ইউপিডিএফ নেতার আস্তানা থেকে অপহৃত এক চাকমা নারীকে উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী

নিজস্ব প্রতিনিধি:

রাঙামাটির নানিয়ারচরের লম্বাছড়ি নামক স্থান থেকে ইউপিডিএফ নেতা কর্তৃক অপহরণ করে যৌন কাজে ব্যবহারের জন্য আটকে রাখা এক চাকমা নারীকে উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। উদ্ধারকৃত নারীর নাম-শুবলপুরি চাকমা(৩০)। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে অমরেশ চাকমা নামে এক কার্বারীকে আটক করা হয়েছে। সুবল পুরি চাকমার পিতার নাম মৃত ভুবন চন্দ্র চাকমা। বাড়ি সাপছড়ি মধ্য পাড়া।

সূত্র জানিয়েছেন, ৬ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে নানিয়ারচর সেনা জোন সংলগ্ন ইসলামপুর আর্মি ক্যাম্পে এসে ইউপিডিএফের ট্যাক্স কালেক্টর মদন চাকমা (৩৫) অভিযোগ করে ৪ জুলাই ২০১৭ তারিখে ইউপিডিএফ তাকে অপহরণ করেছে। ইউপিডিএফের সাথে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তাকে অপহরণ করা হয় বলে তিনি কর্তৃপক্ষকে জানান। মদন চাকমার পিতার নাম মৃত মৈত্র চাকমা, বাড়ি লম্বাছড়া নানিয়ারচর।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, এক সময় ইউপিডিএফের আস্তানা থেকে কৌশলে মদন চাকমা পলায়ন করতে সক্ষম হলে সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে মদন চাকমার নিজ বাড়ি থেকে তার স্ত্রী শুবল পুরি চাকমাকে (৩০) অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং বাকছড়ির আওতাভুক্ত লম্বাছড়ি এলাকার প্রাক্তন কারবারি, অমরেশ চাকমার(৫০) বাড়িতে আটক রেখেছে। অমরেশ চাকমার পিতার নাম মৃত রাজমোহন চাকমা।

উপরোক্ত তথ্যর ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে নানিয়ারচর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি দল লম্বাছড়ি এলাকায় একটি ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে। ফলশ্রুতিতে অপহৃত মহিলাকে উদ্ধার করা হয় এবং অমরেশ চাকমাকে আটক করে ৭ জুলাই শুক্রবার সকালে পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়।

নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ উক্ত মহিলা এবং কারবারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে যে, শুবলপুরি চকমা আসলে মদন চাকমার স্ত্রী নয়। মুলত মদন চাকমা নিজে তাকে মানিকছড়ি থেকে অপহরণ করে লম্বাছড়ি নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে অমরেশ চাকমা জোরপুর্বক উক্ত মহিলাকে আটক করে রাখে।

স্থানীয়রা জানায়, মদন চাকমা ও অমরেশ চাকমা মিলে উক্ত নারীকে মানিকছড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে নানিয়ারচরের লম্বাছড়িতে নিয়ে যায়। তারা উভয়েই উক্ত নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে চেয়েছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। তবে তাদের কার সাথে বা নাকি উভয়ের সাথে উক্ত নারীর যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, আটককারীদের উদ্দেশ্য ছিলো কিছুদিন রেখে উক্ত নারীকে অন্যত্র বিক্রি করে দিবে। কিন্তু তার আগেই উক্ত নারীকে ভোগ করা নিয়ে উভয়ের মধ্যে তুমুল ঝগড়া সৃষ্টি হলে স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসী বিষয়টি জেনে যায়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মদন চাকমা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে সেনাবাহিনীর শরণাপন্ন হয়।

এসময় মিথ্যা তথ্য দিয়ে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে অমরেশ চাকমাকে ঘায়েল করার চেষ্টা চালায়। সেনাবাহিনীর একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে অমরেশ চাকমাকে আটক করে এবং উক্ত পাহাড়ি নারীকে উদ্ধার করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করলে পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে আসল তথ্য বেরিয়ে আসে।

সুবল পুরি চাকমা বাদী হয়ে এ ব্যাপারে গত ৭ জুলাই নানিয়ারচর থানায় মদন চাকমা ও অমরেশ চাকমাকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-২।

মামলার এজাহারে তিনি বলেছেন, ইতোপূর্বে তার তিনটি বিবাহ হয়েছে। তৃতীয় স্বামী রিতেন চাকমার বাড়ি নানিয়ারচরের ১৯ মাইল এলাকায়। ১ নং আসামী মদন চাকমা বাদীকে বিভিন্ন সময় মোবাইল ফোনে উত্তক্ত করতো। একসময় তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে বাদী রাজী না হওয়ায় ১ নং আসামী গত ৩ এপ্রিল তার স্বামীর বাড়ি থেকে ৩/৪ জন সন্ত্রাসীসহ অপহরণ করে বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখে।

এরপর ২৯ জুন ২ নং আসামীর বাড়িতে নিয়ে লুকিয়ে রাখে। বিষয়টি একসময় লোক জানাজানি হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে মন্তব্য নেয়ার জন্য নানিয়ারচরে ইউপিডিএফের দায়িত্বশীল কোনো নেতার সাথে টেলিফোন যোগাযোগ করেও সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন