আলীকদমে ইটভাটায় পুড়ছে বনের কাঠ

আলীকদম

আলীকদম প্রতিনিধি :

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর সকল বিধিবিধান লঙ্ঘন করে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার পূর্বপালং পাড়ায় এফবিএম নামের ইটভাটায় হাজার হাজার মন লাকড়ির মজুদ করা হচ্ছে। সেই সাথে ড্রামসিট চিমনী দিয়ে মাসাধিককাল থেকে পোড়ানো হচ্ছে ইট। আবাসিক এলাকায় স্থাপিত এ ইটভাটায় ইউনিয়ন সড়ক ব্যবহার করে জ্বালানী নেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত গাড়ি চলাচলের কারণে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ধুলায় একাকার হয়ে লোকজনের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও জনসাধারণ।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ এর ৪নং ধারায় উল্লেখ আছে ‘ইটভাটা যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার জেলা প্রশাসকের নিকট হইতে লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে, কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করিতে পারিবেন না’। ৫নং ধারায় বলা আছে, ‘কৃষিজমি বা পাহাড় বা টিলা হইতে মাটি কাটিয়া বা সংগ্রহ করিয়া ইটের কাঁচামাল হিসেবে উহা ব্যবহার করিতে পরিবেন না’। এ ধারার ৪ উপধারায় উল্লেখ আছে, ‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করিয়া কোন ব্যক্তি ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন করিতে পারিবেন না’।

উপজেলা সদরের অনতিদুরে স্থাপিত এফবিএফ ইটভাটায় উল্লেখিত আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কিভাবে বছরের পর বছর ধরে ইটভাটা পরিচালনা করছে তা নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী।

স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার ছাবের আহামদ বলেন, এফবিএম ইটভাটায় চলাচলকারী ভারি যানবাহনের কারণে পূর্ব পালং পাড়ার রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে হচ্ছে । এ নিয়ে চলতি বছরের শুরুর দিকে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে। কিন্তু প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় গতমাস থেকে আবারো আবাসিক এলাকায় ইটভাটার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী মনিন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, এফবিএম ইটভাটায় কয়েকশ’ গজের মধ্যেই রয়েছে সরকারী প্রাইমারী স্কুল, ইউপি সড়ক ও আবাসিক এলাকা।

এ আইনের ৬ ধারায় উল্লেখ আছে, ‘কোন ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানী হিসেবে কোন জ্বালানী কাঠ ব্যবহার করিতে পারিবেন না’। এ ধারা অমান্য করলে আইনের ১৬ ধারা বলা আছে, ‘কোন ব্যক্তি ধারা ৬ এর বিধান লঙ্ঘন করিয়া ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানী কাঠ ব্যবহার করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন’।

গত ২২ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোতাকাব্বীর আহমেদ এ ব্রিকফিল্ডে আইন লঙ্ঘন করে ইট পোড়ানোর দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ১০ হাজার মন লাকড়ি জব্দ করেন। জরিমানা ও লাকড়ি জব্দ করা হলেও আইন অনুযায়ী ইটভাটার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা কিংবা কাউকে আটক বা শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। সে কারণে পুনরায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখেিয় এ ইটভাটায় পরিবেশ বিনাশী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আইনে উল্লেখ আছে, পার্বত্য জেলায় ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে, পার্বত্য জেলার পরিবেশ উন্নয়ন কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোন স্থানে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ১ কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে এবং ইউনিয়ন সড়ক হতে আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবেনা।

এ আইনের ৮ ধরার ৩ (খ) উপধারায় উল্লেখ আছে, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অনুমতি ব্যতীত সরকারী বনাঞ্চলের সীমারেখা হতে ২ কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এটি আইনে উল্লেখ থাকলেও লামা বন বিভাগের অধীন তৈন রেঞ্জের পানবাজার বিটের আধা কিলোমিটারের মধ্যেই স্থাপিত হয়েছে এ ইটভাটা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসক ইটভাটা স্থাপনের অনুমতি দেন। আইনের ব্যত্যয় ঘটলে আইনী পদক্ষেপ নিবেন তিনি। জ্বালানী কাঠ ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

এরপর তৈন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আইনে ক্ষমতা দেওয়া আছে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ ছাড়া এ সকল ক্ষেত্রে বন বিভাগের অভিযান পরিচালানা করা কঠিন। তবে তিনি বলেন, শীঘ্রই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে পরামর্শ করে এ ইটভাটায় জ্বালানী কাঠ ব্যবহারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ইটভাটার মালিকরা কয়লা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। জ্বালানী কাঠ পোড়ানোর বিষয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন