আলীকদমে চৈক্ষ্যং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনে অনিশ্চয়তা : আদালতের আদেশ আমলে নেননি প্রধান শিক্ষক

মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম :

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে দু’পক্ষের রশি টানাটানিতে অনিশ্চয়তায় পড়েছে ম্যানেজিং কমিটি গঠন প্রক্রিয়া। এ নিয়ে ক্ষুদ্ধ একটি পক্ষের মামলার প্রেক্ষিতে গত বছর বান্দরবানের বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ আদালত ‘বিদ্যালয়ের স্বার্থে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নির্বাচন থামিয়ে রাখা সমীচীন হবেনা’ মর্মে আদেশ দেন। একই আদেশে মামলার ‘বাদীকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ক্যাটাগরি থেকে বাদ দিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠনকল্পে নির্বাচন অনুষ্ঠান অসঙ্গত ও ন্যায়বিচার পরিপন্থি’ বলে উল্লেখ করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে ‘কমিটির অনুমোদন’ ছাড়াই জেলা জজ আদালতে আপীল করে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা করছেন বলে করেছেন অভিযোগ মামলার বাদী ও অভিভাবকরা।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম আদালতে পেশ করা আর্জিতে বলেন, ১৯৮৬ সালে তাঁর কেনা ৫০ শতক জমিতে তদানিন্তন চৈক্ষ্যং নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিনি স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই বছরের জানুয়ারীতে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনটি ম্যানেজিং কমিটির ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ছিল। ২০০২ সালের ২৪ জুন হতে পরবর্তী ৩বছর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন তহবিল তসরূপসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়লে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেছিলেন। এরপর প্রধান শিক্ষক অযৌক্তিকভাবে ২০১১ সালের ৩০ জুলাই প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় প্রতিষ্ঠাতা ক্যাটাগরি থেকে তাঁকে বাদ দেন। বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ আদালতের ১৪ জানুয়ারী ২০১৩ ইং তারিখের আদেশ নম্বর : ১৩ এ উল্লেখ করা হয়, ‘একটি পদের জন্য বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন আটকিয়ে রাখা যেমন সমীচীন হবেনা, তেমনিভাবে কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সিদ্ধান্ত ব্যতীত বাদীকে হঠাৎ করে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন গ্রহণীয় নয়’। বিজ্ঞ জেলা যুগ্ম জজের এ আদেশের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গত ১৫ মে ২০১৩ ইং তারিখে মিস আপীল ০৩/১৩ দায়ের করেন।

এ আপীলের পর ম্যানেজিং কমিটি গঠন প্রক্রিয়া অনিশ্চিয়তার মুখে পড়ে। অভিযোগ উঠেছে, এ মীস আপীলে বিদ্যালয়ের কোন স্বার্থ জড়িত না থাকলেও প্রধান শিক্ষক উপযাচক হয়ে এ কাজটি করেন। এতে স্থানীয় অভিভাবক কিংবা বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির লিখিত কোন অনুমোদন নেই। চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেক আশা-আকাঙ্খা নিয়ে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান শিক্ষকের মর্জির কাছে বিদ্যালয়ের পড়ালেখার পরিবেশ এবং উন্নয়ন সম্ভাবনা ধুলিস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে। তাঁর মতে, বিজ্ঞ জেলা যুগ্ম জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের করা আপীলে মূলতঃ বিদ্যালয়ের কোন স্বার্থ নেই। বরং বিদ্যালয়ের টাকা খরচ করে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা ব্যক্তির সাথে শত্রুতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও অভিভাবক অলিউর রহমান বলেন, নিয়মিত কমিটি গঠিত হলে বিদ্যালয়ে পড়ালেখার পরিবেশ ভাল হতো। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নানা অজুহাত সৃষ্টি করে ম্যানেজিং কমিটি গঠনে বিলম্বিত করছেন। এতে বিদ্যালয়ের পড়ালেখার পরিবশ ও উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। একইভাবে প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম ও বিদ্যালয় স্বার্থী পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিদ্যালয়ের অভিভাবক হাফিজুর রহমান, ডাঃ পুজন দাশ, মংয়েনু মার্মা সওঃ, আব্দুল খালেক, সৈয়দ হোসেনসহ একাধিক অভিভাবক ও স্থানীয় সচেতন লোকজন। সম্প্রতি সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানকালে তারা প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম তুলে ধরে এ ক্ষোভের কথা জানান। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, তিনি স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন কমিটিতে শিক্ষানুরাগী সদস্য, এডহক কমিটির সভাপতি ও শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কথা বলায় তাকে ২০১১ সালে প্রণয়নকৃত ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, এডহক কমিটির অনুমোদন নিয়েই জেলা জজ আদালতে মীস আপীলটি করা হয়েছে। এডহক কমিটির মেয়াদ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফাইল ঘেঁটে সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি দিবেন বলে জানালেও পরে আর দেননি। বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির আহ্বায়ক ও ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, কমিটির বৈঠকে বিজ্ঞ জেলা যুগ্ম জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে মীস আপীল করার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত তার জানামতে কমিটির নিয়মিত বৈঠকে হয়নি। প্রধান শিক্ষকের করা আপীলের বিষয়ে তিনি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন।

জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, আদালতে দুইটি পক্ষের মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় ম্যানেজিং কমিটি গঠন থেমে আছে। এ বিষয়টি শীঘ্রই সুরাহা না হলে বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আলীকদম
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন