আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গারা হত্যাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

মিয়ানমারে নির্যাতনের স্বীকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয়, খাবার, চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আর এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকে পুলিশসহ স্থানীয় লোকজনের উপর হামলা, হত্যা, ডাকাতি, চুরি, ইয়াবা ব্যবসাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে। আশ্রয় দেয়া রোহিঙ্গাদের এ অপকর্ম খুবই নেক্কার জনক। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বললেন, সচেতন মহল।

এদিকে প্রশাসনও কঠোর অবস্থায় রয়েছে তাদের নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি অপরাধ দমনে। ডাকাতি প্রস্তুতি এবং অস্ত্রসহ নানা অপরাধে গত এক মাসে ১৫ জনেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কুতুপালং আশ্রয় শিবিরে ৫টি পুলিশ ক্যাম্প স্থান করা হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গতকাল রবিবার দিনাগত রাতে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প সংলগ্ন থেকে দেশীয় তৈরি অস্ত্রসহ ৫ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে র‌্যাব। আটককৃতরা হলেন মিয়ানমারের বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক (২০), মো. আনোয়ার (২০) মো. ফারুক (২২), ইমরান (২২) ও খায়ের মোহাম্মদ (২০)। এসময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় তৈরি ৫টি রামদা উদ্ধার করা হয়।

কক্সবাজার র‌্যাব ৭ এর কোম্পানী কমান্ডার মেজর মো. রুহুল আমিন জানান, তারা সকলে কুতুপালং এবং পার্শ্ববর্তী বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা। বিভিন্ন সময়ে তারা ওই এলাকায় ডাকাতি করে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের লোকজনকে জিম্মি করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

গত শুক্রবার(২৮ অক্টোবার) রামু উপজেলার খুনিয়াপালংয়ে জিয়াবুল নামে এক রোহিঙ্গা যুবকের দায়ের কোপে আব্দুল জব্বার (৩৫) নামে এক বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে খুনিয়াপালং ইউনিয়নের এলাকায় এঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুল জব্বার ঐ এলাকার বশীর ফকিরের ছেলে। পরে তাকে পুলিশ আটক করে।

একই তারিখ শুক্রবার রাতে টেকনাফের হ্নীলার রঙ্গিখালীর এক বাঙ্গালীর বাড়ি থেকে ৬টি মোবাইল চুরি করেছে জাবেদ (২৫) নামে এক যুবক। পরে তাকে চুরি হওয়া মোবাইলসহ পুলিশ আটক করে।

একই দিনে কক্সবাজারের বালুখালী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের হামলায় ৪জন নলকূপ শ্রমিক আহত হয়েছে। এ ঘটনায় অস্ত্রসহ ২জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত রোহিঙ্গারা হল, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে আসা নুরুল বশর (৩০) ও ইলিয়াস (২৮)। এসময় তাদের কাছ থেকে গুলিসহ ২টি দেশীয় তৈরি এলজি উদ্ধার করা হয়।

এর আগে গত ২১ অক্টোবর টেকনাফের নয়াপাড়ার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকে কবির আহম্মদ নামে এক এসআইকে পিটিয়ে আহত করেছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে দোকান বসানোর সময় বাধা দিলে তারা হামলা চালায়। এ ঘটনায় হামলাকারী রোহিঙ্গা নারী ও তার স্বামীসহ ৩জনকে আটক করা হয়।

এ ব্যাপারে এডভোকেট মাহফুজুর রহমান জানান, রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হয়েই এদেশে এসেছে। এছাড়া তারা নির্যাতনের মধ্য দিয়েই বেড়ে উঠেছে। তাই অনেক রোহিঙ্গা সুন্দর জীবন সর্ম্পকে অবগত নন। ফলে তারা এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে। তাই আইন প্রয়োগের পাশাপাশি তাদেরকে এসব বিষয়ে বুঝানো উচিত।

এ ব্যাপারে কমিউনিটি পুলিশের জেলা সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা জানান, তাদেরকে সংগঠিত হতে দেওয়া যাবেনা। অতিথি অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে তারা সংগঠিত হয়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। তাই তাদের বিচ্ছিন্নভাবে রাখতে হবে এবং প্রশাসনের নজরদারিতে রাখতে হবে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, নতুন-পুরাতন সকল রোহিঙ্গার ক্যাম্পে পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এছাড়া রোহিঙ্গাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর তাদের নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি তাদের মাধ্যমে যেন কোন অঘটন না ঘটে সেদিকে জোর নজর দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কোন রোহিঙ্গা কোন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করলে সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন