আমরা নির্ধারিত সময়ে কোন টেন্ডার বক্সে পায়নি। আগামী রবিবার উপজেলা পরিষদের কমিটি বসে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদান্ত গ্রহণ করবে।
উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানাযায় ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে এডিবি রাজস্ব তহবিলের আওতায় ১১টি প্রকল্পের অনুকুলে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। যার টেন্ডার নম্বর ০৬/২০১৮। এতে বরাদ্দ রাখা হয় প্রায় ৪৮ লক্ষ টাকা। টেন্ডারের দরপত্র বিক্রির শেষ তারিখ ছিল ৬ জুন। টেন্ডার দাখিলের শেষ তারিখ ধার্য্য ছিল ৭ জুন।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, যথারীতি সরকারি নিয়ম মোতাবেক জাতীয় পত্রিকায় দরপত্রের টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ও প্রকাশ করা হয়। কিন্তু উল্লেখিত সময়ে কোন ঠিকাদার বা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেন্ডার ফরম ক্রয় যেমন করেনি তেমনি শেষ তারিখে কাজ পাওয়ার জন্য দরপত্র দাখিলও করিনি। ফলে ১১টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভবিষ্যত অনিশ্চিত দেখা দিয়েছে।
ঠিকাদারদের সাথে কথা বলে জানায়ায়, উখিয়াসহ জেলায় অন্তত ৫ শতাধিক লাইন্সেস ধারী ঠিকাদার রয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে টেন্ডার আহ্বান করলে ১শ থেকে ১শ ২০ জনের অধিক টেন্ডারে অংশ নেন। এতে করে শুধু মাত্র সিডিউল দরপত্র বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে থাকে সংশ্লিষ্ট অফিস।
জেলা ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি আহ্বায়ক আসাদ উল্লাহ আসাদ ও সদস্য সচিব মোক্তার আহমদ জানান, উখিয়া উপজেলা প্রকৌশল অফিসে এডিবি রাজস্ব খাতের অর্থায়নে দরপত্র আহ্বান করলেও কোন ঠিকাদার তাতে অংশ নেয়নি। তাদের ভাষ্য উখিয়া-টেকনাফে ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় এনজিও সংস্থা কোটি কোটি টাকার কাজ করছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। এতে করে নির্মাণ সামগ্রী মূল্য দ্বিগুন থেকে শুরু করে আকাশ চুম্বী হয়েছে। এমতাবস্থায় সরকারি মূল্যে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।
সাধারণ ঠিকাদারগণ জানান যেখানে ইট ৬/৭ হাজার টাকায় পাওয়া যেত বর্তমানে রোহিঙ্গাদের করণে ৮/৯ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও বালি, সিমেন্টসহ শ্রমিক ও মিস্ত্রীর দামও বেড়ে গেছে। সুতারাং সরকারি সিডিউল মূল্যে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করলেই প্রত্যেক ঠিকাদার আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ভয়ে কোন ঠিকাদার দরপত্র টেন্ডারে অংশ গ্রহণ করেনি।
এ প্রসঙ্গে তথ্য জানার জন্য উখিয়া উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল আলীমের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে কিছু না জানিয়ে তিনি অফিসে এসে কথা বলার জন্য এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন। সচেতন নাগরিক সমাজের অভিমত নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু কিংবা শেষ না হলে এডিবি’র রাজস্ব খাতের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত যাবে।
এ দিকে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী টেন্ডার আহ্বান প্রসঙ্গে বলেন সরকারের নিয়ম অনুসারে ৩০ জুনের মধ্যে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করার বিধান রয়েছে। ঠিকাদার দরপত্র টেন্ডার আহ্বানে অংশ না নেওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে অসুবিধা দেখা দেয়। তার পরেও উপজেলা কমিটি সাধ্য মতে চেষ্টা করব যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায় কিনা।