Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

অশান্ত পাহাড়ে শান্তির আশায় ‘র‌্যাব’ চায় পার্বত্যবাসী

পৃথক ব্যাটালিয়ন গঠনের দাবি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস

%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a7%9c%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%ac

মিয়া হোসেন, পার্বত্যাঞ্চল থেকে ফিরে:

রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এই তিন জেলায় কথিত আঞ্চলিক সংগঠনের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে চরম অশান্তি ও অস্বস্থির মধ্যে রয়েছে সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা। শান্তি চুক্তি হয়েছে ১৯ বছর। অথচ অশান্তির আগুনে জ্বলছে পার্বত্য তিন জেলার মানুষ। পাহাড়ে যারা বসবাস করছেন তাদের অধিকাংশের মনে শান্তি নেই। আতঙ্ক উৎকন্ঠায় কাটে তাদের দিন-রজনী।

পাহাড়ে যেন এখনো বিভীষিকাময় পরিস্থিতি বিরাজমান। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের তৎপরতায় অপরাধ কিছুটা কমে আসলেও সেখানকার অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি রয়েই গেছে। সেই সাথে চাঁদাবাজির ভয়াল থাবাও রয়েছে। সারাদেশে বিশেষ বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) সন্ত্রাস দমনে প্রশংসিত হওয়ায় পাহাড়ের অধিবাসীরা সেখানকার সন্ত্রাস দমনে র‌্যাব মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে।

এ জন্য সভা সমাবেশ ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচীও পালন করেছে সেখানকার সংগঠনগুলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এসব দাবি আমলে নিয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রামেও র‌্যাবের ডিভিশন স্থাপন করার আশ্বাস দিয়েছেন।

সরেজমিনে ঘুরে ভুক্তভোগী সাধারণ পাহাড়ী ও বাঙালীদের কাছ থেকে জানা গেছে, তিন পাবর্ত্য জেলায় হত্যা, অপহরণ ও চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধ প্রায় নিয়মিতই ঘটে যাচ্ছে। আর চাঁদাবাজি সেখানে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। পাহাড়ের কথিত আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির অভিযোগ দিয়ে বাসায় অক্ষত থাকা একেবারেই অসম্ভব।

তাদের শঙ্কা দুর্গম পাহাড়ে প্রশাসনের অনুপস্থিতিতে যে কোন ধরনের ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হতে পারেন তারা। আর পর্যাপ্ত লোকবল ও আধুনিক অস্ত্রের অভাবে পুলিশ প্রশাসনও দ্রুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে পারে না। তাই এক্ষেত্রে একমাত্র সেনাবাহিনীকেই উপযুক্ত বলে মনে করেন তারা। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সারাদেশের ন্যায় তিন পার্বত্য জেলায়ও র‌্যাব মোতায়েন করা হলে ৮০ শতাংশ সন্ত্রাস ও অবৈধ অস্ত্র কমে যাবে বলে তারা মনে করেন। সম্প্রতি পাহাড়ে র‌্যাব মোতায়েন সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী।

পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের ব্যাপক চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করেছে খাগড়াছড়ি পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা। সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম শফি বলেন, পাবর্ত্য এলাকায় সেনাবাহিনীর পাশপাশি র‌্যাব মোতায়েন করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। পাবর্ত্য এলাকায় র‌্যাব মোতায়েন করা হলে ৮০ শতাংশ সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল মজিদ বলেন, পাবর্ত্য এলাকা দুর্গম এবং সন্ত্রাসীরা সস্বস্ত্র অবস্থায় থাকে। মাঝে মাঝে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয় এবং ধরা পরে। ইউপিডিএফ এর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ধরেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই শিক্ষার্থী ও ইউপিডিএফের শীর্ষ নেতা মিঠুন চাকমার বিরুদ্ধে অস্ত্র, চাঁদাবাজী, অপহরণ ও হত্যার ১০-১২টি মামলার ওয়ারেন্ট ও বিপুল চাকমার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলার ওয়ারেন্ট ছিল তাদেরকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত থাকে।

এই অস্ত্র কোথা থেকে আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে তাদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র আসছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যেসব অস্ত্র নাই এমন অস্ত্রও তাদের কাছে আছে।

রাঙামাটি জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) সাঈদ তরিকুল হাসান বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে এবং সন্ত্রাসীদের ধরতে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে দুর্গম এলাকা হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করলে এই সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন।

পার্বত্য জেলার সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, প্রত্যেকটি সেক্টর থেকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদেরকে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদাবাজী এখানে ওপেন সিক্রেট। তাদের ভয়ে কেউ মামলাও করছে না। কথা বললেই হুমকী দেয়া হচ্ছে।

তিনি নিজেও হুমকী পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, পার্বত্য অঞ্চল থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না করলে জনজীবন স্বাভাবিক হবে না এবং জনগণ তার ভোটাধিকারও পাবে না। এমন কোনো ভারী অস্ত্র নেই যা তাদের কাছে নাই।

চিরুনী অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধাদের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যাদের কাছে অস্ত্র পাওয়া যাবে তাকেই গ্রেফতার করতে হবে। এসব সন্ত্রাসী একমাত্র সেনাবাহিনীকে ভয় পায়। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাব মোতায়েন করা হলে দ্রুত অস্ত্র উদ্ধার হবে এবং সন্ত্রাস দমন হবে বলে তিনি মনে করেন।

সাবেক পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, পাহাড়ে মূল সমস্যা অবৈধ অস্ত্র। এসব অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। এসব অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনকে আরো সক্রিয় হতে হবে। সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। আর এখানে নির্বাচনের সময় র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। অস্ত্র উদ্ধারে ও সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে পাহাড়ে র‌্যাব মোতায়েন করা যেতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

গত ৮ ডিসেম্বর বিকেলে পার্বত্য খাগড়াছড়ির রামগড় থানা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দেশে র‌্যাবের ১৪টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রামেও র‌্যাবের স্বতন্ত্র ব্যাটালিয়ন স্থাপন করা হবে।

তিনি বলেন, সরকার পার্বত্য এলাকার শান্তির ধারা অব্যাহত রাখতে সর্বদা আন্তরিক। পাহাড়ের মানুষের শান্তি ও উন্নয়নের জন্যই ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি করা হয়েছে। এ শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এখানকার উন্নয়নে সরকার সব কিছু করবে। আর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা। এজন্য সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন