আখতার চেয়ারম্যানের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ায় ষড়যন্ত্র দেখছেন রোহিঙ্গারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:

বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখায় আশ্রয় শিবির থেকে রোহিঙ্গা চেয়ারম্যান আখতার আলম সপরিবারে রাখাইনে ফেরত যাওয়া মিয়ানমারের নতুন ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন রোহিঙ্গা নেতারা। তারা মনে করেন, আখতার নিজেও রোহিঙ্গা নির্যাতন ষড়যন্ত্রে জড়িত। এছাড়া সে দীর্ঘ দিন মিয়ানমারের গুপ্ত চর হিসেবে কাজ করেছে।

সংলিষ্টরা মনে করছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতেই পাঁচ রোহিঙ্গা নাগরিককে সসম্মানে ফেরত নেয়ার নাটক করছে মিয়ানমার।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আন্দোলনের নেতা মাহামুদুল হক চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিচ্ছে এটি খুবই ভালো খবর। তারা চান রোহিঙ্গারা দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যাক।  তবে হঠাৎ করেই কোনো বাধা ছাড়াই রাতের আঁধারে সেনা বেষ্টিত কাঁটাতার পার হয়ে আখতার আলম চেয়ারম্যান মিয়ানমারে ঢুকে পড়া এবং মুহূর্তেই তার পরিবারের ফেরতের খবর ফলাও করে মিয়ানমার গনমাধ্যমে প্রচার করা উদ্দেশ্যমূলক ও ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন তিনি। মিয়ানমারের গুপ্তচর ছিলেন আখতার।

মাহামুদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত  করতে সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়েই মিয়ানমার এটি করিয়েছে। তিনি আশঙ্কা করছেন, হয়তো মিয়ানমার আখতার ও তার পরিবারকে দিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার নিষিদ্ধ সংগঠন আরসা’র অস্তিত্ব আছে বলে মিডিয়ায় প্রকাশ করাতে পারে। শুরু থেকেই মিয়ানমার একথা বলে আসছিল।

তিনি আরও বলেন, যেই এনভিসি কার্ড নিয়ে মিয়ানমার সরকার এত কিছু করল অথচ আখতার আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা মিয়ানমারে গিয়েই সেই এনভিসি কার্ড পেয়ে গেলেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তুমরু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, আখতার চেয়ারম্যান মিয়ানমারের গুপ্তচর হিসেবেই কাজ করেছেন। মিয়ানমারের দালালি করার জন্যই সে আশ্রয় ক্যাম্প থেকে রাতের আঁধারে পালিয়ে গেছেন।

রোহিঙ্গা ইয়ুথ সোসাইটির নেতা সাইফুল আরকারি বলেন, আখতার আলম চেয়ারম্যান হলেন মিয়ানমারের গুপ্তচর। তিনি থাব্যে হিসেবেই পরিচিত। টাকার বিনিময়ে তিনি আগেও রোহিঙ্গাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন। ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেলে রেখে তার একা মিয়ানমারে চলে যাওয়াই বুঝা যায় তিনি একজন স্বার্থপর ব্যক্তি।

আরেক রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার রহিম বলেন, পুরো জাতি, নিজের আত্মীয়-স্বজনকে ফেলে যাওয়াতেই বুঝা যায় এতে আখতার চেয়ারম্যানের স্বার্থ রয়েছে। মিয়ানমার তাকে ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করবে সেটি সময়ের ব্যাপার মাত্র।

মিয়ানমার সেনা বাহিনী ও বৌদ্ধ মিলিশিয়াদের চালানো গণহত্যার মুখে সীমান্তের শূন্য রেখায় আশ্রয় নেয়া একটি রোহিঙ্গা পরিবারের পাঁচজন শনিবার রাতে মিয়ানমারে ফেরত যায়। এটিই গত ২৫ আগস্টের পর থেকে প্রথম রোহিঙ্গা ফেরত যাওয়ার ঘটনা।

শনিবার তুমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখা দিয়ে এই রোহিঙ্গা পরিবার স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফেরত যায়। এই ঘটনাকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে দাবি করছে মিয়ানমার।

সীমান্তে পা রাখার পর দেশটির কর্মকর্তারা এই পাঁচ রোহিঙ্গাকে স্বাগত জানিয়ে নিয়ে যান। তবে শূন্য রেখা থেকে ফিরিয়ে নেয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কিংবা বিজিবিকে মিয়ানমার কিছুই জানায়নি।

সংলিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আখতার কামাল নামে এক রোহিঙ্গা নেতা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গোপনে দেশটিতে গেছেন। তিনি মংডু জেলার বলিবাজার এলাকার চেয়ারম্যান ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন